মঙ্গলবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

প্রবাসীকর্মীদের জন্য ২০০ টাকায় রাত্রিবাস!

এই সেন্টারে প্রবাসীকর্মীরা দিনে ২০০ টাকা ভাড়ায় বিদেশে যাওয়ার সময় অথবা বিদেশ থেকে দেশে ফেরার সময় সাময়িকভাবে থাকতে পারবেন

হাসান ইমন

প্রবাসীকর্মীদের জন্য ২০০ টাকায় রাত্রিবাস!

ছবি : জয়ীতা রায়

বিদেশগামী ও বিদেশ-ফেরত কর্মীদের জন্য মাত্র ২০০ টাকায় রাতযাপনের সুযোগ চালু করেছেন বঙ্গবন্ধু ওয়েজ আর্নার্স সেন্টার। এখন থেকে ফ্লাইট বিলম্ব বা অন্য কোনো কারণে কর্মীদের বিমানবন্দরের আশপাশে অবস্থানের প্রয়োজন হলে এ সেন্টারে থাকতে পারবেন। বাড়তি ভোগান্তি নিয়ে খুঁজতে হবে না আবাসিক হোটেল। এতে একদিকে যেমন খরচ বাঁচবে, তেমনি ভোগান্তি লাঘব হবে। নামমাত্র মূল্যে সর্বোচ্চ দুই দিনের থাকার ব্যবস্থা হবে এই সেন্টারে। আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত সেন্টারটি মূলত দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে বিদেশগামী ও প্রত্যাগত কর্মীদের হোস্টেল বা ডরমেটরি। এ ছাড়া অসুস্থকর্মীদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসা সেবাও দেওয়া হবে এখানে। বিমানবন্দরের কাছেই খিলক্ষেতের লন্ডনীপাড়া বরুয়াতে মনোরম পরিবেশে গড়ে তোলা হয়েছে সেন্টারটি।

ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম-শতবার্ষিকী উপলক্ষে বিদেশগামী ও প্রবাসফেরত কর্মীদের সাময়িক আবাসন সুবিধাসহ বিভিন্ন সেবা দিতে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছেই ১৪০ কাঠা জমির ওপর ‘বঙ্গবন্ধু ওয়েজ আর্নার্স সেন্টার’ স্থাপিত হয়েছে। গত ১৮ মার্চ এই সেন্টারের উদ্বোধন করেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ। এই সেন্টারে প্রবাসীকর্মীরা দিনে ২০০ টাকা ভাড়ায় বিদেশে যাওয়ার সময় অথবা বিদেশ থেকে দেশে ফেরার সময় সাময়িকভাবে থাকতে পারবেন। দুপুর ও রাতের খাবার ১২০ টাকা এবং সকালের নাশতা বাবদ ৭০ টাকা নেওয়া হয়। এখানে ৪০ জন পুরুষ ও ১০ জন নারীর থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, নিরিবিলি সবুজ পরিবেশে প্রাচীর ঘেরা বঙ্গবন্ধু ওয়েজ আর্নার্স সেন্টার। দেখতে অনেকটা রিসোর্টের মতো। সেখানে একটি দ্বিতল ভবনের নিচতলায় প্রবাসীকর্মীদের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। পরিপাটি প্রতি কক্ষে তিন-চারটি করে শয্যা। সেন্টারে বিনোদনের ব্যবস্থাও রয়েছে। চাইলে যে কেউ টেলিভিশন দেখে সময় কাটাতে পারেন। আছে ক্যারম খেলার ব্যবস্থাও। ব্যাডমিন্টন, ভলিবল, ক্রিকেট ও ফুটবল খেলার ব্যবস্থাও রয়েছে। সেন্টারে সামনে বসে গল্প করার জন্য রয়েছে সবুজ মাঠ। যার চারপাশে রয়েছে দেশি-বিদেশি প্রজাতির অসংখ্য ফল ও ফুলগাছ। এমন পরিবেশ যে কারও প্রশান্তি দেবে। ক্যান্টিন বন্ধ থাকলেও জানুয়ারি থেকে চালু হবে বলে জানালেন সংশ্লিষ্টরা। তারা জানান, সেন্টারটিতে মোট সাতজন স্টাফ রয়েছেন। এর মধ্যে একটি গাড়ি আনা-নেওয়ার জন্য সারাক্ষণ অবস্থান করে। এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক জাফর আহমদ বলেন, এখন আগের চেয়ে প্রবাসীকর্মীদের রাতযাপনের সংখ্যা বেড়েছে। প্রতিদিন ১৫-২০ জন লোক রাতযাপন করছেন। তবে মাঝে-মধ্যে ৬০-৭০ জনও হয়ে যায়। এই সেন্টারে গত আট মাসে প্রায় ৫০০ জন প্রবাসী অবস্থান করেছেন। কয়েক সপ্তাহ ধরে এই সেন্টারে থাকার জন্য দেশ-বিদেশের অনেক প্রবাসী নির্ধারিত ফোন নম্বরে কল দিচ্ছেন। সেন্টারের সেবা ও পরিবেশ সম্পর্কে খোঁজখবর নিচ্ছেন। আশা করি, সামনের দিনগুলোতে এই সেন্টারে প্রবাসীদের চাপ বাড়বে।

ওয়েজ আর্নার্স সেন্টারে সুযোগ-সুবিধা : ওয়েজ আর্নার্স সেন্টারে প্রবাসীকর্মীরা ১০০ টাকা ফি দিয়ে সরাসরি বা অনলাইনে ভর্তির আবেদন করতে পারবেন। একজন কর্মী আবেদন করতে পারবেন একটি সিটের জন্য। প্রতি রাতের জন্য সিট ভাড়া ২০০ টাকা এবং প্রতিবার সর্বোচ্চ দুই রাত অবস্থান করা যাবে। অবস্থানের ক্ষেত্রে পাসপোর্ট ও এয়ার টিকিটের কপিসহ লাগবে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র। বিমানবন্দর থেকে সেন্টারে যাতায়াতের জন্য ফ্রি পরিবহন সুবিধা রয়েছে। সেফ লকারে লাগেজসহ মূল্যবান মালামাল সংরক্ষণের ব্যবস্থা, টেলিফোন সুবিধা, ইন্টারনেট ব্যবস্থা, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে সেন্টারটিতে।

এ ছাড়া কর্মীদের জন্য কাউন্সিলিং ও মোটিভেশনের ব্যবস্থা, প্রাথমিক চিকিৎসা, প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থাসহ সাশ্রয়ী মূল্যে খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে এই সেন্টারে। নারী-পুরুষের জন্য আলাদা নামাজের ব্যবস্থাও রয়েছে। এখানে প্রবাসীকর্মীদের রি-ইন্টিগ্রেশন (পুনঃএকত্রীকরণ) এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বা করণীয় সম্পর্কে ব্রিফিং করা হয়। ফলে বঙ্গবন্ধু ওয়েজ আর্নার্স সেন্টারটি প্রবাসীকর্মীদের একত্রিত হওয়ার এবং পারস্পরিক অভিজ্ঞতা বিনিময়ের জন্য একটি উপযুক্ত স্থান, যা দেশে এই প্রথম।

বুকিং : অনলাইনে বুকিংয়ের জন্য ০১৩১০-৩৫০৫৫৫, ০১৭৫৪-৭১৫৭২০ নম্বরে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করা যাবে। এ ছাড়া www.wewb.gov.bd  ওয়েবসাইটে সেন্টারের ব্যবহার নির্দেশিকা পাওয়া যাবে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, যেকোনো প্রবাসী শ্রমিক বিমানবন্দর থেকে নির্ধারিত নম্বরে কল দিলে নিজস্ব মাইক্রোবাস (১২ আসন) দিয়ে তাকে সেন্টারে নিয়ে আসা হবে। আবার নির্ধারিত ফ্লাইটের তিন ঘণ্টা আগে বিমানবন্দরে নামিয়ে দেওয়া হবে। এ জন্য মাইক্রোবাস ভাড়া দেওয়া লাগবে না। ২৪ ঘণ্টাই এই সেবা পাবেন প্রবাসীরা।

সর্বশেষ খবর