ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজতে থাকা কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয় থেকে সংস্থাটির গাড়িতে তাদের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়। আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামের বাবা বদরুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, গতকাল ভোরে সমন্বয়কদের পরিবারকে ফোন করে তাদের কার্যালয় থেকে নিয়ে যেতে বলা হয়। পরে সকালে ছয় সমন্বয়কের স্বজনরা ডিবি কার্যালয়ে যান। দুপুরের দিকে সংস্থাটির কালো রঙের একটি গাড়িতে করে স্বজনসহ তাদের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। ছয় সমন্বয়ককে ডিবি থেকে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি জানিয়ে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, তারা (সমন্বয়করা) আমাদের কাছে নিরাপত্তা চেয়েছিলেন। এ ব্যাপারে জিডিও করা হয়েছিল। এখন তারা বলেছেন, তাদের আর নিরাপত্তার প্রয়োজন নেই, যখন তারা চলে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন, চলে যেতে আমরা কোনো বাধা দেইনি। তারা চলে গেছেন। মন্ত্রী বলেন, নিরাপত্তার জন্য ছয়জনকে (সমন্বয়ক) যে ডিবি অফিসে নেওয়া হয়েছে, সেটাকে চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্ট ডিভিশনে একটা মামলা করা হয়েছিল। হাই কোর্টে মামলাটি চলাকালীন শুনেছি যে, একজন বিচারপতি অসুস্থ হিসেবে ছুটি নিয়েছেন। ওই বিচারক ছুটিতে থাকায় সেই মামলাটির শুনানি আজও (গতকাল) হবে না। এর আগে, গত শুক্রবার বিকালে রাজধানীর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে নাহিদ ইসলামসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন সমন্বয়ককে ডিবি হেফাজতে নেওয়া হয়।
সেদিন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) সদ্য বদলি হওয়া মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানান, নিরাপত্তাজনিত কারণে তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়েছে। নাহিদ ছাড়া অন্য দুই সমন্বয়ক হলেন- আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের মজুমদার। তারা তিনজনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। পরদিন সন্ধ্যায় সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকেও কার্যালয়ে নেওয়া হয়। এরপর রবিবার ভোরে মিরপুরের এক আত্মীয়ের বাসা থেকে তুলে আনা হয় নুসরাত তাবাসসুমকে। এরপর থেকে তারা মিন্টো রোডে ডিবির কার্যালয়ে ছিলেন। ডিবিতে থাকা অবস্থায় এক ভিডিওবার্তায় আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেন এই ছয় সমন্বয়ক। তবে তাদের দিয়ে জোর করে এই ঘোষণা দেওয়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন অন্য সমন্বয়করা। পরে তাদের সঙ্গে এবং তাদের পরিবারের সঙ্গে দুই দফা খাওয়া-দাওয়ার ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করে আবারও আলোচনায় আসেন মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন উচ্চ আদালতও। তাদের ছেড়ে দেওয়া সংক্রান্ত একটি রিটের শুনানিতে হাই কোর্ট মন্তব্য করেন, ডিবি অফিসে যাকে তাকে ধরে নিয়ে যাবেন, তারপর খাবার টেবিলে বসাবেন। এভাবে জাতির সঙ্গে মশকরা করবেন না। এদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে ১৪ দলীয় জোটের নেতারা মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের এ ধরনের কর্মকান্ডের সমালোচনা করেন। এরই মধ্যে বুধবার বিকালে হারুনকে ডিবি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।