প্রধানমন্ত্রী পদে এক ব্যক্তি দুই মেয়াদের বেশি থাকতে পারবেন না- এমন বিধান করার বিষয়ে সমর্থন জানিয়েছেন দেশের ৯৬ শতাংশ ভোটার। ৫৩ শতাংশ ভোটার মনে করেন অন্তর্বর্তী সরকারকে দুই বছর বা তারও কম সময় থাকতে হবে। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির (এনএসইউ) সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্নেন্স (এসআইপিজি) পরিচালিত জাতীয় জরিপে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘জাতীয় জরিপ-২০২৪ : বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে নাগরিকদের প্রত্যাশা’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব তথ্য জানায় গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি। সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নির্বাচনি ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ও সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সচিব ড. বদিউল আলম মজুমদার। উপস্থিত ছিলেন এসআইপিজির উপদেষ্টা সালাউদ্দিন এম আনিসুজ্জামান, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নাভিন মুর্শিদ।
এসআইপিজি জানায়, গত ৯ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের আটটি বিভাগের ১৭টি জেলায় মোট ১ হাজার ৮৬৯ জনের ওপর এ জরিপ করা হয়। এটি জুলাই গণ অভ্যুত্থান-পরবর্তী সর্বপ্রথম সরাসরি পরিচালিত একটি জাতীয় প্রতিনিধিত্বমূলক জরিপ। উত্তরদাতাদের ৬৩ শতাংশ মধ্যবয়সী (২৮-৫০ বছর), ২২ শতাংশ জেনারেশন-জেড (১৮-২৭ বছর) এবং ১৪ শতাংশের বয়স ৫০ বছরের বেশি। এ ছাড়া জরিপের উত্তরদাতাদের ৫৪ শতাংশ শহরাঞ্চল ও ৪৬ শতাংশ গ্রামীণ অঞ্চলের বাসিন্দা। উত্তরদাতাদের ৯৬ শতাংশ প্রধানমন্ত্রী পদে এক ব্যক্তি দুই মেয়াদের বেশি থাকতে পারবেন না, এমন বিধান করার বিষয়ে সমর্থন জানিয়েছে। ৪৬ শতাংশ বিশ্বাস করেন উল্লেখযোগ্য সাংবিধানিক পরিবর্তন প্রয়োজন। এ ছাড়া ১৬ শতাংশ সম্পূর্ণ নতুন সংবিধানের পক্ষে তাদের মত জানিয়েছেন। উত্তরদাতাদের প্রায় ৫৩ শতাংশ মনে করেন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ দুই বছর বা তার কম হওয়া উচিত, যেখানে ৪৭ শতাংশ মনে করেন এই সরকারকে তিন বছর বা তার বেশি সময় ক্ষমতায় থাকতে হবে। গবেষণা থেকে জানা যায়, উত্তরদাতাদের ৪৬ শতাংশ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে অনিশ্চিত। যেখানে ৫৪ শতাংশ মূলধারার রাজনীতিতে তাদের আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
আরও জানা যায়, নাগরিকরা অন্তর্বর্তী সরকারের বর্তমান অবস্থা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বিশেষ করে আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে তাদের বন্যা ব্যবস্থাপনার প্রশংসা করেছেন। বাংলাদেশ পুলিশ, শিক্ষাব্যবস্থা, রাজনৈতিক ব্যবস্থা এবং নির্বাচনি ব্যবস্থা সংস্কারের বিষয়েও নাগরিকদের আকাক্সক্ষা প্রকাশ পেয়েছে। বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বর্তমান সরকারের প্রতি মানুষের ব্যাপক আস্থা ও আকাশচুম্বী প্রত্যাশার সৃষ্টি হয়েছে, যা এই জরিপেও উঠে এসেছে। এর বিপরীতে এই প্রত্যাশার ব্যবস্থাপনা করাটাই সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি আরও বলেন, আগেও দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। কিন্তু তার সুফল পাওয়া যায়নি। এর বড় কারণ দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি। এই রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তন না হলে রাজনৈতিক দলগুলো যেসব অঙ্গীকার করে ক্ষমতায় গিয়ে সেসব বাস্তবায়ন না করলে সবই হবে প-শ্রম। রাজনৈতিক দলগুলোকেও গণতান্ত্রিক হতে হবে। বদিউল আলম মজুমদার আশা প্রকাশ করেন, সংস্কার কমিশনগুলো সুপারিশ দেওয়ার পর সরকার হয়তো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করবে। এর পর হয়তো একটি রোডম্যাপ ও নির্বাচনের তারিখ ঠিক করা হবে।