বৃহস্পতিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

ভিন্ন পেশায় ক্রিকেটারদের কীর্তি

মেজবাহ্-উল-হক

ভিন্ন পেশায় ক্রিকেটারদের কীর্তি

একজন ক্রিকেটারের গন্ডি কেবল বাইশগজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। কিংবদন্তি ক্রিকেটাররা যেমন মাঠে সফল ছিলেন, তেমনি মাঠের বাইরে অর্থাৎ ক্রিকেট ক্যারিয়ার শেষে তাঁদের অনেকেই আলাদা জগৎ তৈরি করে নিয়েছেন। কেউ ধারাভাষ্য কিংবা কোচিং নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আবার কেউ নিজস্ব ব্যবসা দাঁড় করিয়েছেন। অনেকে আবার খেলোয়াড় তৈরির আঁতুড়ঘর ‘একাডেমি’ করে নিজেকে ক্রিকেটের সঙ্গেই যুক্ত রেখেছেন। কিংবদন্তিদের কেউ আবার রাজনীতির মাঠে সফল হয়েছেন, কেউ বিভিন্ন সামাজিক কাজে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। কিংবদন্তি ক্রিকেটারদের ভিন্ন পেশা নিয়েই আজকের এই আয়োজন-

 

 

ইমরান খান (পাকিস্তান)

বাইশগজের তারকা যখন প্রধানমন্ত্রী

কিংবদন্তি ক্রিকেটারদের সংক্ষিপ্ত তালিকা করলেও তাতে থাকবেন পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও সাবেক অধিনায়ক ইমরান খানের নাম। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের স্বাদ পায় পাকিস্তান। সেবার পাকিস্তান যে অন্য দলগুলোর তুলনায় আহামরি দল ছিল তা নয়। মাঝারি মানের একটি দল নিয়েই ইমরানের ক্যারিশমাটিক নেতৃত্বে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয় পাকিস্তান। ক্রিকেট ক্যারিয়ারের ইতি টানার পর রাজনীতির মাঠে নামেন তিনি। সেখানেও এক শতে ‘এক শ’ মার্ক পেয়েছেন ইমরান। এখন তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। ক্রিকেট নিয়ে ইমরান যেমন বড় স্বপ্ন দেখেছেন, রাজনীতির মাঠেও তিনি সে ‘ভিশন’ নিয়েই নামেন। নতুন দল করেন, নাম দেন ‘পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ’।

প্রথম দিকে সাধারণ মানুষ খুব একটা সাড়া দেয়নি। কিন্তু ইমরান পিছু হটার পাত্র নন। তিনি লেগে থাকেন। ধীরে ধীরে সাধারণ মানুষকে বোঝাতে সমর্থ হন- তিনি তাদের মুক্তির দূত হিসেবে এসেছেন। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের মানুষ ইমরানকে বিশ্বাস করে এবং সরকার প্রধানের চেয়ারে বসেন কিংবদন্তি এই ক্রিকেটার। ইমরান খানের জন্ম ১৯৫২ সালে পাকিস্তানের দ্বিতীয় বৃহত্তর শহর (প্রথম করাচি) লাহোরের এক পস্তুন পরিবারে। পড়াশোনা করেন বিখ্যাত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। মাত্র ১৮ বছর বয়সে ১৯৭১ সালে তিনি পাকিস্তানের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু করেন। ’৮২ থেকে ’৯২ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান জাতীয় দলের অধিনায়ক ছিলেন। ’৯৬ সালে তিনি ‘পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ’ দল গঠন করেন।

 

শচীন টেন্ডুলকার (ভারত)

টেন্ডুলকারের ট্রু-ব্লু

ভারতীয় উপমহাদেশে পুরুষদের ফ্যাশনে এক অনন্য নাম ‘ট্রু-ব্লু’। জনপ্রিয় এ ব্র্যান্ডটির মালিক হচ্ছেন ভারতীয় ক্রিকেট ঈশ্বর শচীন টেন্ডুলকার। ক্রিকেটকে গুডবাই জানানোর পর ব্যাটিং জিনিয়াস ঝুঁকে পড়েন ব্যবসার দিকে। ধীরে ধীরে তিনি গড়ে তোলেন জনপ্রিয় এ ব্র্যান্ড। ক্রিকেট মাঠের মতো ব্যবসায়ও সফল টেন্ডুলকার। লিটল মাস্টারের ‘ট্রু-ব্লু’ এখন বিশ্বে আলাদা অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে। রেস্টুরেন্ট ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত শচীন টেন্ডুলকার।

‘টেন্ডুলকার’ ও ‘শচীনস’ নামে তাঁর দুটি রেস্টুরেন্ট আছে।

ফুটবলেও টেন্ডুলকারের অবদান আছে। ইন্ডিয়ান সুপার লিগের দল ‘কেরালা ব্লাস্টার্স’-এর কর্ণধার তিনি। এ ছাড়া যৌথভাবে কিনেছেন ব্যাডমিন্টন প্রিমিয়ার লিগের দল ‘বেঙ্গালুরু ব্লাস্টার্স’। শচীন ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন ২০১৩ সালে। কিন্তু এখনো ক্রিকেটের অধিকাংশ রেকর্ডই তাঁর দখলে। তাঁর এমন কিছু রেকর্ড আছে, ক্রিকেট যত দিন থাকবে তাঁর রেকর্ডও অবিনশ্বর থাকবে। প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে তিনি ওয়ানডে ক্রিকেটে ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন। তিন ফরম্যাটের ক্রিকেট মিলে ৩০ হাজারের ওপর রান। যদিও টেন্ডুলকার ভারতের হয়ে মাত্র একটি টি-২০ ম্যাচ খেলেছেন।  টেস্ট ও ওয়ানডে ক্রিকেট মিলে করেছেন ‘সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি’।

 

মাশরাফি বিন মর্তুজা (বাংলাদেশ)

ক্রিকেট থেকে রাজনীতির ময়দানে

বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রসঙ্গ এলেই সবার আগে যে নামটি সামনে আসে তা হলো মাশরাফি বিন মর্তুজা। ক্রিকেট বিশ্বে তিনি ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’ নামে পরিচিত। ক্রিকেট হচ্ছে তাঁর ধ্যান-জ্ঞান। ২০০১ সালে জাতীয় দলে অভিষেকের পর তাঁকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। একের পর এক সাফল্য এসে ধরা দিয়েছে। মাশরাফি বিন মর্তুজা শুধু সুপারস্টার পেসারই নন, তিনি অধিনায়ক হিসেবেও সেরা। ক্রিকেট বিশ্বে এখন বাংলাদেশ যে একটি প্রতিষ্ঠিত শক্তি হতে যাচ্ছে তা সম্ভব হয়েছে মাশরাফির কল্যাণেই। তিনি টাইগারদের নেতৃত্ব দিয়ে ২০১৫ সালে আইসিসি বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে নিয়ে যান। ২০১৭ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশকে সেমিফাইনালে পৌঁছান। ম্যাশের নেতৃত্বে বাংলাদেশ দল একাধিকবার এশিয়া কাপের ফাইনালও খেলে।

মাশরাফি ক্রিকেট মাঠের মতো রাজনীতির মাঠেও সফল। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে নড়াইল-২ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, এখনো সমানতালে খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন মাশরাফি। একদিকে নিজের এলাকার সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন, অন্যদিকে খেলার মাঠেও দাপট দেখাচ্ছেন। দৃঢ় মনোবল ও কঠোর পরিশ্রম করতে পারলে একজন মানুষের কাছে অসম্ভব বলে যে কিছু নেই-তা করে দেখিয়েছেন মাশরাফি।

২০১৯ সালে ক্রিকেট নিউজ পোর্টাল ইএসপিএন ক্রিকইনফোর প্রতিবেদনে দেখানো হয়, জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে বিশ্বে সেরা অ্যাথলেট মাশরাফি।

 

  গ্লেন ম্যাকগ্রা (অস্ট্রেলিয়া)

ম্যাকগ্রা এখন মানবতার দূত

অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি পেসার গ্লেন ম্যাকগ্রার গল্প অন্য দশজন ক্রিকেটারের মতো নয়। সম্পূর্ণ আলাদা। সেই ছোটবেলা থেকেই স্রোতের প্রতিকূলে চলা মানুষ তিনি। কিশোর বয়সে খুবই হ্যাংলা-পাতলা গড়নের ছিলেন বলে তাঁকে পেসার হিসেবে অনেকে পাত্তাই দিতেন না। কিন্তু সেই অবহেলার পাত্র ছেলেটি পেস বোলিংয়ে কিংবদন্তি। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট সাফল্যের অন্যতম এক রূপকার।

ম্যাকগ্রার পারিবারিক জীবনটাও অন্যরকম। ১৯৯৫ সালে তাঁর পরিচয় হয় জেন স্টিলের সঙ্গে। মজার বিষয় হচ্ছে, সম্পর্কে জড়ালেও জেন এতটাই ক্রিকেট-বিমুখ এক নারী ছিলেন যে তিনি জানতেনই না তার প্রেমিক একজন ক্রিকেট তারকা। ম্যাকগ্রাও নিজের পরিচয় নিয়ে কখনো গর্ব করেননি। ১৯৯৭ সালে জেন স্টিল জানতে পারলেন তার স্তন ক্যান্সার। শুধু তাই নয়, রোগটি খুবই ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করেছে। এটা জানতে পেরে ম্যাকগ্রাকে তার জীবন থেকে সরে যেতে বলেন। ম্যাকগ্রা সরে তো যানইনি, উল্টো একসঙ্গে লড়াইয়ে নেমে পড়েন। তারা ১৯৯৯ সালে সম্পর্ককে স্থায়ী রূপ দিতে বিয়ে করেন। স্ত্রীর লড়াই থেকে ম্যাকগ্রা অনুপ্রাণিত হতেন। বাইশগজে নিজেকে আরও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ করতেন। খেলা শেষে সময় পেলেই স্ত্রীকে সময় দিতেন। ১০ বছর ক্যান্সারের সঙ্গে যুদ্ধ করে ২০০৮ সালে জেন পৃথিবী থেকে বিদায় নেন। তত দিনে ম্যাকগ্রাও ক্রিকেট ছেড়ে দিয়েছেন। এরপর স্তন ক্যান্সারের সচেতনতার জন্য নিজেকে নিবেদিত করেন। অসি কিংবদন্তি এবং তাঁর হাতে গড়া ‘ম্যাকগ্রা ফাউন্ডেশন’ এখন দাতব্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে গোটা বিশ্বেই স্তন ক্যান্সারের সচেতনতা বাড়াতে কাজ করে যাচ্ছে।  এক সময়ের ক্রিকেটের ম্যাকগ্রা এখন মানবতার দূত।

 

ক্রিস গেইল (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)

গেইলের ‘ট্রিপল সেঞ্চুরি ৩৩৩’

ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত ফরম্যাট টি-২০-তে যেখানে হাফ সেঞ্চুরি করাই কঠিন সেখানে ২৪টি সেঞ্চুরি করেছেন ক্রিস গেইল। সবচেয়ে বেশি ছক্কা হাঁকানোর রেকর্ডও তাঁর। এ ছাড়া টি-২০-এর অধিকাংশ রেকর্ডই গেইলের দখলে। এ জন্য ক্যারিবীয় তারকাকে বলা হয় ‘টি-২০ সম্রাট’।

তবে ক্রিকেটের পাশাপাশি রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ও সফল ক্রিস গেইল। জ্যামাইকায় ‘ট্রিপল সেঞ্চুরি-৩৩৩’

নামে তাঁর একটি বিখ্যাত স্পোর্টস বার ও রেস্টুরেন্ট আছে। ২০১০ সালে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে গলেতে ৩৩৩ রানের একটি ইনিংস খেলেছিলেন

গেইল। টি-২০-তে সেঞ্চুরির পর সেঞ্চুরি করলেও টেস্টের ওই ইনিংসকেই ক্যারিয়ারের সেরা অর্জন বলে মনে করেন এই কিংবদন্তি ক্রিকেটার। সে কারণেই তাঁর বার ও রেস্টুরেন্টের নাম দিয়েছেন ‘ট্রিপল সেঞ্চুরি-৩৩৩ বার অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট’। ক্যারিবীয় কিংবদন্তি তাঁর রেস্টুরেন্টটি উদ্বোধন করেন ২০১৩ সালে। সময় পেলেই নিজের রেস্টুরেন্টে ভক্তদের নিয়ে মেতে ওঠেন গেইল।

 

  শোয়েব আখতার (পাকিস্তান)

গতিদানব শোয়েব এখন ইউটিউবার

ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে দ্রুতগতিতে বল করা পাকিস্তানের কিংবদন্তি পেসার শোয়েব আখতার এখন ইউটিউবার। বাইশগজে ক্রিকেট না খেললেও এখনো তিনি ক্রিকেট নিয়েই পড়ে আছেন। ক্রিকেট নিয়ে ব্লগিং করছেন। খেলোয়াড় হিসেবে ক্রিকেটকে গুডবাই জানানোর পর শোয়েব আখতার ব্যস্ত হয়ে পড়েন ধারাভাষ্য নিয়ে। সেখানে খুব একটা ভালো করতে পারেননি। এরপর ইউটিউবে নিজেই একটি চ্যানেল করেন। সেখানে ক্রিকেটের অন্তরালের অনেক খবর প্রকাশ করেন। নানা আঙ্গিকে ক্রিকেটকে বিশ্লেষণ করেন। পাকিস্তানে ক্রিকেটে বরাবরই অনেক পেসার এসেছেন। কিন্তু শোয়েব আখতারের মতো এমন আগ্রাসী ভাব নিয়ে বোধহয় আর কেউ আসতে পারেননি। বাইশগজে তিনি ১০০.২৩ মাইল বা ১৬১.৩ কিলোমিটার বেগে বোলিং করেছেন। ক্রিকেটের ইতিহাসে শোয়েবের চেয়ে দ্রুতগতিতে আর কেউ বোলিং করেননি।

তার বিরুদ্ধে ব্যাটিং করেছেন অথচ জড়সড়ো হয়ে যাননি এমন ব্যাটসম্যান খুঁজে যাওয়া যাবে না। শোয়েব বল হাতে নিলেই ব্যাটসম্যানের কাঁপুনি ধরে যেত। দ্রুতগতির জন্যই ক্রিকেট বিশ্বে তিনি পরিচিত ‘রাওয়ালপিন্ডি এক্সপ্রেস’ নামে। শোয়েব আখতার গতিতে যতটা আলোচনায় এসেছেন ক্যারিয়ারকে ততটা সমৃদ্ধ করতে পারেননি। পাকিস্তানের হয়ে ৪৬ টেস্ট খেলে নিয়েছেন ১৭৮ উইকেট। ১৬৩ ওয়ানডেতে তাঁর শিকার ২৪৭ উইকেট। জাতীয় দলের হয়ে মাত্র ১৩টি টি-২০ ম্যাচ খেলেছেন। নিয়েছেন ১৯ উইকেট। এখন ক্যারিয়ারের পাওয়া-না পাওয়ার হিসাব মেলাচ্ছেন ইউটিউব চ্যানেলে আলোচনার ঝড় তুলে।

 

নবজিত সিং সিধু (ভারত)

ক্রিকেট ক্যারিয়ার শেষে সুপারহিট সিধু

ভারতের জার্সিতে ৫১টি টেস্ট এবং ১৩৬টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেন নবজিত সিং সিধু। বাইশগজে ঘূর্ণি জাদু দেখিয়ে বেশ আলোড়িত হন। তবে সিধু সুপারহিট হন ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার পর। মানুষকে হাসানোর অসাধারণ এক ক্ষমতা ছিল তাঁর। ক্রিকেট ধারাভাষ্য দিতে গিয়ে তিনি এমন সব মজার কথা বলতেন যা শুনে ক্রিকেটপ্রেমীরা হাসতে হাসতেই খুন! বিভিন্ন রিয়েলিটি শোতে নিয়মিত ডাক পড়ত তাঁর। একটা সময় এমন ছিল, কোনো অনুষ্ঠানে সিধু থাকা মানেই তা সুপারহিট। ২০০৪ সালে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে যান তিনি। সেখানেও সফল। বিজেপি থেকে মনোনয়ন পেয়ে লোকসভার নির্বাচন করেন।  বর্তমানে ভারতের পার্লামেন্ট সদস্য।

 

অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ (ইংল্যান্ড)

বক্সার ফ্লিনটফ

ক্রিকেটে সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডারের তালিকা করলে সেখানে নিশ্চিতভাবেই থাকবে ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফের নাম। টেস্ট ও ওয়ানডে মিলে সাত হাজারের ওপর রান, উইকেটও চার শ’র কাছাকাছি। সেই ফ্লিনটফ ক্রিকেট ছাড়ার পর হয়ে যান বক্সার। স্কুলে সাধারণত শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা করে। কিন্তু ফ্লিনটফ শুধু ক্রিকেট খেলার জন্যই স্কুলে যেতেন। কোনো শিক্ষক ক্রিকেট নিয়ে উল্টাপাল্টা বললে সে স্কুল থেকেই তিনি চলে যেতেন। ল্যাঙ্কারশায়ার স্কুলের হয়ে ফ্লিনটফ অনূর্ধ্ব-১১ ও অনূর্ধ্ব-১৫ দলে খেলেন। ইংল্যান্ড অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলার পর জাতীয় দলে সুযোগ পেয়ে যান। সেই পছন্দের ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার পর পেশাদার বক্সার হয়ে যান অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ। বক্সিংয়েও সফল তিনি। মজার বিষয় হচ্ছে, বক্সিংয়ের পাশাপাশি তিনি আবারও টি-২০ ক্রিকেটে ফেরেন। খেলেন বিগ-ব্যাশের মতো টুর্নামেন্টেও। একসঙ্গে জনপ্রিয় দুই খেলা চালিয়ে গেছেন।  বর্তমানে রিয়েল এস্টেট ব্যবসা নিয়ে পড়ে আছেন ইংল্যান্ডের এই তারকা।

 

কার্টলি এমব্রোস (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)

সেই এমব্র্রোস এখন মিউজিশিয়ান

কার্টলি এমব্রোস। অ্যান্টিগার ভয়ঙ্কর পেসার ওয়েস্ট ইন্ডিজের জার্সিতে টেস্ট ক্রিকেটে চার শতাধিক উইকেট নিয়েছেন। যত দিন ক্রিকেট খেলেছেন ব্যাটসম্যানদের জন্য ছিলেন মূর্তিমান আতঙ্ক। আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ে সেরা বোলার ছিলেন। এক সময়ের প্রতাপশালী পেসার এখন মিউজিশিয়ান। অসাধারণ গিটার বাজান। এমব্রোসের ক্যারিয়ারটা বেশ বৈচিত্র্যপূর্ণ। স্কুলে থাকাকালে টেনিস বল দিয়ে ক্রিকেট শুরু করেন। বেশি সময় লাগে বলে একসময় ক্রিকেটে তাঁর অনীহা দেখা দেয়। তাই বাস্কেটবলে মনোনিবেশ করেন ৬ ফুট ৮ ইঞ্চি উচ্চতার এই তারকা। কিন্তু ভালো করতে পারেননি। ফিরে আসেন ক্রিকেটে।

বাইশগজে বল হাতে এমব্রোস কতটা ভয়ঙ্কর ছিলেন তা অস্ট্রেলিয়া দলের চেয়ে আর কেউ ভালো বলতে পারবে না। ১৯৯২-৯৩ মৌসুমে পার্থ টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ১ রানে ৭ উইকেটের এক অসাধারণ স্পেল করেন। ঘরের মাঠে অসিরা ২ উইকেটে ৮৫ রান করার পরই ম্যাচের গতি বদলে দেন এমব্রোস। জীবনের সেরা স্পেল করেন সেই ম্যাচেই। পার্থের ওই ম্যাচে অসিরা অলআউট হয়ে যায় মাত্র ১১৯ রানে। ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার পর মিউজিক নিয়ে মেতে ওঠেন এমব্রোস। আগেও খেলার ফাঁকে সুযোগ পেলেই গিটার নিয়ে পড়ে থাকতেন। কিন্তু ক্রিকেট ছাড়ার পর তিনি ‘দ্য বিগ ব্যাড ড্রেড অ্যান্ড দ্য বোন্ড হেড’ নামে একটি ব্যান্ড দলের সদস্য হয়ে যান।  যদিও পুনরায় ক্রিকেটে ফেরেন বোলিং কোচ হিসেবে, তবে মিউজিকই তাঁর প্রাণ।

 

মাহেলা জয়াবর্ধনে (শ্রীলঙ্কা)

কোচিং নিয়ে মেতে আছেন মাহেলা

শ্রীলঙ্কার কিংবদন্তি ক্রিকেটার মাহেলা জয়াবর্ধনে। জাতীয় দলের হয়ে তিনি ১৪৩টি টেস্ট, ৪৪৮টি ওয়ানডে এবং ৫৫টি টি-২০ ম্যাচ খেলেন। লঙ্কান ক্রিকেটের ইতিহাসে বড় একটা জায়গা দখল করে আছেন মাহেলা। টেস্টে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটারদের মধ্যে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের মালিক তিনি। ২০০৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে খেলেন ৩৭৪ রানের ইনিংস। শ্রীলঙ্কার প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ১০ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি। ১৯৯৭ সালে লঙ্কান জার্সিতে জাতীয় দলে অভিষেক মাহেলার, ইতি টানেন ২০১৫ সালে। তবে খেলোয়াড় হিসেবে অবসর নিলেও ক্রিকেটকে ছাড়তে পারেননি। জীবনের বাকি সময়টা কোচ হিসেবেই কাটিয়ে দিতে চান।

খেলোয়াড় মাহেলা জয়াবর্ধনে কোচ হিসেবেও দারুণ সফল। বর্তমানে আইপিএলের সফল দল মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের কোচ তিনি। তাঁর তত্ত্বাবধানেই সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত আইপিএলে চ্যাম্পিয়ন মুম্বাই। ২০১৭ সালে দায়িত্ব নিয়েই তিনি একবার শিরোপা এনে দেন। এরপর ২০১৯ সালেও তাঁর দল শিরোপা জেতে। মাহেলা বিপিএলের দল খুলনা টাইটানসেরও কোচ ছিলেন। দায়িত্ব পালন করেছেন ইংল্যান্ড জাতীয়  ক্রিকেট দলের ব্যাটিং উপদেষ্টা হিসেবেও।

 

ক্রিস কেয়ার্নস (নিউজিল্যান্ড)

ক্লিনার কেয়ার্নসের সাফল্য

স্যার রিচার্ডস হ্যাডলির পর নিউজিল্যান্ডে সবচেয়ে বড় তারকা অলরাউন্ডার ছিলেন ক্রিস কেয়ার্নস। দুর্দান্ত বোলিংয়ের পাশাপাশি তিনি ব্যাট হাতেও ঝড় তুলতেন বাইশগজে। নারী ভক্তদের কাছে কেয়ার্ন ছিলেন ক্র্যাশ। ক্রিকেট খেলেই প্রচুর অর্থ উপার্জন করেন। কিন্তু ম্যাচ ফিক্সিংয়ের দায়ে ক্রিকেট ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যায়। তারপর জীবিকা নির্বাহ করতে ক্লিনারের কাজ করতে হয়েছে এই কিউই তারকাকে। ভারতের বিদ্রোহী লিগ আইসিএল থেকে অনেক অর্থ পেয়েছিলেন। ২০১৩ সালে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের। এর পরই বিপর্যয় নেমে আসে কেয়ার্নসের জীবনে। সংসার চালাতে বাসের যাত্রী ছাউনি পরিষ্কারের চাকরি নেন। ক্লিনার থাকার সময়ই এমন একজনের সঙ্গে পরিচয় হয় যিনি কেয়ার্নসকে মধ্যপ্রাচ্যে নিয়ে আসেন। এখন দুবাইয়ে ডায়মন্ড ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত তিনি। কেয়ার্নস নিউজিল্যান্ডের হয়ে সব মিলে নয়টি সেঞ্চুরি এবং ৪২০টি উইকেট শিকার করেন। ২০০০ সালে কেনিয়ার নাইরোবিতে অনুষ্ঠিত আইসিসি নকআউট ট্রফির ফাইনালে অসাধারণ অলরাউন্ড পারফর্ম করে ফাইনালে ভারতের বিরুদ্ধে  নিউজিল্যান্ডকে জিতিয়ে দেন।

সর্বশেষ খবর