অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয় অর্থনীতি সংস্কারে বিস্তর ঢাকঢোল পেটালেও রপ্তানি খাতের উন্নয়নে তেমন কিছু করে উঠতে পারেনি। ১৫ মাসে একটা নতুন উদ্যোগও নেওয়া হয়নি। বিগত দিনে একেক সরকার নিজ নিজ বিবেচনায় বর্ণিল স্বপ্নের জাল বুনেছে। পরিকল্পনার ফানুস উড়িয়েছে। সম্মোহক গালগল্প শুনিয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পেরিয়ে এসেও রপ্তানি বহুমুখী হয়নি। বাস্তবচিত্র হচ্ছে, দেশের রপ্তানিপণ্য তালিকায় প্রায় সোয়া শ পণ্য থাকলেও শুধু তৈরি পোশাক এবং এ সংশ্লিষ্ট খাত থেকে আসে প্রায় ৮৪ শতাংশ। অন্য দশটি পণ্য থেকে আসে ৮ শতাংশের মতো রপ্তানি আয়। এর বাইরে শতাধিক পণ্য রপ্তানি হয় খুবই সামান্য পরিমাণ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রকমারি বাংলাদেশি পণ্যের আশাব্যঞ্জক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) রপ্তানি বহুমুখীকরণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি। ১৭ বছর আগে ‘এক জেলা এক পণ্য’ ধারণা সামনে রেখে একটা উদ্যোগ নিয়েছিল ইপিবি। সে উদ্যোগ বাস্তবায়নে কয়েকটি জেলায় বিশেষ পণ্যের খোঁজও করা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে তার সুফল পাওয়া যায়নি। এ প্রকল্পে ব্যর্থতার কারণ না খুঁজে, গত বছরের এপ্রিলে ‘এক গ্রাম এক পণ্য’ ধারণা নিয়ে নতুন একটা উদ্যোগ নেওয়া হয়। এক বছরের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে এই উদ্যোগ নেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গ্রামওয়ারি পণ্য নির্বাচনের জন্য জেলা প্রশাসকদের চিঠিও দেওয়া হয়েছিল। সরকার পতনের পর এ নিয়ে সব আলোচনা বন্ধ হয়ে যায়। আজও তা আর আলোর মুখ দেখেনি। অথচ বিভিন্ন দেশে এরকম প্রকল্প, রপ্তানিপণ্যের বহুমুখিতা সৃষ্টিতে সক্ষম হয়েছে। তবে উল্লেখিত উদ্যোগ-প্রচেষ্টায় এটা অন্তত স্পষ্ট হয় যে রপ্তানি বহুমুখীকরণে সরকারের সদিচ্ছা আছে। কিন্তু বিষয়টির বাস্তবায়ন সময়সাপেক্ষ এবং তার জন্য প্রয়োজন উদ্যোগ ও চেষ্টার নিরবচ্ছিন্ন ধারাবাহিকতা। দেশের রপ্তানিযোগ্য অপ্রচলিত রকমারি পণ্য চিহ্নিত করে, সেসবের বর্ণাঢ্য উপস্থাপন চাই বিশ্বব্যাপী ক্রেতাসমাজের সামনে। ভোক্তা আকর্ষণ ও বিপণনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে হবে বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোর। তার নীতিগত নির্দেশনা দেবে সরকার। এদিকে দেশে সেসব পণ্যের উৎপাদনে উৎসাহ, প্রণোদনা ও প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা দিতে হবে। সরকারের সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার সমন্বিত প্রচেষ্টায়, তৈরি পোশাক ছাড়াও, বিভিন্ন বিচিত্র খাতের পণ্য রপ্তানি বৃদ্ধি পাক এবং তা জাতীয় অর্থনীতিতে পুষ্টি জোগাক।