সারা দেশের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার অসহায় শিক্ষার্থীকে প্রতি মাসে পড়াশোনার খরচ দিচ্ছে দেশসেরা শিল্পপ্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপ। দরিদ্র পরিবারে অভাবের সঙ্গে নিত্য যুদ্ধ করে বেড়ে ওঠা এসব শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন নিশ্চিত করতে বসুন্ধরা শুভসংঘের মাধ্যমে তাদের পড়াশোনার খরচ দেওয়া হচ্ছে। এই শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগই পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে পড়ছেন। মেডিকেলে, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ছেন অনেকে। দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১৬ জন মেধাবী শিক্ষার্থী প্রতি মাসে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে শিক্ষাবৃত্তি পেয়ে নিশ্চিন্তে পড়াশোনা করছেন। তাদের কয়েকজনের অনুভূতি তুলে ধরেছেন জাকারিয়া জামান
কৃতজ্ঞতা জানাই বসুন্ধরা গ্রুপকে। কীভাবে বিনা স্বার্থে অন্যের পাশে দাঁড়ানো যায়, তা আমি শিখেছি বসুন্ধরা গ্রুপের নানা উদ্যোগ দেখে। চার ভাইবোনের মধ্যে আমি বড়। পরিবারের সব খরচ মিটিয়ে আমাদের পড়ালেখা চালানো আমার বাবার জন্য অনেক কষ্টকর হয়ে যায়। তাই নিজের খরচ নিজে চালিয়ে আমি পড়াশোনা করি। ইন্টার লাইফ শেষ হওয়ার পর শুরু হয় ভর্তিযুদ্ধ। পড়াশোনার পাশাপাশি আমাকে যুদ্ধ করে এক্সাম দিতে হয়। সারা দিন টিউশনি করে ক্লান্ত হয়ে যেতাম, পড়াশোনায় মন বসত না। সময়ও পেতাম না। সব সময় মনে হতো, আরেকটু সময় পেলে আমি আরও ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে পারতাম। আল্লাহর অশেষ রহমতে আমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাই। ভর্তি হওয়ার পর যখন গ্রাম থেকে নতুন শহরে আসি, তখন নিজের ভিতরে অনেক দুশ্চিন্তা কাজ করতে থাকে। কীভাবে এখানে থাকব, নিজের খরচ কীভাবে চালাব কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। ছোট বোনের টিউশনের টাকা নিতে হতো খরচের জন্য, যা আমার জন্য খুব লজ্জার ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বছর আমার খুব কষ্টে কেটেছে। কোনো টিউশন পাচ্ছিলাম না যার মাধ্যমে খরচ চালাতে পারতাম। পরীক্ষার ফি ও অন্যান্য খরচ কীভাবে দেব, তাও বুঝে উঠতে পারছিলাম না। তখন পাশে দাঁড়ায় বসুন্ধরা শুভসংঘ। আল্লাহর রহমতে বসুন্ধরা গ্রুপ থেকে আমার বৃত্তির ব্যবস্থা হয়ে যায়। পড়াশোনার পাশাপাশি বাড়তি যে দুশ্চিন্তাগুলো ছিল সেগুলো দূর করতে পেরেছি শুধু বসুন্ধরা গ্রুপের জন্য। মাসে মাসে যে পরিমাণ বৃত্তি পাই, তা দিয়ে আমার খরচ মিটে যায়। দোয়া করবেন, আমিও যেন বড় হয়ে বসুন্ধরা গ্রুপের মতো মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারি। সবার পাশে নিঃস্বার্থভাবে থাকতে পারি। আমরা সবাই যেন আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারি, আমাদের মা-বাবার ইচ্ছা যেন পূরণ করে তাঁদের মুখে হাসি ফোটাতে পারি। আবারও ধন্যবাদ বসুন্ধরা গ্রুপকে।
আমার মা একজন এনজিও কর্মী ছিলেন। তাঁকে দেখে ছোটবেলা থেকে ইচ্ছা ছিল আমিও মানুষের সেবা করব। সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে নিজেও বড় কোনো এনজিওতে উচ্চপদে চাকরি করব, আর মানুষের পাশে দাঁড়াব। সেই স্বপ্নে বাধা হয়ে দাঁড়ায় মায়ের চাকরি চলে যাওয়া। সে বছর এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েও কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারিনি। কারণ ফরম কেনার সামর্থ্য ছিল না আমার পরিবারের। উপায় না পেয়ে নিজেই একটা এনজিওতে ছোট পদে চাকরি শুরু করি। ২০২৩ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিই এবং সৌভাগ্যক্রমে আমার চান্স হয়। চাকরি ছেড়ে ঢাকায় কীভাবে পড়ব ভেবেও স্রষ্টার ওপর ভরসা রেখে চলে আসি ঢাকায়। পরিবারের কথা তত দিনে আমার বিভাগের সব শিক্ষকরা অবগত ছিলেন। একজন শিক্ষক আমাকে বসুন্ধরা শুভসংঘের কথা বলেন। আমি বৃত্তির আবেদন করি। আমার বৃত্তির ব্যবস্থা হয়। বসুন্ধরা গ্রুপ থেকে দেওয়া এই বৃত্তি আমার পড়ালেখার জীবন সহজ করে দিয়েছে। এখন কোনো বইখাতা কিনতে বা খাবারের জন্য টাকা লাগলে সেই সব প্রয়োজন আমি এই টাকায় মেটাতে পারি। বসুন্ধরা শুভসংঘের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আমার মতো হাজারো আর্থিকভাবে অসচ্ছল শিক্ষার্থীর পাশে দাঁড়িয়ে তাদের শিক্ষার নিশ্চয়তা প্রদানের জন্য আমরা চিরকৃতজ্ঞ থাকব।
কৃষক বাবা ও গৃহিণী মায়ের দ্বিতীয় সন্তান আমি। আমরা তিন ভাইবোনসহ পরিবারের সদস্য সংখ্যা পাঁচ। উপার্জনক্ষম ব্যক্তি একমাত্র আব্বু। দরিদ্রতায় শৈশব-কৈশোর কাটলেও পড়ালেখায় আর্থিক সমস্যা অনুভূত হয়নি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার কারণে। আমরা তিন ভাইবোনই শিক্ষার্থী। এসএসসির পর জেলায় সরকারি কলেজে ভর্তি হলেও আর্থিক সমস্যা ও অসুস্থতায় ছেড়ে আসতে হয় কলেজ। পরে এলাকার কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করি। তিন ভাইবোনের পড়ালেখার খরচ চালানো আব্বুর পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না। বড় আপুর পড়াশোনা বন্ধ করে দিতে হয়। আমি এলাকার এক বড় ভাইয়ের সহযোগিতায় ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিই এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাই। কষ্ট করে লেখাপড়া চালাচ্ছিলাম। হঠাৎই আব্বু অসুস্থ হয়ে যান। বার্ধক্যজনিত নানান রোগে ভুগছেন তিনি। সংসারে অভাব নেমে আসে চরমভাবে। পড়ালেখা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। অনেক টিউশন খোঁজ করলেও পাইনি। ডিপ্রেশনে চলে যাচ্ছিলাম, ভেবেছিলাম পড়ালেখা ছেড়ে দেব। ঠিক তখনি বসুন্ধরা শুভসংঘের স্কলারশিপ আমার জীবনে যেন মুক্তির দূত হয়ে এলো। এ প্রাপ্তিতে আমার অনুভূতি প্রকাশ করে বোঝানোর মতো নয়। ধন্যবাদ ও আন্তরিক কৃতজ্ঞতা বসুন্ধরা শুভসংঘের প্রতি, আমার মতো হাজারো শিক্ষার্থীর স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য। আমাদের মতো অসহায়দের স্বপ্ন পূরণে অবদান রেখে আপনারা প্রমাণ করেছেন দেশ ও মানুষের কল্যাণে বসুন্ধরা গ্রুপ সব সময়ই কাজ করছে।
বাবা-মা এবং তিন ভাইবোন নিয়ে আমার পরিবার। খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় উপজেলায় আমার বেড়ে ওঠা। প্রত্যন্ত এলাকা যেখানে একজন ভালো টিচার পাওয়া কষ্টসাধ্য, সেখানে একটা ভালো পাবলিকে পড়ার স্বপ্ন অনেকটাই বিলাসিতা ছিল। আর আমি সেই স্বপ্নবিলাসী। আল্লাহর রহমতে নিজের চেষ্টায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন ও বিচার বিভাগে পড়ার সুযোগ পাই। কিন্তু যেখানে কষ্টের শেষ ভেবেছিলাম, সেখান থেকেই যেন নতুন করে কষ্টের সঙ্গে আবার সাক্ষাৎ হয়। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি বাবা। তাঁর যথেষ্ট বয়স হয়েছে। নানা দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভুগছেন। ভালো করে চোখেও দেখতে পান না। নিজের চিকিৎসা খরচসহ ছোট ভাইবোনদের পড়াশোনা এবং পরিবার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। মাসের খরচ চাইতে কষ্ট হতো। টিউশন করিয়েও খুব একটা লাভ হয়নি। মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছিলাম দিনদিন। তবে আল্লাহ আমাকে নিরাশ করেননি। এই বিপদের সময় আমি পাশে পেয়েছি বসুন্ধরা শুভসংঘকে। প্রতি মাসে তাদের দেওয়া আর্থিক অনুদান আমার চিন্তার ভার কতখানি লাঘব করেছে বলে বোঝানো যাবে না। বসুন্ধরা শুভসংঘের এই নিঃস্বার্থ অবদান আমিসহ অনেক শিক্ষার্থীকেই তাদের স্বপ্নের পথে হাঁটতে সাহায্য করছে। বসুন্ধরা শুভসংঘ এবং বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা- যাদের কারণে আমার মতো অনেক শিক্ষার্থীর স্বপ্ন বেঁচে আছে আজও।
অন্য সবার মতো আমার শিক্ষাজীবনের শুরুটা এতটা মসৃণ ছিল না। শৈশবেই ডাক্তারের ভুল চিকিৎসার কারণে আমার দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে যায়। পরিবার আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত হয়। পরবর্তীতে মা গ্রামের এক দূরসম্পর্কের মামার কাছ থেকে জানতে পারেন, দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য খুলনায় একটি সরকারি বিদ্যালয় আছে, যেখানে ব্রেইল পদ্ধতিতে লেখাপড়া শেখানো হয়। মা আমাকে সেখানে ভর্তি করিয়ে দেন। মায়ের স্বপ্ন ছিল আমাকে সমাজের বোঝা না বানিয়ে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলা। ২০২১ সালে মাধ্যমিক স্তর শেষ করি। নড়াইল সমন্বিত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষা কার্যক্রমের সরকারি হোস্টেলে আবাসিক থেকে আশার আলো মহাবিদ্যালয় থেকে ২০২৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করি। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটে ভর্তি হওয়ার সুযোগ লাভ করি। দুঃখজনক হলেও সত্য, বাবার আর্থিক সক্ষমতা না থাকায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি-সংক্রান্ত খরচ আমার নিকট আত্মীয়রা সম্মিলিতভাবে বহন করেন। কারণ আমার বাবা একজন দিনমজুর। আমি ও আমার পরিবার মানসিকভাবে ভীষণ ভেঙে পড়ি। কারণ, আশঙ্কা ছিল শুধু আর্থিক অসচ্ছলতার কারণেই হয়তো আমার পড়ালেখা শেষ পর্যন্ত চালিয়ে যেতে পারব না। ঠিক তখনই মহান আল্লাহর ইচ্ছায় আমার পাশে এসে দাঁড়ায় বসুন্ধরা শুভসংঘ। তাদের সহযোগিতার কারণে এখন আমি নির্বিঘ্নে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারছি। অন্তস্তল থেকে বসুন্ধরা গ্রুপ ও বসুন্ধরা শুভসংঘের সবার প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।
দরিদ্র পরিবারে জন্ম আমার। মা-বাবার পাঁচ সন্তানের মধ্যে আমি দ্বিতীয়। যমুনা নদীর ভাঙনে বাপদাদার ভিটা হারিয়ে নানার বাড়িতে এসে বসবাস শুরু করি। বাবার নিজের বলতে কোনো জমি ছিল না। বর্গা জমি চাষ এবং দিনমজুরি করে আমাদের পরিবারের খরচ বহন করতেন বাবা। ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ব। এসএসসিতে ভালো রেজাল্ট করেও টাকার অভাবে শহরের ভালো কোনো কলেজে ভর্তি হতে পারিনি। টাকার অভাবে ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি পরীক্ষার জন্য কোনো কোচিং করতে পারিনি। আল্লাহর রহমতে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর নতুন পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছিলাম না। পারছিলাম না টাকার অভাবে এখানকার পরিবেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে। ভালো পোশাকের ব্যবস্থা করতে, প্রয়োজনীয় বই কিনতে পারিনি। কোনো মতে দুই বেলা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাইনিংয়ের খাবার খেয়ে জীবন কাটিয়ে দিচ্ছিলাম। এমন সময় পাশে এসে দাঁড়ায় বসুন্ধরা শুভসংঘ। বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে শিক্ষাবৃত্তি দিয়ে আমার বই, পোশাক এবং খাবার কেনায় সাহায্য করছে। প্রতি মাসে আমাকে খরচের টাকা দিচ্ছে তারা। আশা করি বসুন্ধরা শুভসংঘ শিক্ষাজীবনের বাকি সময়টুকু এভাবেই পাশে থেকে সাহায্য করে যাবে।