মঙ্গলবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

নগরীর অহংকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার

নজরুল মৃধা, রংপুর

নগরীর অহংকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার

অনুপ্রেরণার উৎস ও অহংকারে রংপুরে প্রথম শহীদ মিনার। বিভিন্ন জাতীয় দিবসকে কেন্দ্র করে এ শহীদ মিনার হয়ে ওঠে নগরীর প্রাণের স্পন্দন। রংপুর নগরীর শহীদ মিনারটি গড়ে তোলা হয়েছিল ১৯৫৬ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাতের বেলা ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্রলীগের যৌথ উদ্যোগে। রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি ময়দানে লাইব্রেরি ভবনের মাঝ খানের হলরুমের ঠিক সম্মুখভাগে ছোট আকারে শহীদ মিনারটি নির্মাণ করা হয়। ছাত্ররা নিজেরাই ইট, সিমেন্ট, বালু জোগাড় করে মিনারটি নির্মাণ করেন।

প্রয়াত ভাষাসৈনিক শাহ তবিবুর রহমান তার জীবদ্দশায় বলেছেন, সে সময় শহীদ মিনার নির্মাণ কাজে শরিক হন ছাত্রনেতা গোলাম রব্বানী বুলবুল, আলতাফ হোসেন, মোহাম্মদ আফজাল, আমিনুল ইসলাম, রোস্তম আলী, শাহ মো. রুহুল কুদ্দুস, নাজমুল আলম হেবিন, শাহ তবিবর রহমান প্রধান, নাজাতুল আলম জেবিন, খায়রুল ইসলাম, ইসাহাক চৌধুরী, খন্দকার সদরুল আলম মনজু, নওয়াজেশ হোসেন খোকা, মোজাফফর হোসেন প্রধান, তোজাম্মেল হক, আজগর হোসেন, আশরাফ আলী, আশরাফ হোসেন, গোবিন্দ প্রমুখ। সেদিন শহরের গুপ্তপাড়ার ডাক্তার মোজাহারের বাড়ির সামনে থেকে এবং আরও কয়েক স্থান থেকে ইট সংগ্রহ করা হয়। প্রথমে সিমেন্ট হিসেবে ব্যবহার করা হয় তৎকালীন পৌরসভা পুকুরের কাদামাটিকে। রাতারাতি দাঁড় করানো হয় রংপুরের শহীদ মিনারটি। বিষয়টি রাতেই শহরে অনেকের কাছে জানাজানি হয়ে যায়। পরদিন ভোর বেলা এই শহীদ মিনারেই রংপুরের ছাত্র-জনতা, অমর শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানান। তখন ভোর বেলাই খালি পায়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি দিতে যেত শহীদ মিনারে। শহীদদের স্মরণে বুকে লাগানো থাকত কালো ব্যাজ। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এটিই ছিল রংপুর শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার।

স্বাধীনতার পর অপেক্ষাকৃত বড় আকারে রংপুরে দ্বিতীয়বারের মতো কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারটি নির্মিত হয়। ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) এর তৎকালীন জেলা নেতা আজিজুল হক অ্যাডভোকেট ও জননেতা মোহাম্মদ আফজালের উদ্যোগে আয়োজিত এক সভায় শহীদ মিনার নির্মাণে কমিটি গঠিত হয়। শহীদ মিনারটি প্রথম শহীদ মিনারের স্থানের পূর্বদিকে বর্তমান শহীদ মিনারের স্থানেই নির্মিত হয়। মরহুম আজিজুল হক অ্যাডভোকেট এ সময় পাবলিক লাইব্রেরি কমিটির সভাপতি ছিলেন। দ্বিতীয় শহীদ মিনারটির নকশা প্রণয়ন করেছিলেন গণপূর্ত বিভাগের রংপুর মেডিকেল ডিভিশনের প্রকৌশলী নুরুদ্দীন আহমেদ।

রংপুরের বর্তমান কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারটি ১৯৮১ সালে তৎকালীন পৌরসভা কমিটি নির্মাণ করে। তখন রংপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন ভাষাসৈনিক মোহাম্মদ আফজাল। মনোরম স্থাপত্যের এই শহীদ মিনারটি নকশা করেন স্থপতি নুরুন্নবী চৌধুরী ওরফে তাজু চৌধুরী। পৌরসভার পক্ষে নির্মাণ কাজ করেন ঠিকাদার সৈয়দ আহমদ, তাকে সহায়তা করেন আনোয়ার হোসেন বাবলু, হাসিনুল ইসলাম বাবলু। বর্তমানে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মীদের নানা কর্মকাণ্ডে মুখরিত থাকে রংপুরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। জাতীয় দিবস সমূহের অনুষ্ঠান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নাটক, রাজনৈতিক সভা ইত্যাদি নানামুখী কর্মতৎপরতায় উচ্ছল নানা ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে রংপুরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার।

সর্বশেষ খবর