কক্সবাজারের টেকনাফে বসুন্ধরা শুভসংঘের উদ্যেগে “রোহিঙ্গা সংকট : স্থায়ী সমাধানে শিক্ষার্থী ভাবনা” শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (২৪ মে) টেকনাফ প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বসুন্ধরা শুভসংঘের টেকনাফ উপজেলা শাখার সভাপতি অধ্যাপক সন্তোষ কুমার শীলের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম বিপ্লবের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নেন টেকনাফ সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জিহাদ, টেকনাফ প্রেসক্লাবের এডহক কমিটির আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ, সদস্য সচিব সাইফুল ইসলাম সাঈফী, সিনিয়র সাংবাদিক গিয়াস উদ্দীন ভুলু, বসুন্ধরা শুভসংঘের টেকনাফ উপজেলা শাখার উপদেষ্টা সাংবাদিক জাকারিয়া আলফাজ।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে রোহিঙ্গা সংকট ও সমাধানের উপায় তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন ওমর হায়াত, মোহাম্মদ ইউসুফ, মো. জাবেদ ইকবাল, মেহেদী হাসান, মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ ও মোহাম্মদ ইবরাহিম।
বসুন্ধরা শুভসংঘের এই গোলটেবিল বৈঠকের প্রধান অতিথি সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জিহাদ বলেন, সীমান্ত জনপদে বসুন্ধরা শুভসংঘের আয়োজনে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ জানাই। একটি দেশে দেড় লাখ বা দুই লাখ রোহিঙ্গা হলে সহ্য করা যায়। আপনারা অনেকে বলেছেন, ১২ লাখ বা ১৩ লাখ রোহিঙ্গা, কিন্তু আমার জানামতে ২৫ লাখের কাছাকাছি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে বসবাস করছে। আমাদের রোহিঙ্গা সমস্যা থেকে অবশ্য পরিত্রাণ দিতে হবে। দুই ধাপে আমাদের পরিত্রাণ দিতে হবে। প্রথমত, রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে হবে। দ্বিতীয়ত, ফেরত পাঠাতে বিলম্ব হলে রোহিঙ্গা আগমণের কারণে কর্মহীন স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য মেগা প্রকল্পের মাধ্যমে কর্ম সৃষ্টি করতে হবে।
গোলটেবিলের অতিথি টেকনাফ প্রেসক্লাবের এডহক কমিটির আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আমরা নিয়মিত বক্তব্য দিয়ে আসছি। অনেক লেখালেখি করছি কিন্তু তাতে কোন সমাধান হচ্ছে না। আমার ব্যক্তিগত অভিমত রোহিঙ্গাদের অবশ্যই প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নিতে হবে। তবে তার আগে রোহিঙ্গারা যতদিন এদেশে থাকবেন তাদের একটি শৃঙ্খল গণ্ডির ভেতরে রাখতে হবে। স্থানীয় বাসিন্দারা রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন ধরনের অপরাধমুলক কর্মকাণ্ডের কারণে দিনদিন অতিষ্ট হয়ে পড়েছে।
টেকনাফ প্রেসক্লাবের সদস্য সচিব সাইফুল ইসলাম সাঈফী বলেন, সর্বশেষ ২০১৭ সালে যেসব রোহিঙ্গা এদেশে আশ্রয় নিয়েছে আমরা এখন তাদেরকে রোহিঙ্গা বলে ধরি। কিন্তু এর আগেও আরও যে কত লাখ রোহিঙ্গা এদেশে ঢুকেছে তাদের প্রায় সবাই জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মনিবন্ধন সনদ নিয়ে বাংলাদেশি বনে গেছে। তারা এখন বাংলাদেশি নাগরিক হয়ে বসবাস করছে। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস চাইলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্ভব। নয়তো এ প্রক্রিয়া আরও বেশি দীর্ঘায়িত হবে।
সিনিয়র সাংবাদিক গিয়াস উদ্দীন ভুলু বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা আমাদের কাছে দীর্ঘদিনের। সরকারের কাছে আমাদের দাবি থাকবে দ্রুত প্রত্যাবাসনের। আমরা শুধু প্রত্যাবাসনের কথা শুনে আসছি, কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রত্যাবাসন হয় না। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ছাড়া এ সংকটের কোন সুষ্ঠু সমাধান হতে পারে না।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক সন্তোষ কুমার শীল বলেন, রোহিঙ্গারা আমাদের দেশে এসেছিলেন অতিথি হিসেবে। কিন্তু অতিথির স্থায়ীত্ব কত দিন? অতিথির ভার সইবার সক্ষমতা আমাদের আর নেই। তাই তাদের ফেরত পাঠানোর উদ্যোগই হোক এর প্রকৃত সমাধান।
গোলটেবিল বৈঠকের আলোচনায় শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে রোহিঙ্গাদের ঠাঁই দেয়া হয়েছে। দিনদিন রোহিঙ্গাদের একটি দুর্বৃত্ত গোষ্ঠীর কারণে উখিয়া ও টেকনাফের স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবন যাপন কঠিন হয়ে পড়েছে। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা ডাকাতি, খুন, অপহরণ, মানবপাচারসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে। যার ভুক্তভোগী আমরা নিজেরাই। এ অবস্থা দীর্ঘদিন চলতে পারে না। রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর অবশ্যই কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
কলেজ শিক্ষার্থী মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, ক্যাম্প থেকে বের হয়ে রোহিঙ্গারা স্থানীয় শ্রমবাজারের দখল নিচ্ছে। টমটম, অটোরিকশা চালক থেকে শুরু করে দিনমজুর, জেলে ও টেকনাফ স্থলবন্দরের শ্রমিক হিসেবে নিয়োজিত রয়েছে রোহিঙ্গাদের বড় একটি সংখ্যা। স্থানীয়দের অনেকে এতে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে।
কলেজ শিক্ষার্থী ওমর হায়াত বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শরণার্থী ক্যাম্প রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশের উখিয়া ও টেকনাফে যে শরণার্থী ক্যাম্প অরক্ষিত। রোহিঙ্গারা ইচ্ছেমত ক্যাম্প থেকে বের হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। গ্রামে ঢুকে তারা বিভিন্ন ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত হচ্ছে। প্রত্যাবাসন যখনই হোক তার আগ পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের কাঁটাতারের বেড়ায় আবদ্ধ করা না গেলে কক্সবাজারসহ পুরো দেশে এর ভবিষ্যত প্রভাব খারাপ হতে পারে।
কলেজ শিক্ষার্থী জাবেদ ইকবাল বলেন, রোহিঙ্গারা এসে পাহাড়ে বসতি স্থাপন করেছে। তারা বনভূমি উজাড় করে পরিবেশের বড় ক্ষতি করছে। এমনিতেই যে পরিমান বনভূমি থাকা দরকার তাও নেই আমাদের দেশে। তার উপর রোহিঙ্গাদের বনভূমি ধ্বংসের কারণে বনভুমির উপর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে।
বৈঠকে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক জিয়াবুল হক, আমিনুল ইসলাম বাঁধন, শেখ রাসেল, এমএ হাসান, আরাফাত সানি, নোমান অরুপ, ফারুকুর রহমান, কেফায়েত উল্লাহ প্রমূখ।
বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ