২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ১৭:০৮

নদীর বিলুপ্তপ্রায় মিষ্টি খরকি মাছ এখন পুকুরে

রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর:

নদীর বিলুপ্তপ্রায় মিষ্টি খরকি মাছ এখন পুকুরে

সময়ের সাথে নানাবিধ প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগসহ বিভিন্ন কারণে বিলুপ্তপ্রায় নদীর মিষ্টি ভাগ্না বা খরকি মাছের চাষ এখন পুকুরে হচ্ছে। পুকুরে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে ভাগ্না বা খরকি মাছের পোনা ও জাত উন্নয়নে সাফল্য পেয়েছেন দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বায়োলজি ও জেনেটিক্স (এফবিজি) বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. ইমরান পারভেজ নেতৃত্বে থাকা একদল গবেষক। 

বাটা মাছের বিকল্প হিসেবে মিশ্রচাষে এই খরকি মাছ চাষের বেশ সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বাটা ও সরপুটি মাছের চেয়ে এ মাছ অনেক বেশি সুস্বাদু এবং চাহিদা সম্পন্ন। দেশের উত্তরাঞ্চলের যে জায়গাগুলোতে ছয় মাসের বেশি পানি থাকে না, সে জায়গাতেও এ মাছ চাষ করা যাবে। এরপরেও চলমান গবেষণা সম্পন্ন হলে ঘরের ভিতর রেস সিস্টেমেও চাষ করা যেতে পারে। ইতোমধ্যে এ মাছকে ছড়িয়ে দিতে দিনাজপুর কাহারলে অবস্থিত হাই হ্যাচারিতে ব্রুড ডেপলোপমেন্টের কাজ চলছে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দেশের ১০টি মৎস্য হ্যাচারিতে পৌঁছে দেয়ার পরিকল্পনা করছেন তিনি। আগামী বছর থেকে বাণিজ্যিকভাবে চাষীরা ব্যাপকহারে এ মাছের পোনা পাবেন বলে জানান ড. ইমরান পারভেজ । 

কৃত্রিম উপায়ে যদি মাছটির পোনা উৎপাদন ও জাতের উন্নয়ন ঘটানো যায় তাহলে দেশের টেকসই মৎস্য উৎপাদন ও আমিষের চাহিদা পূরণে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে। চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি মৎস্যচাষীরা এই প্রজাতির মাছ চাষ করে আরও লাভবান হতে পারবেন। 

কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে উৎপাদিত ভাগ্না বা খরকি মাছের পোনা দেখতে গত ২২ সেপ্টেম্বর দিনাজপুর কারিতাস মৎস্য হ্যাচাবিতে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মু. আবুল কাসেম। সেখানে তিনি ড. ইমরান পারভেজ এর প্রকল্পের আওতাধীন পুকুরগুলো ঘুরে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে উৎপাদিত পোনা ও জাতের বিভিন্ন বিষয়ে খোঁজ নেন। এসময় হাবিপ্রবি’র কোষাধক্ষ্য প্রফেসর ড. বিধান চন্দ্র হালদার, রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. মো. সফিউল আলমসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক ছিলেন।

এসময় উপাচার্য প্রফেসর ড. মু. আবুল কাসেম বলেন, বিলুপ্ত প্রজাতির এই মাছ চাষের মাধ্যমে চাষীরা সফলতা লাভ করবে। এবং দেশের টেকসই মৎস্য উৎপাদনে এটি গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। 

হাবিপ্রবি’র ড. ইমরান পারভেজ বলেন, কৃষি গবেষণা কাউন্সিল ও ন্যাশনাল এগ্রো টেকনোলোজি ফেইজ -২ এর আর্থিক সহযোগিতায় ২০১৫ সাল থেকে বিলুপ্ত প্রায় প্রজাতির এই মাছের কৃত্রিম উপায়ে পোনা উৎপাদন ও জাত উন্নয়নের জন্য কাজ করে সফলতা পেয়েছি। বাজারে এ প্রজাতির মাছের চাহিদাও বেশি এবং বাজারমূল্যও বেশি। কেজি প্রতি ২৫০-৩৫০টাকা।

মাছের প্রজনন সম্পর্কে তিনি বলেন, মাছের জাত উন্নয়ন ও পোনা উৎপাদনের জন্য দেশের দিনাজপুর, বগুড়া, ময়মনসিংহ ও যশোর এই চারটি অঞ্চল থেকে মা-বাবা মাছ সংগ্রহ করে মাছের খাদ্যভাস, প্রজনন বায়োলজী, সময় নির্ণয় করা হয়। এরা একই প্রজাতি হওয়া সত্ত্বেও গবেষণায় দেখা যায় এরা নিজেদের মধ্যে একটা পার্থক্য বজায় রাখে। পোনা উৎপাদনের জন্য পিটুইটারী গ্রন্থির নির্যাস, এইচসিজি, কৃত্রিম হরমোন ওভারপ্রিম ইত্যাদি প্রয়োগের মাধ্যমে মাছকে প্রজননের জন্য প্রণোদিত করা হয়েছিল। এরপর বিভিন্ন অঞ্চলের মাছের মধ্যে ক্রস করে ইন্টার ও ইন্ট্রা ব্রিডিং ঘটানো হয়। এতে পিটুইটারী গ্রন্থির নির্যাসের মাধ্যমে প্রজননে দিনাজপুর-দিনাজপুর, দিনাজপুর- ময়মনসিংহ ও ময়মনসিংহ- ময়মনসিংহ মাছে বেশি সফলতা পাওয়া যায়। আর ৩২% প্রোটিন জাতীয় খাবার নিয়মিত প্রয়োগে এদের বর্ধন অনেক বেশি।

উল্লেখ্য, গবেষক দলের প্রধান ইনভেস্টিগেটর ফিশারিজ বায়োলজি ও জেনেটিক্স (এফবিজি) বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. ইমরান পারভেজ, কো ইনভেস্টিগেটর একোয়াকালচার বিভাগের প্রভাষক মৌসুমি সরকার ছন্দা। এছাড়াও প্রকল্পের সহযোগী হিসেবে রয়েছেন ড. মাহবুবুল হাসান এবং আশরাফুল আলম, রায়হান, রাশেদা , আরাফাত, সুজন, কাজল আরিফ, শোভনসহ মাস্টার্সে অধ্যয়নরত কয়েকজন শিক্ষার্থী।  


বিডি প্রতিদিন/২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর