কেউ বাবাহারা আবার কারো স্বামী নেই। জীবনযুদ্ধে টিকে থাকা আর দুমুঠো খাবারের জন্য প্রতিনিয়ত চালিয়ে যাচ্ছেন সংগ্রাম। এবার তাদের জীবনসংগ্রামে পাশে দাঁড়িয়েছে দেশের বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপ। শরীয়তপুরের ২০ অসচ্ছল নারীকে স্বাবলম্বী করতে বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণ শেষে সেলাই মেশিন বিতরণ করেছে তারা।
শুধু সচ্ছলতা নয়, এবার নিজেদের স্বাবলম্বী করতে চান সেলাই মেশিন পাওয়া দরিদ্র নারীরা। সম্প্রতি সদর উপজেলার ধানুকা কলোনি মাঠ এলাকায় পাঁচ মাস প্রশিক্ষণ শেষে ভাগ্যোন্নয়নের এই যন্ত্রটি তুলে দেওয়া হয়। আর সেলাই মেশিন পেয়ে দিনবদলের স্বপ্ন বুনছেন তারা। কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতি।
ধানুকা এলাকার ২০ বছর বয়সী মিম আক্তার। তার বয়স যখন ১২ বছর, তখন বাবা নজির আহম্মেদ অসুস্থ হয়ে মারা যান। একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়ে মিম ও তার পরিবার। একদিকে দারিদ্র্যের কশাঘাত আর অন্যদিকে মানুষের কাছ থেকে চেয়েচিন্তে এনে কোনোমতে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করে আসছিল তারা।
শেষে বাধ্য হয়ে সন্তানদের বাঁচাতে মা ফিরোজা বেগম বেছে নেনে ইট ভাঙার কাজ। মায়ের এই নিদারুণ কষ্ট মিমকে ভীষণ মানসিক পীড়া দেয়। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত এসে অর্থাভাবে থমকে যায় তারও শিক্ষাজীবন। তবু স্বপ্ন, একদিন নিজে হবেন স্বাবলম্বী আর কষ্ট করতে দেবেন না মাকে। এবার তার স্বপ্ন সফল করতে এগিয়ে এলো বসুন্ধরা শুভসংঘ।
প্রশিক্ষণ দিয়ে তার হাতে তুলে দেওয়া হলো ভাগ্যোন্নয়নের এক যন্ত্র। বিনা মূল্যে ভাগ্যের চাকা ঘোরানোর এই সেলাই মেশিনটি হাতে পেয়ে পরিবার নিয়ে দিন গুনছেন ভাগ্যবদলের। মিম বলেন, ‘জীবনে অনেক কষ্ট করেছি। বাবা প্যারালাইজড হয়ে ঘরে পড়েছিলেন। তিনি মারা যাওয়ার পর মা অনেক কষ্ট করে রোজগার করে আমাদের খাবার আনতেন। ইচ্ছা ছিল বড় হয়ে মায়ের পাশে দাঁড়াব, মাকে আর কষ্ট করতে দেব না। আজ আমার সেই ইচ্ছা পূরণ করেছে বসুন্ধরা শুভসংঘ। তারা আমাকে বিনা মূল্যে একটি সেলাই মেশিন দিয়েছে। এই মেশিন চালিয়ে টাকা রোজগার করব। যারা আজ সেলাই মেশিন দিয়েছে, তাদের জন্য দোয়া করি, আল্লাহ যেন তাদের আরো অনেক ওপরে নিয়ে যায়।’
মিম আক্তারের মা ফিরোজা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী আজ থেকে ১০ বছর আগে মারা যায়। তার পর থেকে ইট ভাঙ্গার কাজ করে মেয়েদের নিয়ে কোনোমতে ভাতে পানি দিয়া খাই। বসুন্ধরার পক্ষ থেকে আমার মেয়েরে একটা সেলাই মেশিন দিছে। এখন আমার মেয়ে কাজ করে দুইডা ডাইল ভাত জোগাড় করতে পারব। আমি আল্লাহর দরবারে বসুন্ধরার জন্য দোয়া করি।’
অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে পুরুষের পাশাপাশি নারীর স্বাবলম্বী হওয়ার বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে গ্রামের দরিদ্র নারীরাও যাতে পিছিয়ে না থাকে, তাই তাদের স্বাবলম্বী করতে উদ্যোগ নিয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ। বসুন্ধরা শুভসংঘের মাধ্যমে প্রায় দুই হাজার গ্রামীণ নারীকে স্বাবলম্বী করতে সেলাই মেশিন তুলে দিয়েছে তারা। বর্তমানে সেই নারীরা নিজে স্বাবলম্বী হয়েছেন, অন্যকেও স্বাবলম্বী করার সুযোগ দিয়েছেন। ভবিষ্যতেও বসুন্ধরা গ্রুপ তাদের এই কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে পরিচালনা করে যাবে বলে জানান বসুন্ধরা শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান। তিনি বলেন, অতিদরিদ্র পরিবারের নারীদের স্বাবলম্বী করার জন্য বসুন্ধরা গ্রুপের উদ্যোগ এটি। বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান বসুন্ধরা শুভসংঘের মাধ্যমে গ্রামের দরিদ্র নারীদের স্বাবলম্বী করার জন্য বিনা মূল্যে সেলাই প্রশিক্ষণ দিয়ে একটি সেলাই মেশিন তুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।