বৈরুতে গত শুক্রবার ইসরায়েলি বোমা হামলায় নিহত হন হিজবুল্লাহপ্রধান হাসান নাসরুল্লাহ। নিশ্চিত গোয়েন্দা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর ওই হামলায় নাসরুল্লাহ ছাড়াও নিহত হন দলের বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা। মাটির ৬০ ফুট গভীরে এক বাঙ্কারে থাকার পরও রক্ষা পাননি হিজবুল্লাহর এই শক্তিশালী নেতা।
সিএনএন জানায়, ওই সময় দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের সঙ্গে একটি বৈঠকে ছিলেন নাসরুল্লাহ। তিনি যে জায়গাটিতে অবস্থান করছিলেন সেটি দক্ষিণ লেবাননের একটি বাঙ্কারে। আর সেখানে থাকার এই খবরটি ইসরায়েলকে দেন এক ইরানি গুপ্তচর। ওই বাঙ্কারে হামলার জন্য ইসরায়েল ৮০ টন বিস্ফোরক ব্যবহার করেছিল। এর সঙ্গে ছিল ৮৫টি বাঙ্কার বিধ্বংসী বিস্ফোরক। ওইসব বিস্ফোরক মাটির ৩০ মিটার ও ৬ মিটার পুর কংক্রিটের নিচে কোনো বস্তুতে ধ্বংস করতে সক্ষম। ইসরায়েল বিমানবাহিনীর মতে সবকিছুই ছিল নিখুঁত। আগাম খবর ছিল, সঙ্গে ছিল বিমানবাহিনীর নিখুঁত অপারেশন। হিজবুল্লাকে কাবু করার জন্য শুক্রবারের অপারেশনের আগে ২ হাজার বার হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। হিজবুল্লার সামরিক লক্ষ্যবস্তুর ওপরে বেছে বেছে হামলা চালানো হয়। জানা গেছে, বহুদিন ধরেই হিজবুল্লাহ ও ইরানের বিরুদ্ধে হামলার প্রস্তুতি চালিয়ে আসছিল মোসাদ। ২০০৮ সালে মোসাদ ও সিআইএ একসঙ্গে কাজ করে হিজবুল্লাহ নেতা ইমাদ মুগলিয়াকে হত্যা করে। ২০২০ সালে তাদের শিকার ইরানি জেনারেল কাসিম সুলেমানি।
ইসরায়েলকে নাসরুল্লাহর অবস্থান জানিয়েছিলেন ইরানি গুপ্তচর : ফরাসি সংবাদমাধ্যম লে প্যারিজিয়েন জানিয়েছে, এই বিমান হামলার কয়েক ঘণ্টা আগে ইসরায়েলকে নাসরুল্লাহর অবস্থান সম্পর্কে গোপন তথ্য জানিয়ে দেন এক ইরানি গুপ্তচর। এর পরই ইসরায়েল তাকে লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায়। লেবাননের নিরাপত্তা সূত্রের বরাতে সংবাদমাধ্যমটি আরও জানিয়েছে, নাসরাল্লাহ শুক্রবার বৈরুতে হিজবুল্লাহর সদর দপ্তরে উচ্চপদস্থ কমান্ডারদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন নাসরুল্লাহ। তিনি যখন মাটির নিচে অবস্থিত সদর দপ্তরে প্রবেশ করেন তার কিছুক্ষণ পরই বিমান হামলা চালানো হয়। এতে ব্যবহার করা হয় বাঙ্কার বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র। যা হিজবুল্লাহর সদর দপ্তরকে ধসিয়ে দেয়।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, ২০০৬ সালের যুদ্ধের পর ইসরায়েল লেবাননের প্রতিরোধ যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করে। গোপন তথ্য সংগ্রহের জন্য তারা বিভিন্নভাবে গুপ্তচর নিয়োগ করে। গোয়েন্দাদের নতুন দলটি তৈরি করা হয় সেনাবাহিনীর মধ্য থেকে। যেন সেনা এবং বিমানবাহিনীর কাছে তারা সেগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে পৌঁছে দিতে পারে।
পাশাপাশি ইসরায়েলি সিগন্যাল গোয়েন্দা এজেন্সি ইউনিট অনেক অত্যাধুনিক সাইবার টুলস তৈরি করে। যেগুলো দিয়ে খুব সহজেই হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনসহ অন্যান্য ডিভাইসে আঁড়ি পাতা যায়। সম্প্রতি তারা প্রতিরোধ যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে যেসব সাফল্য পেয়েছে সেগুলো এসব গোয়েন্দা কার্যক্রমের কল্যাণেই এসেছে।