দশম শতকের পর স্পেনে মুসলিম শাসনের অবনতি ঘটে। উত্তর স্পেনের খ্রিস্টান রাজ্যগুলো ইউরোপ মহাদেশ থেকে অভিবাসী গ্রহণ করে শক্তিশালী হয়ে ওঠে এবং ধীরে ধীরে দক্ষিণে অগ্রসর হয়ে উপদ্বীপটি নিয়ন্ত্রণে নেয়। ১৪৯২ সালে স্পেনের শেষ মুসলিম রাজ্য গ্রানাডা দখলের মধ্য দিয়ে এই প্রক্রিয়ার সমাপ্তি ঘটে। এই খ্রিস্টান রাজ্যগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল কাস্তিল, আরাগন এবং পর্তুগাল। এদের মধ্যে কাস্তিল ছিল সবচেয়ে বড় ও শক্তিশালী। মধ্যযুগে এই কাস্তিল রাজ্য ছিল ক্যাথলিক, কাস্তিলীয়ভাষী স্পেনের প্রাণকেন্দ্র।
১৫শ শতকের শেষ নাগাদ স্পেনে বিদেশিদের অভিবাসন শেষ হয়ে যায়, কিন্তু মিলনস্থল হিসেবে স্পেনের গুরুত্ব বজায় থাকে। ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল ও উত্তর ইউরোপের মধ্যে সামুদ্রিক বাণিজ্যের মধ্যস্থল হিসেবে স্পেন একটি সুবিধাজনক অবস্থানে অবস্থিত ছিল। ১৫শ শতকের শেষ দিকে স্পেনের অধীনস্থ নাবিকরা সমুদ্র অভিযানে বেরিয়ে পড়েন এবং আমেরিকা মহাদেশ আবিষ্কার করেন। তারা সেখানে প্রচুর রুপা আবিষ্কার করেন। আমেরিকা থেকে আনা রুপা ইউরোপের সম্প্রসারণশীল বিশ্ব বাণিজ্যের কেন্দ্রে স্পেনকে স্থাপন করে। একই সময় রাজবংশগুলোর মধ্যে বিবাহ এবং কূটনীতির সুবাদে স্পেন এক বিরাট ইউরোপীয় সাম্রাজ্যে নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করে। উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা এবং ইউরোপ মহাদেশে বিস্তৃত স্পেনের সাম্রাজ্য ১৯শ শতকের শুরু পর্যন্ত টিকে থাকে। ফরাসি বিপ্লব (১৭৮৯-১৭৯৯) এবং নেপোলিয়নীয় যুদ্ধগুলোর (১৭৯৯-১৮১৫) পর স্পেনের সাম্রাজ্য বিলীন হয়ে যায়।
১৯শ শতকের পুরোটাজুড়েই স্পেনীয়রা তাদের সরকারের গঠন এবং রাজনীতিতে জনসাধারণের অংশগ্রহণ নিয়ে সংঘাতে লিপ্ত হয়। এই সময় স্পেন ধীরে ধীরে শিল্প বিপ্লবের অংশীদার হয় এবং সম্প্রসারমান অর্থনীতি নতুন নতুন রাজনৈতিক শক্তির সৃষ্টি করে। তা সত্ত্বেও একক কোনো রাজনৈতিক দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি। অনেক স্পেনীয় এ নৈরাজ্যের মধ্যে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করে এবং এর ফলে সেটিও একটি রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়।
বিংশ শতাব্দীর শুরুতে স্পেনের সরকার কাগজে-কলমে গণতান্ত্রিক হলেও আসলে একটি বিশেষ শ্রেণির হাতে স্পেনের রাজনৈতিক ক্ষমতা কুক্ষিগত ছিল। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ক্রমে সংঘর্ষ ও নৈরাজ্য ছড়িয়ে পড়ে। ১৯২৩ সালে জেনারেল মিগেল প্রিমো দে রিবেরা নিজেকে একনায়ক ঘোষণা করেন। তিরিশ দশকের শুরুতে দ্বিতীয় স্পেনীয় প্রজাতন্ত্রে গণতন্ত্র নিয়ে আবার পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয় এবং অনেক গুরুত্বপূর্ণ গণতান্ত্রিক সংস্কার কাজ বিস্ময়কর দ্রুততায় সম্পন্ন হয়। কিন্তু ১৯৩৬-১৯৩৯ সালের স্পেনীয় গৃহযুদ্ধের কারণে এসব কিছু চাপা পড়ে যায়।
জামিল হাসান।