বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার মধ্যে ২ কোটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ নানা ধরনের মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত। এর মধ্যে ৯২ শতাংশই চিকিৎসার বাইরে। মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নতুন করে প্রভাব ফেলেছে সাম্প্রতিক ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানের সময়ে চলমান রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা। এ সময় ৮০০-এর বেশি মানুষ নিহত হন। আহত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন প্রায় ২০ হাজার মানুষ। এদের অনেকে এখনো চিকিৎসাধীন আছেন। সারা দেশে কমপক্ষে ৬৭ জন শিশু-কিশোর নিহত হয়েছে। এ ছাড়াও কোনো না কোনো নির্যাতনের শিকার হয়েছে এমন ছাত্র-জনতার সংখ্যা অনেক। এদের অনেকেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হওয়ার মতো অবস্থার মধ্য দিয়ে গেছে। যা স্বল্পমেয়াদি থেকে দীর্ঘমেয়াদি মানসিক সমস্যা তৈরি করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘মানসিক স্বাস্থ্য সংকট মোকাবিলা ও সঠিক ইকোসিস্টেম নিশ্চিতকরণে সরকারের ভূমিকা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। বেসরকারি সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশন আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলন থেকে দেশের মানসিক স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে অন্তর্বর্তী সরকারের বিবেচনার জন্য ছয় দফা প্রস্তাবনা পেশ করা হয়। এগুলো হচ্ছে- মানসিক স্বাস্থ্যসেবাকে গণমানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে অভিজ্ঞ মানসিক স্বাস্থ্য পেশাজীবীদের সমন্বয়ে টাস্কফোর্স তৈরি, জুলাই গণ অভ্যুত্থানে যেসব ছাত্র-জনতা আহত হয়েছেন এবং মানসিকভাবে বিপর্যস্ত তাদের তালিকা তৈরি করে মানসিক সেবা দেওয়া। আন্দোলনে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের সরকারি/বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় মানসিক সেবা নিশ্চিত করা। প্রাথমিক মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী এবং মনোবিজ্ঞানী/মনোচিকিৎসকদের সমন্বয় করে সব জেলা-উপজেলার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে মানসিক স্বাস্থ্য কর্নার তৈরি করা। স্কুল, কলেজ আলিয়া-কওমি মাদরাসা এবং বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সব শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের জন্য ট্রমা রিকভারির কর্মশালার আয়োজন করা। সরকারি উদ্যোগে একটি ‘হটলাইন সেবা’ চালু করা। সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, দেশে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সঠিক কোনো ইকোসিস্টেম নেই। মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞও এ দেশে অপ্রতুল। ১৭ কোটি মানুষের জন্য সরকারি হিসাব মতে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আছেন ৩৫০ জন।
মনোবিজ্ঞানী আছেন ৫৬৫ জন এবং মনোরোগ নার্স আছেন ৭০০ জন। অর্থাৎ প্রতি ৩ লাখ মানুষের জন্য একজন মানসিক স্বাস্থ্য পেশাজীবী। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, ১০ হাজার মানুষের জন্য অন্তত একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ থাকা প্রয়োজন। এ অবস্থায় দেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব উপলব্ধি করে এজন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানায় আঁচল ফাউন্ডেশন।