শুক্রবার, ১৫ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা
ধর্মতত্ত্ব

ইসলাম সব ধরনের হত্যা ও বর্বরতার বিরুদ্ধে

মাওলানা আবদুর রশিদ

ইসলাম সব ধরনের হত্যা ও বর্বরতার বিরুদ্ধে

মহান আল্লাহপাক ঘোষণা করেন : ‘যে লোক ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো বিশ্বাসী মুমিনকে খুন করবে, তার পরিণাম ফল চিরকালীন দোজখবাস। আল্লাহ তার প্রতি ক্রুুদ্ধ হন, তাকে অভিশাপ দেন এবং তার জন্য ভয়ঙ্কর শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন।’ সূরা আননিসা-৯৩।

আল্লাহ আরও ঘোষণা দেন : ‘আর  যারা আল্লাহর সঙ্গে অপর কোনো প্রভুকে আহ্বান করে না, আল্লাহ কর্তৃক নিষিদ্ধ প্রাণকে যথার্থ কারণ ছাড়া হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না (আল্লাহর প্রিয় বান্দা তারাই)। আর যারা এসব করে, তারা মহাপাপী। বিচার দিবসে তাদের শাস্তি দ্বিগুণ করা হবে এবং সেথায় তারা অপমানিত হয়ে চিরকাল অবস্থান করবে। কিন্তু যারা তওবা করে বিশ্বাস স্থাপন করে তারা এবং নেক আমল করে উক্ত আজাব থেকে পরিত্রাণ পাবে।’ সূরা- আলফুরকান-৬৮-৭০।

আল্লাহপাক ঘোষণা করেন : ‘এ কারণেই আমি বনিইসরায়েলের প্রতি লিখে দিয়েছি, যে কেউ কোনো হত্যার বিনিময় অথবা পৃথিবীতে গোলযোগ সৃষ্টি করার অপরাধ ছাড়া কাউকে হত্যা করল, সে যেন সমগ্র মানবকুলকে হত্যা করল, আর যে কারও জীবন বাঁচাল সে যেন সমগ্র মানবকুলের জীবন বাঁচাল।’ সূরা-আলমায়েদা-৩২।

আল্লাহপাক আরও বলেন : ‘আর যখন জীবন্ত প্রোথিত কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হবে, কোন অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছিল?’ সূরা আত তাকবির-৮-৯।

রসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা সাতটি সর্বনাশা গুনাহ থেকে বিরত থাক।’ এ সাতটি গুনার ভিতর তিনি এটিও উল্লেখ করেছেন : আল্লাহ যাকে হত্যা করা অবৈধ ঘোষণা করেছেন, যথার্থ কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করা। বোখারি, মুসলিম, আবু দাউদ, নাসায়ি।

এক লোক নবী পাক (সা.)-এর সমীপে নিবেদন করল : আল্লাহর কাছে কোন পাপটি সবচেয়ে জঘন্য। তিনি বললেন : ‘কাউকে আল্লাহর সমান মনে করা অথচ তিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন।’ লোকটি বলল : তারপর কোনটি? তিনি উত্তর দিলেন : ‘তোমার জীবিকার অংশীদার হবে এ ভয়ে তোমার সন্তানকে মেরে ফেলা।’ সে আবার আরজ করল : তার পরে কোনটি? তিনি জওয়াব দিলেন : ‘পড়শির স্ত্রীর সঙ্গে জিনায় লিপ্ত হওয়া।’ অনন্তর এর সমর্থনে আল্লাহপাক ঘোষণা দিলেন : ‘যারা আল্লাহ ছাড়া আর কোনো মাবুদের ইবাদত করে না, আল্লাহর নিষিদ্ধকৃত হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না (তারাই প্রকৃত ইমানদার)।’ সূরা আলফুরকান-৬৮।

রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন : ‘যখন দুজন মুসলমান তরবারি (মারণাস্ত্র) নিয়ে পরস্পরের ওপর আক্রমণ করে, তখন হত্যাকারী ও নিহত দুজনই দোজখি হবে।’ আরজ করা হলো :  হত্যাকারীর পরিণতি তো বুঝলাম। কিন্তু নিহত ব্যক্তির এ পরিণতি হবে কেন? রসুল (সা.) বললেন : ‘কেননা সেও তার বিরোধী পক্ষকে হত্যা করতে চেয়েছিল।’ আহমদ, বোখারি, মুসলিম।

রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন : ‘আমার পরে তোমরা পরস্পরে হত্যাকারী কাফেরদের অনুরূপ হয়ে যেও না।’ বোখারি, মুসলিম।

তিনি আরও ইরশাদ করেন : ‘বান্দা অবৈধ রক্ত প্রবাহিত না করা পর্যন্ত (অর্থাৎ নিষিদ্ধ হত্যাকাণ্ড না ঘটানো পর্যন্ত) স্বীয় ধর্মের গণ্ডিতে অবস্থান করে।’ বোখারি, হাকাম।

তিনি আরও বলেন : ‘বিচার দিবসে সবার আগে মানুষ হত্যার বিচার করা হবে।’ —বোখারি, মুসলিম, তিরমিজি ও ইবনে মাজা।

নাসায়ি ও বায়হাকি বর্ণিত এক হাদিসে রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন : ‘কোনো মুমিনের হত্যাকাণ্ড আল্লাহর কাছে সারা দুনিয়া ধ্বংসের চেয়েও অধিক মারাত্মক।’ তিনি আরও ইরশাদ করেন— ‘জঘন্য কবিরা গুনাহ হচ্ছে আল্লাহর সঙ্গে শরিক করা, কাউকে হত্যা করা, জাহান্নাম অনিবার্জ হয় এমন মিথ্যা শপথ করা।’ বোখারি, মুসলিম, নাসায়ি।

তিনি অন্যত্র বলেন : ‘দুনিয়াতে যত অন্যায় হত্যাকাণ্ড ঘটবে, তার একাংশ আদম (আ.)-এর প্রথম পুত্র পাবে। কেননা সেই সর্বপ্রথম মানুষ হত্যার প্রচলন করেছে।’ বোখারি মুসলিম।

রসুলুল্লাহ (সা.) আরও ইরশাদ করেন : ‘যে কোনো অমুসলিম নাগরিককে খুন করবে, সে বেহেস্তের ঘ্রাণও পাবে না, যদিও জান্নাতের ঘ্রাণ চল্লিশ বছরের পথের দূর থেকে পাওয়া যাবে।’ বোখারি।

মুসলিম দেশের অমুসলিম নাগরিক হত্যার পরিণতিই যদি হয় এমন ভয়াবহ, তবে মুসলমান হত্যা কীভাবে সিদ্ধ হবে? রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন : ‘সাবধান! যে এমন কোনো আশ্রিত অমুসলিমকে হত্যা করে, আল্লাহ ও তার রসুল (সা.) যার দায়িত্ব নিয়েছেন, সে আল্লাহর জিম্মা বা দায়িত্ব খর্ব করল, সুতরাং সে বেহেস্তের সুঘ্রাণও পাবে না, যদিও পঞ্চাশ বছরের দূর থেকে তার ঘ্রাণ পাওয়া যায়।’ তিরমিজি।

রসুল (সা.) অপর এক হাদিসে বলেন : যে লোক কোনো কথার জন্য কোনো মুসলমানকে হত্যায় সহায়তা করে, তার কপালে ‘আল্লাহর করুণা থেকে মাহরুম’ এ কথা লিখিত অবস্থায় আল্লাহর সমীপে উপস্থিত করা হবে। মুসনাদে আহমদ।

হজরত মুজাবিয়া (রা.) বলেন : আল্লাহ সব ধরনের পাপ ক্ষমা করবেন কিন্তু কুফুরি অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী ও স্বেচ্ছায় মুমিন বান্দাকে হত্যাকারীর পাপ ক্ষমা করবেন না।  নাসায়ি, হাকেম।

সর্বশেষ খবর