যোগব্যায়াম একটি শাস্ত্রীয় কৌশল, যা ৫ হাজার বছরের পুরনো। এটি শুধু রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণই করে না; রোগ নিরাময়েও ভূমিকা রাখে। ভারত উপ-মহাদেশে এর উদ্ভাবন হলেও সারা বিশ্বে এর চর্চা, বিকাশ ও জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। ইতিবাচক চিন্তা, প্রাণায়াম, নিউরোবিক জিম, মেডিটেশনের সমন্বয়ে ইয়োগার পরিপূর্ণ প্রয়োগ মানুষকে তার ভিতরের সুপ্ত অসীম শক্তিকে জাগিয়ে তুলতে পারে।
ওজন কমানো, শক্তিশালী নমনীয় শরীর, উজ্জ্বল ত্বক, শান্ত মন, ভালো স্বাস্থ্য ইত্যাদি যা কিছু আমরা পেতে চাই সব কিছুর চাবি আছে যোগাসনে। এতে অনেক রকম শারীরিক সমস্যা যথা- উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, করোনারি আর্টারি ব্লক ইত্যাদি রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব এবং শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিকভাবে সুস্থ জীবন কাটানো সম্ভব। যোগ হলো এক জীবনদর্শন, যোগ হলো আত্মানুশাসন, যোগ হলো এক জীবন পদ্ধতি। যোগ শুধু বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতিই নয়, বরং যোগের প্রয়োগ ব্যাধিকে নির্মূল করে। এটি এক বিধাতা প্রদত্ত শুধু শরীরেরই নয়, পুরো মানসিক রোগেরও চিকিৎসা শাস্ত্র।
যোগাভ্যাস একটি নিয়মিত অভ্যাস। দুই দিন করে ছেড়ে দিলে হবে না, নিয়মিত অভ্যাসের মাধ্যমেই এর সুফল পাওয়া সম্ভব। তবে ছেলে ও মেয়ের মধ্যে যোগব্যায়াম করার কোনো পার্থক্য নেই। খুব সহজ পদ্ধতিতে চার কিংবা পাঁচ বছর বয়স থেকেই যোগব্যায়াম শুরু করা যায়। তবে ১০ বছর থেকে সঠিক নিয়মে যোগব্যায়াম করা সম্ভব। যোগব্যায়াম শেষ করার নির্দিষ্ট কোনো বয়স নেই। ৯৫ বছর বয়স পর্যন্ত অনায়াসে যোগব্যায়াম করা যেতেই পারে। সকাল ৮টার আগেই যোগব্যায়াম করা উত্তম। এ সময় বাতাসে দূষণ কম ও আয়রনের পরিমাণ থাকে বেশি। শীতল আবহাওয়া মনকে রাখে প্রফুল্ল।
হাঁটাহাঁটি : প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট দ্রুত হাঁটা দরকার। এতে আমাদের হার্টের ব্যায়াম হয়। রক্ত সঞ্চালন বাড়ে। এতে হার্ট থাকে সুস্থ।
স্কুয়াট জামস : এই ব্যায়ামটি করার সময় আপনাকে স্কুয়াট আকারে বসতে হবে এবং জাম্প দিতে হবে। এতে আপনার শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেম অনেক বৃদ্ধি পাবে এবং আপনার ক্যালোরিও কমে যাবে।
জাম্পিং জ্যাক : প্রথমে সোজা হয়ে দাঁড়াবেন। তার পর হাত দুটি শরীরের পাশে রেখে লাফাবেন। হাত দুটি মাথার ওপর দিয়েও লাফানো যায়। জাম্পিং জ্যাক করার ফলে শরীরের হাড় শক্ত হয়। কমে ওজন।
প্রাণায়াম : এক পা ভাঁজ করে অন্য পায়ের ওপর রেখে বসতে হবে। তার পর হাত দুটিকে মাঝ বরাবর রেখে এক হাত অন্য হাতের সঙ্গে লাগিয়ে নাক দিয়ে শ্বাস নিতে এবং মুখ দিয়ে শ্বাস ত্যাগ করতে হবে। ব্যায়ামটি অ্যাজমা, শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি রোগ দূর করতে সাহায্য করে।
বৃক্ষাসন : প্রথমে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে ডান পা তুলে বাঁ পায়ের উরুতে রাখতে হবে। তারপর ধীরে ধীরে হাত ওপরে ওঠাতে হবে। বৃক্ষাসন নিয়মিত করলে দেহের ভারসাম্য বৃদ্ধি পায়। পায়ের ওপর জোর বাড়ে।
বীরভদ্রাসন : একটা পা সামনের দিকে হাঁটু গেড়ে অর্ধেক বসতে হবে। আরেকটা পা পেছন দিকে যত সম্ভব দিতে হবে। পরে হাত সামনের দিকে ভর দিয়ে রেখে শরীরটাকে সোজা রাখতে হবে। এটি ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
গোমুখাসন : প্রথমে পা সোজা করে এক পা ভাঁজ করে অন্য পা তার ওপরে দিয়ে রাখতে হবে। পরে হাত দুটি পা দুটিকে ধরে রাখতে হবে। এতে বক্ষস্থল সুন্দর হয়। ভালো থাকে ফুসফুস। দূর করে অর্শের সমস্যা, নিদ্রাহীনতা, বাতব্যথা। মেরুদন্ড সোজা ও সবল করে।
প্ল্যাঙ্ক : কোমর ও মেরুদন্ডের আঘাতের ঝুঁকি হ্রাস করে প্ল্যাঙ্ক। পিঠ ও কোমরের ব্যথা দূর করে। মেটাবোলিজমকে বাড়িয়ে তোলে।
বারফি : এই ব্যায়াম শরীরের পুরোটাই কাজে আসে। এটি করলে অন্য কোনো ব্যায়াম করতে কষ্ট কম হয়। শরীরে অনেক শক্তি জোগায়। উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
হাই নিচ : ইনার থিংয়ের জন্য খুবই উপকারী এই ব্যায়াম। এ ছাড়া পেটের চর্বি কাটাতে উপকারী ভূমিকা পালন করে। ব্যায়ামটি করার সময় আপনার এক হাঁটু ভাঁজ করে পেটে চাপ দিয়ে আরেক হাঁটু ওঠাতে হবে। হালকা লাফিয়ে লাফিয়ে করতে হবে।
সর্বাঙ্গাসন : এই আসনে শরীরে রক্ত সঞ্চালন ভালো হয়। নাক, কান ও গলার সমস্যায় এই আসনের গুরুত্ব অনেক। নিয়মিত এই আসনের অভ্যাসে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। কিডনির সমস্যার সমাধানের জন্য করতে পারেন এই আসন। প্রথমে চিত হয়ে শুতে হবে। তার পর দুই বাহু দুই পাশে রেখে পা দুটি জোড়া অবস্থায় আস্তে আস্তে ওপরে তুলতে হবে এবং লক্ষ্য রাখতে হবে, হাঁটু যেন না ভাঙে। পায়ের পাতা টান অবস্থায় ও দেহ সোজা থাকবে এবং থুঁতনি লেগে থাকবে বুকে। এরপর দুই কাঁধ ও বাহুতে ভর রেখে কনুই ভেঙে দুই হাত পিঠে দিয়ে শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে। শ্বাস থাকবে স্বাভাবিক।
* লেখা : ফেরদৌস আরা
* মডেল : শামা * ছবি : মনজু আলম