সুদীর্ঘ ইতিহাসের দেশ সিরিয়া। বিশ্বের প্রথম সভ্যতার শহর দেশটির রাজধানী দামেস্ক। সেই দেশ গৃহযুদ্ধের অভিশাপে ভুগল কয়েক দশক। আপাতত স্বস্তি ফিরেছে। তবে সেই স্বস্তি কতদিন স্থায়ী হবে তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই গেছে। তারপরও দীর্ঘ গৃহযুদ্ধের ক্লান্তি ও হতাশা সরিয়ে বিধ্বস্ত দেশকে নতুন করে সাজানোর ডাক দিয়েছেন সিরিয়ায় ক্ষমতা দখলকারীরা। যাদের বলা হচ্ছে বিদ্রোহী। এবার তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে দেশের কাজে লেগে পড়েছে লাখো যুবক। রাজধানী দামেস্কের ধ্বংসস্তূপ সরাতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই পথে নেমে পড়েছেন অনেক তরুণ।
প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতনের পর তরুণ প্রজন্মকে দেশের পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেওয়ার ডাক দিয়েছেন বিদ্রোহী হায়াত তাহরির আল শাম-এইচটিএস নেতৃত্ব। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সবাইকে এগিয়ে আসতে অনুরোধ করেছেন তারা। পাশাপাশি আসাদ জামানায় যারা নিরীহ নাগরিকদের ওপর অত্যাচার করেছে তাদের ছাড়া হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন বিদ্রোহীদের নেতা মুহাম্মদ আল জোলানি ও অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী মুহাম্মদ আল বশির।
এর মধ্যেই দামেস্কের কুখ্যাত কারাগারগুলো থেকে বন্দিদের মুক্তি দেওয়া শুরু করেছে নতুন সরকার। বিদ্রোহীদের সরকারের মুখপাত্র ওবাইদা আর্নাউত এদিন বলেন, ‘সংবিধান সংশোধন ও পর্যালোচনার জন্য একটি মানবাধিকার ও বিচারবিভাগীয় কমিটি গড়া হবে।’ আসাদের পলায়নের পর থেকেই বন্দিদের খোঁজে বিভিন্ন জেল ও মর্গে ভিড় করছেন আত্মীয়রা। রাজনৈতিক কারণে হাজার হাজার মানুষকে বন্দি রেখে নৃশংস অত্যাচার চালানোর জন্য সিরিয়ার কুখ্যাত জেলগুলোর বাইরে ভিড় বাড়ছে বহু মানুষের। তার মধ্যে সবচেয়ে কুখ্যাত সেদানিয়া জেলের বেশকিছু ছবি প্রকাশ্যে আসার পর শিউরে উঠেছে গোটা বিশ্ব। সিরিয়ায় জাতিসংঘের রাষ্ট্রদূত গ্যের পিডারসন বলেন, ‘ওই ছবিগুলো থেকেই স্পষ্ট কী অবর্ণনীয় যন্ত্রণা, অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে অসংখ্য বন্দি ও তাদের প্রিয়জনদের।’ এর মধ্যেই বৃহস্পতিবার দামেস্কের একটি জেল থেকে উদ্ধার করা হয় সাত মাস আগে নিখোঁজ মার্কিন নাগরিক ট্র্যাভিস টিমারম্যানকে। গত মে মাসে একটি ধর্মীয় সম্মেলনে যোগ দিতে সিরিয়ায় গিয়েছিলেন তিনি। এদিন বিদ্রোহীরা একটি জেল থেকে ট্র্যাভিসকে উদ্ধার করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন জানিয়েছেন, তাকে দেশে ফেরানোর চেষ্টা করছে ওয়াশিংটন।
এদিকে দেশটি যখন নতুন করে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে তখন বাধ সেজেছে ইসরায়েল। এই দখলদার দেশটি এর মধ্যেও সিরিয়ার বিভিন্ন এলাকায় লাগাতার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক চাপ উপেক্ষা করে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলছেন, সিরিয়ার দখল করা অংশ থেকে সরে আসবেন না তিনি।
বিদ্রোহীদের আক্রমণে নতুন করে ১১ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত : আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার লক্ষ্যে বিদ্রোহীদের আক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় ১১ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। জাতিসংঘের মানবিক সংস্থা এ তথ্য জানিয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে লড়াই অব্যাহত। এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সমন্বয়ের কার্যালয় (ওসিএইচএ) বলেছে, ‘২৭ নভেম্বর হামলা শুরুর পর থেকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে ১১ লাখ মানুষ নতুনভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। তাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।’ বাস্তুচ্যুতদের মধ্যে ১ লাখেরও বেশি মানুষ উত্তর সিরিয়ার কুর্দিশাসিত এলাকায় সশস্ত্র গোষ্ঠীদের ক্রমবর্ধমান লড়াই ও প্রতিশোধমূলক হামলার ভয়ে পালিয়ে গেছে। আলেপ্পোর উত্তর-পূর্বে মানবিজ শহর ও পূর্ব সিরিয়ার মিশ্র আরব এবং কুর্দি শহর দেইর ইজ্জোরে প্রাথমিকভাবে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে বলে মনে হচ্ছে। বিবিসি, দ্য গার্ডিয়ান