মঙ্গলবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

পাতাল পথে স্বস্তির পারাপার

আন্ডারপাস চালুর ফলে বিমানবন্দর সড়কসংলগ্ন বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ সর্ব সাধারণের জন্য সড়ক পারাপার আরও নিরাপদ হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা

জয়শ্রী ভাদুড়ী

পাতাল পথে স্বস্তির পারাপার

রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজসংলগ্ন দেশের সবচেয়ে বড় ও আধুনিক আন্ডারপাস পথচারী পারাপারে স্বাচ্ছন্দ্য এনে দিয়েছে -জয়ীতা রায়

পরিচ্ছন্ন, সাজানো আন্ডারপাস। শিশু, অসুস্থ, বয়স্ক মানুষের চলাচলের জন্য রয়েছে লিফটের ব্যবস্থা। সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা কষ্ট হলে এক্সেলেটর ব্যবহার করছেন যাত্রীরা। দিনে সূর্যের আলোয় আন্ডারপাস থাকছে আলোকিত, রাতে কৃত্তিম আলোর পাশাপাশি চাঁদের আলো আসারও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে ‘সুরসপ্তক’ এ আন্ডারপাস উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।    

বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় তিন বছর আগে যেখানে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল, সেই শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাশে পথচারীদের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে এ আন্ডারপাস।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার ব্রিগেড এটি নির্মাণ করেছে। ২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের দাবিগুলোর একটি ছিল এই আন্ডারপাস তৈরি করা। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রায় ৫৭ কোটি টাকা খরচ হয়েছে।

জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের সামনের সড়কে বাসচাপায় আবদুল করিম রাজীব (১৭) ও দিয়া খানম মীম (১৬) এই দুই শিক্ষার্থীর প্রাণহানি ঘটেছিল। সেদিন থেকে আট দিন রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্রছাত্রীরা আন্দোলন করে। তাদের দাবিগুলোর মধ্যে এই আন্ডারপাস নির্মাণের দাবিটি ছিল। এই দাবি এবার পূরণ হয়েছে। দেশের সবচেয়ে বড় ও আধুনিক আন্ডারপাস এটি। ২০১৮ সালের ১২ আগস্ট এই আন্ডারপাস তৈরির জন্য ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছিল।

আন্ডারপাস ঘুরে দেখা গেছে, ৪২ মিটার দীর্ঘ চারটি সুড়ঙ্গ দিয়েই আন্ডারপাসে চলাচল করা যাবে। এটির উচ্চতা ১৫ মিটার। এক সারিতে ১০ জন পথচারী হেঁটে চলাচল করতে পারবেন। এই আন্ডারপাসের দুই দিকে দুটি করে চারটি প্রবেশ ও বহির্গমন পথ আছে। আন্ডারপাসের দেয়ালে টাঙানো রয়েছে দারুণ দারুণ ছবি। ছবিতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ, সবুজ-শ্যামল রূপসী বাংলার চিত্র। সুন্দর এই আন্ডারপাস পার হওয়ার সময় অনেকেই ছবি তুলছেন, সেলফি তুলছেন।

আন্ডারপাসটি উদ্বোধন করার পর তা সর্ব সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। এই আন্ডারপাস চালুর ফলে বিমানবন্দর সড়কসংলগ্ন বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ সর্ব সাধারণের জন্য সড়ক পারাপার আরও নিরাপদ হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার হোসেন বলেন, ‘ক্লাস শেষে প্রতিদিন এই ব্যস্ত রাস্তা পার হয়ে বাড়ি ফেরা ভীষণ ঝুঁকি ছিল। আমরা ১৫-২০ জন এক সঙ্গে হয়ে রাস্তা পার হতাম। এই আন্ডারপাস চালু হওয়ায় আমরা নিরাপদে রাস্তা পার হতে পারব।’ কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে অসুস্থ মাকে নিয়ে যাচ্ছিলেন সাইদা রহমান। তিনি বলেন, অসুস্থ মাকে নিয়ে ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে পার হতে খুব অসুবিধা হয়। হুইলচেয়ার নিয়ে যাতায়াতের কোনো ব্যবস্থা ঢাকার রাস্তা কিংবা ফুটওভারব্রিজে রাখা হয়নি। এই আন্ডারপাস ব্যতিক্রম। এখানে লিফট থাকায় রোগীকে হুইলচেয়ারে বসিয়ে খুব সহজেই রাস্তা পার হওয়া সম্ভব।

সর্বশেষ খবর