পত্রিকাটির ঐতিহাসিক সাফল্যে তাঁর ভূমিকা অনেকটা নেপথ্য কারিগরের মতোই।
আমি যার কথা আজ কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করছি তিনি বসুন্ধরা গ্রুপের সম্মানিত ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর। বাংলাদেশ প্রতিদিন নিয়ে শুরু থেকেই তাঁর একটি স্বপ্ন ছিল, পরিকল্পনাও ছিল। স্বপ্ন এবং পরিকল্পনা যাতে আবেগে হারিয়ে না যায় সেজন্য তাঁর বাস্তবমুখী অনেক পদক্ষেপ বাংলাদেশ প্রতিদিনের ঐতিহাসিক সাফল্যের অন্যতম সিঁড়ি বলে আমি মনে করি। বাংলাদেশ প্রতিদিনের এক যুগের মাহেন্দ্রক্ষণে বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সায়েম সোবহান আনভীর পাঠকের অভিবাদন পেতে পারেন পত্রিকার নেপথ্য ভূমিকার জন্য। বাংলাদেশ প্রতিদিন অন্য পত্রিকার মতো কেবল বাণিজ্যিক সাফল্যের কথা ভাবেনি, এটি একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য।
দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন। দেশসেরা পত্রিকা। দেশসেরা শুধু প্রচার সংখ্যায় নয়। পাঠকের বিবেচনায় বাংলাদেশে এখন যে বাংলা পত্রিকাটি পাঠকের হৃদয় স্পর্শ করে তার নাম বাংলাদেশ প্রতিদিন। যে পত্রিকাটি মানুষের কথা বলে, গণতন্ত্রের কথা বলে, রাজনীতির কথা বলে, প্রগতি ও স্বাধীনতার কথা বলে, জীবনের কথা বলে প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত- সেই পত্রিকাটি এখন বাংলার ঘরে ঘরে। বাংলাদেশ প্রতিদিন পাঠকের হৃদয়জুড়ে, সকালের প্রথম স্পর্শ।
বাংলাদেশের সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক হিসেবে বাংলাদেশ প্রতিদিন এক আত্মমর্যাদার প্রতীক। লাখো পাঠকের প্রিয় পত্রিকা বাংলাদেশ প্রতিদিন টানা এক যুগ পূরণ করেছে সীমাহীন অহংবোধ আর পেশাদারিত্বের অপূর্ব সমন্বয়ে। ২০১০ সালের ১৫ মার্চ বাংলাদেশ প্রতিদিনের আত্মপ্রকাশ। রাজধানীর মগবাজার কার্যালয় থেকে পত্রিকাটির প্রাথমিক পথ চলা। শুরুতে পত্রিকাটির সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন বিশিষ্ট সাংবাদিক শাহজাহান সরদার। বর্তমান সম্পাদক নঈম নিজাম। তখন ব্যবস্থাপনা সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। পত্রিকা প্রকাশের শুরুতেই বিশেষ সংবাদদাতা হিসেবে আমার যোগদান। আমার খুব স্পষ্টভাবেই মনে পড়ছে বাংলাদেশে আলোড়ন সৃষ্টিকারী, পাঠক হৃদয়ে ঝড় তোলা বাংলাদেশ প্রতিদিনের এক যুগের অনেক স্মৃতি। পেশাগত কাজে দুই সপ্তাহের জন্য আমি তখন লন্ডনে। লন্ডন থেকেই টেলিফোনে আমার কথা হয়, পত্রিকাটির আজকের সম্পাদক, শ্রদ্ধাভাজন নঈম নিজামের সঙ্গে। আমি তখন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় পত্রিকা দৈনিক আমাদের সময়ের চিফ রিপোর্টার। নঈম নিজাম ভাইকে তার পত্রিকায় যোগদানের ব্যাপারে অনুরোধ করি। আগে পিছে কোনো চিন্তা না করে সম্পাদক নঈম নিজাম আমাকে বললেন, লন্ডন থেকে ফিরে আমার সঙ্গে দেখা কর। আমি লন্ডন থেকে ফিরে মগবাজারে বাংলাদেশ প্রতিদিন কার্যালয়ে এসে নঈম নিজামের সঙ্গে দেখা করি। পরের দিন আমার নিয়োগ চূড়ান্ত হয়। ২০১০ সালের জুন মাসের কথা বলছি। বিশেষ সংবাদদাতা হিসেবে যোগ দিলেও আওয়ামী লীগ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ, সচিবালয়ের বিশেষ রিপোর্টিং করার দায়িত্বে আমি সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। একটি দৈনিক পত্রিকা মাত্র এক যুগে কীভাবে পাঠকের কাছে আস্থার ‘প্রতীক’ হতে পারে তার প্রমাণ বাংলাদেশ প্রতিদিন। মিডিয়ায় যখন এক ধরনের স্থবিরতা, সাংবাদিকতায় যখন ক্রমাগত অনিশ্চয়তা, বিভিন্ন মিডিয়া প্রতিষ্ঠানে যখন বেতন-ভাতা অনিয়মিত, সাংবাদিকদের একটি অংশ যখন দলীয় বৃত্তে বন্দি, পেশাদারিত্ব যখন প্রশ্নবিদ্ধ, সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতৃত্ব যখন রাজনৈতিক পরিচয়ে বিভক্ত ঠিক এমনই এক কঠিন মুহূর্তে বাংলাদেশ প্রতিদিনের আত্মপ্রকাশ। সংগত কারণেই বাংলাদেশ প্রতিদিনকে নিয়ে সমাজের বিজ্ঞ মহল কিংবা পাঠককুলে তেমন কোনো ‘আশাব্যঞ্জক’ সাড়া শুরুতে কল্পনা করাও ছিল দুঃসাহস। কিন্তু বাংলাদেশ প্রতিদিন সব সংশয় আর অনিশ্চয়তার গন্ডি পেরিয়ে দুর্বারগতিতে বাংলাদেশের মিডিয়া জগতে এক নতুন বিস্ময় হিসেবেই আবির্ভূত হয়। বাংলাদেশ প্রতিদিনের এই দুর্বারগতি কিংবা অপ্রতিরোধ যাত্রা সংবাদপত্র শিল্পে অনেকটা ধ্রুবতারার মতোই। পত্রিকাটির আত্মপ্রকাশ কোনো মিডিয়া জগতে এক আশীর্বাদ হয়ে সংবাদপত্র শিল্পে শক্ত ভিত তৈরি করেছে কোনো সন্দেহ নেই। পত্রিকাটির অভাবনীয় সাফল্য নিশ্চয়ই অনেকের কাছে ঈর্ষণীয় যা পত্রিকাটির ঐতিহাসিক সাফল্যেরই এক বড় স্বাক্ষর।
সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই প্রতি মুহূর্তে পরিবর্তনের ছোঁয়ায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে আকাশছোঁয়া অবস্থানে নিয়ে আসতে শ্রদ্ধেয় সম্পাদক নঈম নিজামের ভূমিকা অনস্বীকার্য। নির্মোহ বিশ্লেষণে আমি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতে পারি নঈম নিজাম কেবলমাত্র একজন জনপ্রিয় ও আধুনিক সম্পাদক হিসেবে নিজেকেই প্রতিষ্ঠিত করেননি বাংলাদেশের সংবাদপত্র শিল্পে পাঠকের জন্য সৃষ্টি করেছেন এক নতুন ধারা। এ দেশের সংবাদপত্রের মনোপলি তিনি ভেঙে দিয়েছেন নিজস্ব সৃজনশীলতা ও মেধা দিয়ে। পেশাদারিত্বে তাঁর গভীর মনোযোগ, পত্রিকা পরিচালনায় সুদক্ষ নেতৃত্ব এবং একঝাঁক নবীন সাংবাদিক নিয়ে তাঁর দূরদর্শী পরিকল্পনার শ্রেষ্ঠ অর্জন দেশের সর্বাদিক প্রচারিত দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন। আমি গত বছর অর্থাৎ ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন, নয়াদিল্লিতে প্রেস মিনিস্টার হিসেবে যোগদান করেছি। কূটনৈতিক এই দায়িত্ব পালনের শুরুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় আমি বিশেষ সংবাদদাতা হিসেবে কর্মরত ছিলাম। কর্মস্থলে, বাংলাদেশ প্রতিদিনের ঐতিহাসিক সাফল্যের অগ্রযাত্রায় আমারও সামান্য ভূমিকা রাখার সুযোগ হয়েছে এক দশকের বেশি সময় ধরে। বাংলাদেশ প্রতিদিনের বিস্ময়কর সাফল্যের ইতিহাস নির্মাণে যারা ভূমিকা রেখেছেন পত্রিকাটির এক যুগপূর্তিতে তাদের প্রত্যেকের প্রতি আমার গভীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা। এই পত্রিকাটি যে এখন বাংলাদেশের সংবাদপত্র শিল্পের এক অনন্য মর্যাদার শক্ত স্তম্ভ সে বিষয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই। আমার বিশ্বাস এই বিষয়ে যারা সন্দেহ কিংবা সংশয় প্রকাশ করেন তারা হয়তো স্বভাবগতভাবেই সন্দেহপ্রবণ। তাদের জন্য করুণা কিংবা মায়া। যারা পত্রিকাটির সাফল্যে উৎফুল্ল তারা সৃষ্টিতে বিশ্বাস করেন বলে আবারও অভিবাদন।
আমি খুব গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছি, গত এক যুগে বাংলাদেশ প্রতিদিনের পথচলায় বসুন্ধরা গ্রুপের মালিক কর্তৃপক্ষের অভাবনীয় এক আন্তরিকতা ও সম্পাদকের প্রতি অভাবনীয় মমত্ববোধ। দেখেছি পত্রিকাটিকে গণমানুষের কাছে পৌঁছে দিতে বসুন্ধরা গ্রুপের সম্মানিত চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের কী সৃজনশীল পরিকল্পনা। বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানের রয়েছে মাটি ও মানুষের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক। তিনি মানুষের কথা ভাবেন। পাঠকের কৌতূহল, পাঠকের মনের ভাষাও তিনি বুঝতে পারেন। পত্রিকাটিকে পাঠকপ্রিয় করার ক্ষেত্রে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানের নেপথ্য ভূমিকা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। পত্রিকাটির ঐতিহাসিক সাফল্যে তাঁর ভূমিকা অনেকটা নেপথ্য কারিগরের মতোই।
আমি যার কথা আজ কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করছি তিনি বসুন্ধরা গ্রুপের সম্মানিত ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর বাংলাদেশ প্রতিদিন নিয়ে শুরু থেকেই তাঁর একটি স্বপ্ন ছিল, পরিকল্পনাও ছিল। স্বপ্ন এবং পরিকল্পনা যাতে আবেগে হারিয়ে না যায় সেজন্য তাঁর বাস্তবমুখী অনেক পদক্ষেপ বাংলাদেশ প্রতিদিনের ঐতিহাসিক সাফল্যের অন্যতম সিঁড়ি বলে আমি মনে করি। বাংলাদেশ প্রতিদিনের এক যুগের মাহেন্দ্রক্ষণে বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সায়েম সোবহান আনভীর পাঠকের অভিবাদন পেতে পারেন পত্রিকার নেপথ্য ভূমিকার জন্য। বাংলাদেশ প্রতিদিন অন্য পত্রিকার মতো কেবল বাণিজ্যিক সাফল্যের কথা ভাবেনি, এটি একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য। একটি জাতীয় পত্রিকার সামাজিক দায়িত্বও থাকে অনেক। বাংলাদেশ প্রতিদিন নিশ্চয়ই এক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত। এক যুগের পথচলায় বাংলাদেশ প্রতিদিন যেমন সাধারণ পাঠকের কথা ভেবেছে, বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনে ভূমিকা রেখেছে তেমনি সমাজের, রাষ্ট্রের বীর মুক্তিযোদ্ধা, প্রগতিশীল লেখক, বৃদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, শিল্পীদের মর্যাদা দিতে ভুল করেনি। বাংলাদেশ প্রতিদিনের মানবিক গুণাবলিও সাংবাদিক সমাজকে করেছে আলোকিত, আশান্বিত। অকাল মৃত্যুর শিকার একাধিক সাংবাদিকের অসহায় পরিবারকে সাহায্যের হাত সম্প্রসারিত করে বাংলাদেশ প্রতিদিন মালিক কর্তৃপক্ষ যে মানবিক ভূমিকা রেখেছে তা অন্যদের জন্য অনুকরণীয় বলে আমি মনে করি।
বাংলাদেশ প্রতিদিন কয়েক বছর ধরে মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও ভাষা আন্দোলনে অবদান রাখা বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের সম্মাননা প্রদানের মাধ্যমে যেভাবে মূল্যায়ন করছে তা পত্রিকাটির ঐতিহাসিক সাফল্যের দুয়ার খুলে দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। দেশের সর্ববৃহৎ একক সাংবাদিক সংগঠন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক, সভাপতি এবং দেশের সর্ববৃহৎ সাংবাদিক সংগঠন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব পদে ইতিহাস সৃষ্টি করে জয় ছিনিয়ে এনেছে বাংলাদেশ প্রতিদিন পরিবারের একজন সংবাদকর্মী। বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি এখন বাংলাদেশ প্রতিদিনের বিশেষ প্রতিনিধি। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, একটি পত্রিকার সংবাদকর্মীদের এ ধরনের সাংগঠনিক নেতৃত্বের সাফল্য অনেকাংশে সম্ভব নয় যদি পত্রিকাটির সম্পাদক এবং মালিক কর্তৃপক্ষের আন্তরিক সমর্থন না থাকে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রতিদিন পরিবারের সদস্যরা নিশ্চয়ই সৌভাগ্যবান।
বাংলাদেশ প্রতিদিনের এক যুগের সাফল্যে আমি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি পাঠকমহলে তুমুল জনপ্রিয় কলামিস্ট, লেখক, সাংবাদিক প্রয়াত পীর হাবিবুর রহমানকে। তিনি মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত তাঁর অসাধারণ লেখা দিয়ে পাঠকমহলকে কাছে টেনেছিলেন। আমি পত্রিকাটির সাফল্যে আবারও সম্পাদক নঈম নিজামের পরিশ্রম, মেধা ও পেশাদারিত্বের প্রশংসা করে তাঁর ভবিষ্যৎ সাফল্য কামনা করছি। আমি বিশ্বাস করি এক যুগ ধরে পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে তিনি নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে পাঠকমহলে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন তা অনড় ও অটুট থাকবে। জয় হোক বাংলাদেশ প্রতিদিনের।
লেখক : প্রেস মিনিস্টার, বাংলাদেশ হাই কমিশন, নয়াদিল্লি, ভারত।