শরীরের অন্যতম জটিল অঙ্গ হৃদযন্ত্রের কাজকর্মের সব রহস্যের হদিস এখনো মেলেনি বিজ্ঞানে। এত দিন মনে করা হতো, হার্টের মধ্যে যে স্নায়ুর বিন্যাস রয়েছে, তা কাজ করে মস্তিষ্কের নির্দেশ মেনে।
অথচ সাহিত্যে হৃদয় নিয়ে উপমার শেষ নেই। ভালোবাসা মানেই হৃদয়। কিন্তু বিজ্ঞান অবশ্য বরাবরই বলে, হৃদয় আসলে হার্ট নয়, হৃদয় কিংবা মন সব কিছুর অস্তিত্বই আদতে মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রিত। এবার অবশ্য একটি ইউরো-মার্কিন গবেষণা অনেকাংশে মিলিয়ে দিল সাহিত্য আর বিজ্ঞানকে। গবেষকরা বললেন, মাথায় থাকা মস্তিষ্কের নির্দেশ ছাড়াই বেশ কিছু কাজ নিজে থেকেই করতে পারে হার্ট। কারণ, হার্টের যে নিজস্ব ‘ব্রেন’ আছে।
বিখ্যাত বিজ্ঞান পত্রিকা ‘নেচার কমিউনিকেশনস’ জার্নালে বেরোনো গবেষণাপত্রে দাবি করা হয়েছে, হৃদযন্ত্রের মধ্যেই থাকে হার্টের একটি নিজস্ব ব্রেন। মাথায় থাকা মস্তিষ্কের নির্দেশ ছাড়াই সে বেশ কিছু কাজ নিজে থেকেই করতে পারে হার্ট ও তার নিজস্ব ‘ব্রেন’র কল্যাণে। এই গবেষণাটি করেছেন সুইডেনের ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউট এবং নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক। তারা বলছেন, হার্টের স্নায়ুতন্ত্র মস্তিষ্ক থেকে নির্দেশ না পেলেও হার্টের নিজস্ব ছন্দ তৈরি করতে পারে। এমনকি মস্তিষ্কের নির্দেশের ছাড়াও নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। অর্থাৎ, হার্ট নিজেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম। গবেষকদের দাবি, এটি হার্টের ‘নিজস্ব ছোট মস্তিষ্ক’-এর মতো। চিকিৎসকরা বলছেন, এই আবিষ্কার নতুন দিগন্ত খুলে দিল কার্ডিওলজিক্যাল চিকিৎসায়।
বিশেষ এই গবেষণার দাবি, বিজ্ঞানীরা এই গবেষণাটি করার সময় বিশেষ এক প্রজাতির মাছ ‘জেব্রাফিশ’র হার্ট পরীক্ষা করে দেখেন। অদ্ভুতভাবে এই মাছের হার্টের গঠন এবং মানুষের হার্টের গঠনের মধ্যে অনেক মিল রয়েছে। গবেষকরা জানিয়েছেন, হার্টের একটি বিশেষ অংশ হলো সাইনোট্রিয়াল প্লেক্সাস (এসএপি)। এই বিশেষ অংশটি হার্টের পেসমেকার হিসাবে কাজ করে। হার্টের এই অংশে বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন ধরনের নিউরনের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছেন। এই নিউরনগুলো বিভিন্ন নিউরোট্রান্সমিটার ব্যবহার করে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে। যেমন এসিটাইলকোলিন, গ্লুটামেট এবং সেরোটোনিন, যা হৃদস্পন্দনের ওপর স্থায়ীভাবে নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে। -সাইন্স ডেইলি