কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) প্রতিষ্ঠার ১৪ বছরেও জনবল কাঠামো অনুমোদন হয়নি। বর্তমান জনবল আছে তৃতীয় শ্রেণির পৌরসভা থেকেও কম। জনবল সংকটে ধুঁকছে সিটি করপোরেশন। ব্যাহত হচ্ছে নাগরিক সেবা। নগরবাসীর অভিযোগ, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন মূলত একটি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান।
২০১১ সালের ১০ জুলাই কুমিল্লা সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠিত হয়। সে সময় এটির জনবল ছিল ১১৭ জন। মৃত্যু, অবসর ও বদলিতে তা বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৬৮ জনে। এদিকে ২০১৩ সালে ১৪৪২ জন জনবলের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছিল। সেখান থেকে তা কাটাছেঁড়া করে ২৪২ জনে এসে ঠেকেছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় হয়ে ২০২৪ সালের ১০ জানুয়ারি তা অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। তারপর এর আর কোনো অগ্রগতি নেই। আগামী দুই তিন বছরে অবসরজনিত কারণে বড় সংখ্যক জনবল খালি হয়ে যাবে। অন্যদিকে প্রতিষ্ঠার পর থেকে মাত্র তিনটি জনবল নিয়োগ দিয়েছে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন। এ ছাড়া মেয়র নেই, কাউন্সিলর নেই। ৩৬ জন কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করছেন কর্মকর্তারা। এতে ওই কর্মকর্তা তার নিজের দায়িত্বও সঠিকভাবে পালন করতে পারছেন না। জনবল সংকটে সিটি করপোরেশনের সেবার অবস্থা অনেকটা লেজে গোবরে বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিকরা।
সূত্র জানায়, বর্তমান প্রশাসক সাইফ উদ্দিন আহমেদ কুমিল্লা পল্লী উন্নয়ন একাডেমির (বার্ড) মহাপরিচালক। প্রশাসক তার অতিরিক্ত দায়িত্ব। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার পদ শূন্য দুই মাস ধরে। সচিব মোহাম্মদ মামুন নিজের দায়িত্বের সঙ্গে আবার ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সায়েম ভুইয়া প্রধান প্রকৌশলী, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, সমন্বিত আবাসন উন্নয়ন প্রকল্প কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করছেন। নির্বাহী প্রকৌশলী মাঈন উদ্দিন চিশতীও একাধিক দায়িত্ব পালন করছেন। হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান উপ-প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন। মোহাম্মদ ইউসুফ সহকারী প্রকৌশলী বিদ্যুৎ, তিনি পানি শাখা ও একটি ওয়ার্ডের প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করছেন। খায়রুল বাশার সহকারী প্রকৌশলী বিদ্যুৎ। তিনি আইটি ও যান্ত্রিক বিভাগও দেখছেন। মেজবাহ উদ্দিন ভুইয়া ফুড অ্যান্ড স্যানিটেশন বিভাগের দায়িত্বে, তার অতিরিক্ত দায়িত্ব জন্মনিবন্ধন, ভ্যাটেরিনারি শাখা ও একটি ওয়ার্ডের প্রশাসক। বেশি ভয়াবহ সংকট বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শাখায়, এই শাখার তিনটি অঞ্চল থাকার কথা। তিন অঞ্চলের তিনজন প্রধান। এ ছাড়া তার প্রয়োজনীয় জনবল থাকবে। এখানে একমাত্র স্থায়ী কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন। অস্থায়ী জনবল দিয়ে এই শাখার কাজ চালানো হচ্ছে। প্রশাসনিক কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ। তিনি বাজার কর্মকর্তা ও একটি ওয়ার্ডের প্রশাসক। অনেক কর্মকর্তার সারা জীবনে একটিও পদোন্নতি নেই। তার ওপরে জনবল সংকটে তিন চারটি অতিরিক্ত দায়িত্ব। সেখানে ভালো সেবা কীভাবে দেওয়া সম্ভব? সচেতন নাগরিক কমিটি কুমিল্লার সাবেক সভাপতি বদরুল হুদা জেনু বলেন, ১৪ বছরে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের একটি জনবল কাঠামো অনুমোদন হয়নি, তা স্থানীয় সরকার, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি চরম ব্যর্থতা। এ ছাড়া তৃতীয় শ্রেণির পৌরসভা থেকে কম জনবল দিয়ে একটি সিটি করপোরেশন কীভাবে চলে তা বিস্ময়কর বিষয়।
কুসিক প্রশাসক সাইফ উদ্দিন আহমেদ বলেন, সিটি করপোরেশনের প্রশাসক আমার অতিরিক্ত দায়িত্ব। কুমিল্লা সিটি করপোরেশন জনবল সংকট আছে তা সঠিক। এদিকে জনবলের বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয়ে আটকে আছে বলে জেনেছি। জনবল কাঠামো অনুমোদন হলে আরও ভালো নাগরিক সেবা দেয়া যাবে।