বৃদ্ধ বাবা রিকশাচালক, মা স্থানীয় একটি কারুপণ্য কারখানার শ্রমিক। টানাটানির সংসার। নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে আলোকিত হয়েছেন আল আমিন হোসেন। ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে উলিপুর সরকারি কলেজ থেকে মানবিক শাখায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন তিনি।
আল আমিন উলিপুর পৌরসভার হায়াৎখাঁ এলাকার জহুরুল হকের (৫২) ছেলে। শত কষ্ট আর দরিদ্রতাকে হার মানিয়ে সন্তানের এমন সফলতায় উচ্ছ্বসিত জহুরুল-কল্পনা দম্পতি। এর আগে ২০২২ সালে এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে জিপিএ-৫ পান আল আমিন। তাকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে লেখাপড়ার জন্য দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপ শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করে।
আল আমিন হোসেনের বাবা জহুরুল হক বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ। জমিজমা বলতে দুই শতক বসতবাড়ি। অভাবের সংসারে ছোটবেলা থেকে সংগ্রাম করে আসছি। ১৫ বছর বাদাম বিক্রি করেছি। কখনো গ্রামে গ্রামে ফেরি করে দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে রিকশা চালাই। এখন বয়স হয়েছে, ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারি না। ঋণ করে ব্যাটারিচালিত একটি রিকশা বানিয়েছি, সেটিও পুরাতন হয়েছে। ওটা দিয়েই কোনোরকমে আয়-রোজগার করি। মানুষ ভাঙা রিকশায় উঠতে চায় না। এর মধ্যে ছেলেটা মেধাবী হয়েছে। কিন্তু অভাবের কারণে হয়তো আর পড়াতে পারব না।’
আল আমিনের মা কল্পনা বেগম বলেন, ‘ছয় মাস বয়সী কোলের সন্তান রেখে কারুপণ্যে যাই। তখন থেকেই কারুপণ্যে কাজ করি। সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ডিউটি করি। সেখানে তিন হাজার টাকা বেতন পাই। তাই দিয়ে কোনোরকমে টেনেটুনে সংসার চালাই। এর মধ্যে ছেলেটা অসুস্থ হয়েছিল। ধারদেনা করে চিকিৎসা করিয়েছি। বসুন্ধরা গ্রুপ আমার ছেলেটাকে শিক্ষাবৃত্তি দিয়েছিল, এ জন্য এইচএসসি পর্যন্ত লেখাপড়া করতে পেরেছে। এখন কিভাবে পড়ালেখা হবে এ চিন্তায় দিশাহারা।’
আল আমিন হোসেন বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপ আমাকে শিক্ষাবৃত্তির ব্যবস্থা করেছে। এ জন্য আমি ও আমার পরিবার বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতি আজীবন কৃতজ্ঞ। তারা আমাকে শিক্ষাবৃত্তির ব্যবস্থা না করে দিলে হয়তো পড়াশোনা করতে পারতাম না। উচ্চশিক্ষিত হয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করতে চাই।’
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত