মাদক সন্ত্রাসীকে রক্ষা করতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে তাণ্ডব চালিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা। এছাড়া ক্যাম্পাসের মেইন গেটে অবস্থিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল “মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব” এ ইট পাটকেল নিক্ষেপ করেছে।
একই সাথে প্রক্টরের পদত্যাগ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থাপনা ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, অর্ধশতাধিক ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে তারা। মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনার পর ক্যাম্পাসের সর্বত্রই আতঙ্ক বিরাজ করছে।
প্রত্যাক্ষদর্শী ও হল সূত্রে জানা যায়, সন্ধ্যা ৬টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের লালন শাহ হলে অভিযান চালায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি।
এসময় হলের দক্ষিন ব্লক থেকে ছাত্রলীগের সভাপতি গ্রুপের কর্মী আকাশ, বহিরাগত দানিয়েলকে দশ বোতল ফেনসিডিল ও কয়েকটি চাপাতিসহ আটক করে প্রক্টরিয়াল বডি। সেখান থেকে রফিকুল নামের আরেক বহিরাগত পালিয়ে যায়। এসময় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গ্রুপের কর্মীরা আটককৃতদের এবং চাপাতি ও ফেনসিডিল কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করে।
পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির কাছ থেকে ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা আকাশকে ছিনিয়ে নিয়ে আসে। এরপর আটককৃত বহিরাগত দানিয়েলকে ইবি থানায় সোপর্দ করা হয়।
এই ঘটনার জের ধরে সন্ধ্যা সাতটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে মিছিল নিয়ে ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা সাদ্দাম হোসেন হল এবং লালন শাহ হলের সামনে অবস্থান নিতে থাকে। এরপর সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে দুই হলের নেতা কর্মীরা একত্রিত হয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমানের পদত্যাগের দাবিতে মিছিল করে।
পরে রাত ৮ টার দিকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা লাঠিসোঠা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বিভিন্ন স্থাপনা ভাংচুর করতে করতে প্রশাসন ভবনের দিকে যায়। এরপর মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিসি ও মেইন গেট এলাকায় গিয়ে টিএসসিসি’র সিসিক্যামেরা ও জানালার গ্লাস, মেইন গেটে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য্য বর্ধনের নান্দনিক জলের ফেয়ারাসহ বিভিন্ন ফ্রেম ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এরপর তারা মেইন গেটের কাছে অবস্থিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব’ এ ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এসময় তারা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে প্রায় অর্ধশতাধিক কক্টেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। এই ঘটনার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বত্রই এখন আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এদিকে মেইন গেটে তালা লাগিয়ে কুষ্টিয়া থেকে ক্যাম্পাসগামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বহনকারী বাস আটকে দেয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়ে প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহনির রহমান শাহিনের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান বলেন, ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি লালন শাহ হলে অভিযান চালায়। এসময় মাদকদ্রব্যসহ একজনকে আটক করা হয়। তার বিরুদ্ধে আইনী প্রক্রিয়া বিদ্যমান রয়েছে।
ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রতন শেখ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি একজনকে থানায় সোপর্দ করেছে। তবে এঘটনায় আকাশ সাকিব নামের একজন পলাতক রয়েছে। আটককৃতের কাছ থেকে যে মাদকদ্রব্য পাওয়া গেছে তার ভিত্তিতে মামলার প্রক্রিয়া চলছে।’
বিডিপ্রতিদিন/ ই জাহান