বৃহস্পতিবার, ২৬ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

কারাগারে বিয়ে

কারাগারে বিয়ে

কেউ দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আবার কারও বিরুদ্ধে চলছে বিচার প্রক্রিয়া। এদের অধিকাংশই খুনি। কেউ কেউ আবার ধর্ষণের দায়ে দোষী সাব্যস্ত। তবে এ তালিকায় উঠে আসা প্রত্যেকের মিল একটি জায়গায়। আর সেটি হচ্ছে কারাগারে বিয়ে। আদালতের অনুমতি নিয়ে কারাগারে বিয়ের ঘটনা ঘটেছে অহরহ। কেউ কেউ আবার নিয়ম মেনে কারাবাসেই শুরু করেন নতুন দাম্পত্য জীবন। একেক দেশের আইন একেকভাবে বিষয়টি অনুমোদন করে। কারাগারে সাজাপ্রাপ্ত আসামি, যারা চৌদ্দ শিকের মধ্যে বিয়ে করেছেন তাদের নিয়ে লিখেছেন- আবদুল কাদের

 

জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ

সময়টা ২০০৬ সাল। উইকিলিকস প্রতিষ্ঠা করেন অ্যাসাঞ্জ। তবে তার এই প্ল্যাটফরম আলোচনায় আসে ২০১০ সালে। ওই বছর ২ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন কূটনৈতিক তারবার্তা ও ৫ লাখ সামরিক গোপন নথি ফাঁস করে হইচই ফেলে দিয়েছিল উইকিলিকস। যার মধ্যে ছিল আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধ নিয়ে গোপন নথি। সেই থেকে অ্যাসাঞ্জের ভোগান্তির শুরু। ২০১০ সালেই তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। ধর্ষণের মামলা। গ্রেফতার এড়াতে ২০১২ সালে অ্যাসাঞ্জ আশ্রয় নেন লন্ডনের ইকুয়েডর দূতাবাসে। এক দশকের বেশি সময় কাটিয়েছেন বন্দিজীবন। কিন্তু সমস্যাটা বাধে ২০১৯ সালে। ওই বছর জামিনের শর্ত ভঙ্গের অভিযোগে যুক্তরাজ্য পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। এ সময়ের বেশির ভাগ বিদেশি দূতাবাসে গৃহবন্দি, বাকিটা জেলবন্দি কেটেছে তার। বর্তমানে তিনি বন্দি আছেন বেলমার্শ কারাগারে। অ্যাসাঞ্জের সঙ্গে ২০১১ সালে তার প্রথম দেখা হয়। এরপর প্রায় প্রতিদিন ইকুয়েডর দূতাবাসে গিয়ে অ্যাসাঞ্জের সঙ্গে দেখা করতেন মরিস। এভাবেই তাদের মধ্যে বোঝাপড়া তৈরি হয়। পরে তা গড়ায় প্রণয়ে। ২০১৭ সালে হয় বাগদান, ২০২২ সালে কারাগারে এই যুগলের বিয়ে হয়। স্ত্রী স্টেলা মরিস। তিনি অ্যাসাঞ্জের আইনজীবী দলের সদস্য। ইকুয়েডর দূতাবাসে থাকাকালেই গর্ভধারণ করেন মরিস। তত দিনে অ্যাসাঞ্জ-মরিসের ঘরে দুই সন্তান আসে। অ্যাসাঞ্জের বয়স (৫১ বছর) বাড়ছে, সঙ্গে বাড়ছে অসুস্থতা। দুর্ভাগ্য যেন পিছু ছাড়ছে না। ওয়াশিংটন তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ এনেছে, সেসব প্রমাণিত হলে ১৭৫ বছরের জেল হতে পারে অ্যাসাঞ্জের। অধরা রয়ে যেতে পারে মুক্ত জীবনের প্রত্যাশা।

 

সুসান অ্যাটকিনস

সুসান অ্যাটকিনস তার আসল নাম। তবে তিনি স্যাডি মে গ্রেটার্জ নামে সর্বাধিক পরিচিত। ১৯৬৬ সালে প্রথম আইনি ঝামেলায় পড়েন সুসান। অবৈধ অস্ত্র বহন, চুরি ও ডাকাতির জন্য জেলে যেতে হয়েছিল। মুক্তিও মেলে তিন মাস পর। পরবর্তীতে ১৯৬৯ সালে গ্যারি হিনম্যান হত্যাকাণ্ডে আবারও গ্রেফতার হন সুসান। এরপরই খুলতে থাকে শ্যারন টেট হত্যার রহস্য। সুসান ও তার সহযোগীরা শ্যারনসহ চারজনকে হত্যা করেন। আদালত সুসানকে মৃত্যুদণ্ড দেন। তবে ভাগ্য সহায় ছিল, বেঁচে যান সুসান। ক্যালিফোর্নিয়ায় তখন মৃত্যুদণ্ড বিলুপ্ত ছিল। বিকল্প শাস্তিস্বরূপ বরণ করেন যাবজ্জীবন কারাজীবন। ১৯৮১ সালে ক্যালিফোর্নিয়ায় সুসান ‘মিলিয়নিয়ার ডোনাল্ড লি লেইজারকে বিয়ে করেছিলেন। যদিও সে সময় সুসান-লেইজারের সম্পর্কটি টেকেনি। কারণ, সুসানের দাবি, লেইজার মিথ্যাবাদী ও প্রতারক। এর আগেও লেইজার নাকি ৩৫টি বিয়ে করেছিলেন। জীবনের শেষ সময় ব্রেন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন সুসান। বরণ করে নেন পঙ্গুত্ব।

 

কেনেথ বানোচি

তার পুরো নাম কেনেথ অ্যালেসিও বানোচি। খুন, অপহরণ ও ধর্ষণ- এহেন কোনো অপরাধ নেই যা তিনি করেননি। লস অ্যাঞ্জেলেসবাসী তাকে চেনেন ‘হিলসাইড স্ট্রাংলার’ নামে। সময়টা ১৯৭৯ সাল, সে সময় বানোচি ছিলেন লস অ্যাঞ্জেলেসের মূর্তিমান আতঙ্ক। ১৯৭৭-১৯৭৯ সাল; এ সময় তিনি তার চাচাতো ভাই অ্যাঞ্জেলো বুনোকে নিয়ে ঘটান আলোচিত এক হত্যাকাণ্ড। দুই ভাই মিলে লস অ্যাঞ্জেলেসের পাহাড়ে একে একে সাত মেয়ে ও দুই যুবতীকে এনে ধর্ষণ, নির্যাতন এবং হত্যা করেন। হত্যার শিকার য্বুতীদের লাশ উদ্ধারের পর তৎকালীন গণমাধ্যমে হত্যাকাণ্ডগুলো বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে। ১৯৭৯ সালে পুলিশ সন্দেহভাজন হিসেবে বানোচিকে গ্রেফতার করে। পরে বেরিয়ে আসে ‘হিলসাইড স্ট্রাংলার’-এর রহস্য। আদালতে বানোচি মিথ্যা সাক্ষী উপস্থাপন করেন। যদিও তার মিথ্যা সাক্ষ্য টেকেনি। সাজা ভোগের ১০ বছর পর ১৯৮৯ সালে বানোচি পেন পল শার্লি জয়েস বুককে বিয়ে করেন। জানা গেছে, শার্লিকে আরেক খুনি ও ধর্ষণকারী টেড বান্ডি প্ররোচিত করেন।

 

অস্কার রে বলিন

অস্কার রে বলিন, আমেরিকান ‘বলিন দ্য কসাই’। এ নামেই বলিনকে চেনেন আমেরিকাবাসী। ১৯৮৬ সালে বলিন তিন তরুণীকে অপহরণ এবং হত্যা করেন। তাই সাধারণ আমেরিকানরা ঘৃণাস্বরূপ এই উপাধি দেয়। বলিন ছিলেন ট্রাক ড্রাইভার। ১৯৮৬ সালে রাস্তায় সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়ে এক নারীকে হত্যা করেন বলিন। ১৯৮৭ সালেও একই কায়দায় টেক্সাসের আরেক নারীকে হত্যা করেন তিনি। হত্যার প্রায় চার বছর মামলাগুলো অমীমাংসিত ছিল। পুলিশ বলিনকে ধরার জন্য তার সাবেক স্ত্রীর সাহায্য নেয়। আদালত বলিনকে দীর্ঘ ২৩ বছর কারাদণ্ড দেন। ২০১৬ সালে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় লিথাল ইনজেকশনের মাধ্যমে। দীর্ঘ কারাভোগের সময় তিনি চার সন্তানের জননী রোজালি মার্টিনেজকে বিয়ে করেন। তার স্ত্রী রোজালি ছিলেন একজন বিশিষ্ট অ্যাটর্নির সাবেক স্ত্রী।

 

এরিক মেনেন্ডেজ

ধনকুবের মা-বাবার সন্তান এরিক মেনেন্ডেজ। ১৯৯৬ সালের ঘটনা। সে সময় ধনকুবের জোসেফ ও মেরি দম্পতি নির্মম হত্যার শিকার হন। আর হত্যাকারী আর কেউ নন, তাদেরই সন্তান এরিক মেনেন্ডেজ ও লেইল মেনেন্ডেজ। সে সময় বাবা-মাকে হত্যার দায়ে জেলে যেতে হয় এরিক ও লেইল ভ্রাতৃদ্বয়কে। প্রথমে তাদের বিচারকার্য একই জুরিতে সম্পন্ন হয়। পরে আলাদাভাবে দুই ভাইয়ের বিচার করা হয়। আদালত এরিককেও মৃত্যুদণ্ড দেন। তবে পরবর্তীতে আদালত দুই ভাইকে আলাদাভাবে কারাভোগের নির্দেশ দেন। কারাভোগের সময় ছোট ভাই লেইল বিয়ে করেন। একইভাবে বড় ভাইও কারাগারে বিয়ে করেন। ১৯৯৯ সালে ফলসম কারাগারে পেন পল তাম্মি স্যাকোম্যানকে বিয়ে করেন এরিক। গণমাধ্যমকে তাম্মি জানান, তাদের বিয়ের কেকটি সুন্দর ছিল। আজও তারা কারাগারে তাদের বিবাহিত জীবন উপভোগ করছেন। তাম্মি নিজের প্রকাশিত ‘দ্য সেড উইড নেভার মেক ইট : মাই লাইফ উইথ এরিক মেনেন্ডেজ’ বইয়ে নিজের বিবাহিত জীবনের নানা স্মৃতির কথা লিখেছেন।

 

অ্যাঞ্জেলো বুনো

এই অপরাধীর নাম অ্যাঞ্জেলো অ্যান্থনি বুনো। তিনি আলোচিত ‘হিলসাইড স্ট্রাংলার’ হত্যাকাণ্ডের অন্যতম সহযোগী। তিনি বানোচির চাচাতো ভাই। ১৯৭৭-১৯৭৯ সালের মধ্যে লস অ্যাঞ্জেলেস পাহাড়ে সাত মেয়ে ও দুই যুবতীকে ধর্ষণ ও হত্যা করেন এই অপরাধী। জানা গেছে, হত্যার শিকার মেয়ে ও যুবতীদের বয়স ছিল ১২ থেকে ২৮ বছরের মধ্যে। জঘন্যতম এই হত্যাকাণ্ড তৎকালে ব্যাপক সাড়া ফেলে। ১৯৭৯ সালে ওয়াশিংটনে কারেন ম্যান্ডিস এবং ডায়ান ওয়াইল্ডারকে ধর্ষণ ও হত্যার পর পুলিশ বানোচিকে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতার করে। চলে জিজ্ঞাসাবাদ। হত্যাকাণ্ডে বানোচির সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মেলে। বানোচি মৃত্যুদণ্ড থেকে বাঁচার জন্য বুনোকে ফাঁসিয়ে দেন। পুলিশ বুনোকেও গ্রেফতার করে। দীর্ঘ বিচারের পর ১৯৮২ সালে আদালত যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। চার বছর পর বুনো ক্রিস্টিন কিজুকাকে বিয়ে করেন। ক্রিস্টিন ক্যালিফোর্নিয়া কর্মচারী উন্নয়ন বিভাগের এক তত্ত্বাবধায়ক।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর