শিরোনাম
মঙ্গলবার, ৩০ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

ঝুঁকি নিয়েই চলতে হয় নাগরিকদের

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

ঝুঁকি নিয়েই চলতে হয় নাগরিকদের

চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গায় লরি থেকে রিকশার ওপর কনটেইনার ছিটকে পড়ে পিতা মো. ইউনুস মিয়াজি ও পুত্র রহিম মিয়াজির মৃত্যু হয়। চিকিৎসক দেখিয়ে বাসায় ফেরার পথে ক্ষতবিক্ষত সড়কে হেলে দুলে লরি চলার সময় কনটেইনার ছিটকে রিকশার ওপর পড়ে। এ ঘটনায় আহত হন রিকশাচালক মোরশেদ আলম (২৭)। ১০ মে ঘটনাটি ঘটে। ১৪ মে নগরের অক্সিজেন মোড়ে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়ে রিকশাচালক জাহেদ আলীর (২৮) ওপর। ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পরই তিনি মারা যান। ১৬ মে নগরের ইপিজেড সাইলো জেটি এলাকায় টেইলার থেকে দুটি বিশালাকৃতির পাইপ অটোরিকশার ওপর ছিটকে পড়ে। এতে আহত চালক ও যাত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এভাবে প্রতিনিয়তই ঘটছে দুর্ঘটনা। চরম ঝুঁকি নিয়েই চলতে হয় যানবাহন ও পথচারীদের। সেবা সংস্থাগুলোর অবহেলা ও দায়িত্বহীনতায় ঘটছে প্রাণহানি। বারবার অভিন্ন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলেও এ নিয়ে সেবা সংস্থাগুলোর কোনো মাথাব্যথা নেই। দায়িত্বশীল সংস্থাগুলো পালন করছে নীরব দর্শকের ভূমিকা। নাগরিকদের মধ্যে বাড়ছে অসন্তোষ, আতঙ্ক।

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, এটি দুঃখজনক। ইতোমধ্যে সংঘটিত ঘটনায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়েছি। কিন্তু এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি করা যায় না। এটি স্মার্ট সিটির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তাই আমরা সব সেবা সংস্থার কাছে চিঠি দিয়ে এ ব্যাপারে সতর্ক এবং প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করব। অন্যথায় আমরা স্মার্ট সিটি রূপান্তরের যে মহাপরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি, তার শতভাগ সুফল মিলবে না।

বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের মহাসচিব অ্যাডভোকেট জিয়া হাবিব আহসান বলেন, যখন কোনো ব্যক্তি তার দায়িত্ব কর্তব্য থেকে সরে গিয়ে কিংবা বিচ্যুতি হয়ে, অন্যায়-অবৈধ বা বেআইনিভাবে কারও অধিকারে হস্তক্ষেপ করবে তখন তাকে টর্ট বলা হয়। নগরে সংস্থাগুলোর অবহেলায় ঘটা মৃত্যুগুলো টর্ট আইনে অপরাধ। টর্ট আইন অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি অবশ্যই প্রতিকার পাবেন। তিনি বলেন, এভাবে ঝুঁকি নিয়ে নাগরিকদের চলাটা কোনো যুক্তিতেই গ্রহণযাগ্যে নয়। মনে হচ্ছে মানুষের জীবন মূল্যহীন। তাই কখনো বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে, কখনো সড়কের গর্তে পড়ে, কখনো নালায় পড়ে, কখনো কনটেইনার পড়ে মানুষ মারা যাচ্ছে। এর কোনো প্রতিকার কিংবা কোনো সংস্থার মাথাব্যথা দেখা যাচ্ছে না। আমরা মনে করি, এগুলো দুর্ঘটনা নয়, অবহেলাজনিত মৃত্যু। সংস্থাগুলোর অবহেলা। সংশ্লিষ্ট সংস্থা এ মৃত্যুর দায় এড়াতে পারে না। টর্ট আইনে এগুলো হত্যাকান্ড।

জানা যায়, সড়কে গর্তে পড়ে বা বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে মৃত্যুর ঘটনা নতুন নয়। ২০২১ সালের ২৫ আগস্ট নগরের মুরাদপুর মোড়ে পা পিছলে নালায় পড়ে মুহূর্তেই পানির স্রোতে তলিয়ে যান ব্যবসায়ী সালেহ আহমদ (৫০)। এরপর তার আর খোঁজ মিলেনি। একই বছর ৭ ডিসেম্বর নগরের চিটাগং শপিং কমপ্লেক্সের বিপরীতে ভূমি অফিসের সামনের ড্রেনে পড়ে নিখোঁজ হন মো. কামাল (১৪)। দুই দিন পর তার লাশ মেলে অদূরের চশমা খালে। ২০২১ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর নগরের আগ্রাবাদে নালায় পড়ে নিখোঁজ হওয়ার পর লাশ উদ্ধার করা হয় আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সেহরিন মাহমুদ সাদিয়ার। ২০২১ সালের ৩০ জুন নগরের মেয়র গলির চশমা খালে পড়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক ও এক যাত্রীর মৃত্যু হয়।

সর্বশেষ খবর