রবিবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

পাটের জিন আবিষ্কার যুগান্তকারী অর্জন

নিজস্ব প্রতিবেদক

পাটের জীবনরহস্য বা জিন নকশা (জিনোম সিকোয়েন্স) উন্মোচন করে পাটকে শুধুই বাংলাদেশের করে দিয়েছেন একদল বিজ্ঞানী। এর মাধ্যমে শুরু হয়েছে সোনালি আঁশ পাটের নতুন স্বপ্নযাত্রা। এখন পাটের গুণগতমান ও বিপুল মাত্রায় উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হবে। উদ্ভাবন করা যাবে বাংলাদেশের আবহাওয়া ও প্রয়োজন অনুযায়ী পাটের নতুন জাত। বিশ্বে যে দেড় ডজন উদ্ভিদের জীবনরহস্য উন্মোচন করা সম্ভব হয়েছে, তার মধ্যে একটি বাংলাদেশেরও। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বাইরে চীন ধানের এবং মালয়েশিয়া রাবারের জীবনরহস্য উন্মোচনের সফলতা দেখিয়েছে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল কোনো দেশের বিজ্ঞানীদের এ সাফল্য যে বড় অর্জন তার স্বীকৃতি ইতিমধ্যেই এসেছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্লাটফর্ম থেকে। পাটের জীবনরহস্য উন্মোচনের গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন বাংলাদেশি বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলম। আর্থিক সহায়তা দিয়েছে বাংলাদেশের কৃষি মন্ত্রণালয়। অবশ্য বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলম এর আগে ২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে পেঁপে ও ২০০৯ সালে মালয়েশিয়া সরকারের হয়ে রাবারের জীবনরহস্য উন্মোচনের গবেষণায় নেতৃত্ব দেন। মাকসুদুল আলম কয়েক বছর ধরে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছিলেন। সেখানে বসেই তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে পাট নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। ২০০৯ সালে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে মাকসুদুল আলমকে দেশে এসে গবেষণার অনুরোধ জানানো হয়। ২০১০ থেকে ঢাকায় পুরোদমে শুরু হওয়া গবেষণায় সে বছরই সাফল্য আসে। সংবাদ সম্মেলন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সাফল্যের কথা জানান দেশবাসীকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগ, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই) ও বেসরকারি তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক সংস্থা ডাটা সফট যৌথভাবে গবেষণার কাজটি করেছে। গবেষণার তথ্য বিশ্লেষণ ও কারিগরি সহায়তা পাওয়া গেছে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব হাওয়াই ও ইউনিভার্সিটি সায়েন্স মালয়েশিয়ার কাছ থেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুজীব বিভাগের ১১ জন গবেষক ও ডাটা সফটের ২০ জন তথ্যপ্রযুক্তিবিদ প্রায় দুই  কোটি তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের কাজগুলো করেছেন। শাহ্জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও ডাটা সফটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব জামান তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক কাজগুলো তত্ত্বাবধান করেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে বিশেষ করে ইউরোপের বাজারে পলিথিন, প্লাস্টিক ও কৃত্রিম তন্তুজাত পণ্যের ব্যবহার কমে আসছে। প্রাকৃতিক আঁশের পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে সব জায়গায় একই রকম উন্নতমানের পাট উৎপাদনের উপযোগী জাত উদ্ভাবন করা সম্ভব হবে। এর আঁশ দিয়ে কাপড় তৈরির উপযোগী মিহি সুতাও তৈরি করা যাবে।

সর্বশেষ খবর