বগুড়ায় আগাম শীতকালীন সবজি চাষে ভালো দাম পাওয়ার স্বপ্ন বুনছেন স্থানীয় কৃষকরা। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় শীতকালীন সবজি চাষে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন তারা। বগুড়ার মাঠে মাঠে শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের সবজি। শীত আসার দেরি থাকলেও চাষিরা বসে নেই। ভালো ফলন পাওয়ার আশায় জমিতেই সময় দিচ্ছেন কৃষকরা।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বগুড়ায় এবারো ভালো সবজির উৎপাদন হবে। জেলায় শীতকালীন আগাম সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা ২ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে। এ পর্যন্ত ২ হাজার হেক্টর জমিতে আগাম সবজির চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ৬৫০ হেক্টর জমির সবজি কর্তন করা হয়েছে। বগুড়া সদর, শিবগঞ্জ, শাজাহানপুর, ধুনট, নন্দীগ্রাম, সারিয়াকান্দি, সোনাতলা, গাবতলী ও কাহালুসহ অন্যান্য উপজেলায় আগাম সবজির চাষ করা হয়েছে। আগাম শীতকালীন সবজির মধ্যে রয়েছে, মুলা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, গাজর, লাউ, পুঁইশাক, পালং শাক ও শিম। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বাম্পার ফলন হবে।
জানা যায়, বগুড়াকে সবজি ভান্ডার বলা হয়ে থাকে। শীতকালিন সবজি প্রচুর পরিমাণে চাষ হয়ে থাকে এই জেলায়। শীত আসার আগে স্থানীয় চাষিরা আগামজাতের সবজি চাষ করে থাকেন। আগামজাতের সবজিতে বেশি লাভবান হওয়া যায় বলে চাষিরা বেশি আগ্রহী হয়ে পড়েছেন। জেলায় এখনো শীত মৌসুম শুরু না হলেও শীতের সবজি চাষ শুরু হয়েছে। জেলার উঁচু জমিতে শীতকালীন বিভিন্ন জাতের সবজির চারা রোপণ ও পরিচর্যায় কৃষক পরিবারগুলোতে ব্যস্ততা বেড়েছে। কাক ডাকা ভোরে ঘুম থেকে উঠে কৃষকরা জমিতে হাল চাষ, চারা রোপণ, ক্ষেতে পানি ও ক্ষেতের আগাছা পরিষ্কার করাসহ নানা কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
বাণিজ্যিকভাবেও চাষ হচ্ছে এসব সবজি। শীতের শুরুতে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় সবজি চাষ করেছেন কৃষকরা। সবুজে সবুজে ভরে উঠছে মাঠ। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন শোভা পাচ্ছে সারি সারি বিভিন্ন জাতের সবজির গাছ। এসবের মধ্যে শোভা পাচ্ছে ফুলকপি, বাঁধাকপির চারা, লাউ, শিম, মুলা, পালং ও লালশাকসহ হরেক রকমের শীতকালীন সবজি। কৃষকদের সবজি চাষে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিয়ে সহায়তা করছেন কৃষি কর্মকর্তারা। সবজি চাষে যুক্ত জেলার কৃষকরা এবার বেশ উৎফুল্ল। কারণ তারা প্রাকৃতিক অনুকূল পরিবেশের জন্য এবার উৎপাদিত ফসলের ফলন ও দাম বেশ ভালো পাবেন। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়মিত মনিটরিংয়ে আধুনিক পদ্ধতির ব্যবহার বেড়েছে। আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে উৎপাদন বাড়ায় কৃষকদের মুনাফাও বেড়েছে কয়েকগুণ।
বগুড়া সদর উপজেলার শাখারিয়া এলাকার কৃষক মাজেদুল ইসলাম বলেন, তিনি এ বছর ৪ বিঘা জমিতে আগাম সবজি চাষ করেছেন। সবজি চাষে একটু বেশি পরিচর্যা করতে হয়। খুব কম সময়েই সবজি বিক্রি উপযোগী হয়ে ওঠে। প্রায় দিনই বাজারে সবজি বিক্রি করা যায়। পরিবারের চাহিদাও মেটানো সম্ভব হয়। জমিতে সবজি থাকা পর্যন্ত প্রত্যেক কৃষকের হাতে কম-বেশি টাকা থাকে। যা অন্য ফসলের বেলায় সম্ভব নয়। এ ছাড়া চলতি মৌসুমে সবজির দামও বেশ ভালো।
একই এলাকার সবজি চাষি আবু তালেব জানান, প্রতি বছর বিভিন্ন জাতের আগাম সবজি চাষ করে থাকি। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এ বছর ৩ বিঘা জমিতে সবজি চাষ করছি। তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর জ্বালানি তেলসহ অন্যান্য জিনিসের দাম অনেক বেশি। যে কারণে সবজি চাষে খরচও আগের চেয়ে বেড়ে গেছে। তবে আশা করছি এবার ভালো ফলন পাবো।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান জানান, এ বছর বগুড়ায় আগামজাতের শীতকালীন সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্র ২ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে। এ পর্যন্ত ২ হাজার হেক্টর জমিতে আগাম সবজির চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ৬৫০ হেক্টর জমির সবজি কর্তন করা হয়েছে। গত বছর একই পরিমাণ জমিতে শীতকালীন আগাম সবজির চাষ হয়েছিল। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বাম্পার ফলন হবে। বগুড়ায় চাষকৃত সবজি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি হয়ে থাকে। এ ছাড়া কৃষি অফিস থেকে সব সময় কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই