১৩ মে, ২০২০ ২০:৩৫

ছাত্রলীগের তিলোত্তমার গল্প

রফিকুল ইসলাম রনি :

ছাত্রলীগের তিলোত্তমার গল্প

ইফতার বিতরণ মুহূর্ত

করোনার কারণে যখন মানুষ নিজেকে বাঁচানোর জন্য ঘরে কিংবা নিরাপদ স্থান বেছে নিয়েছেন। সেখানে উল্টোপথে হাঁটছেন এক নারী। জীবনের ঝুঁকি নিয়েও তিনি হতদরিদ্র, ছিন্নমূল ও ভাসমান মানুষের হাতে তুলে দিচ্ছেন ইফতার সামগ্রী। ইফতার সামগ্রী বললে ভুল হবে কারো কারো জন্য রাতের খাবার। আর এ মানবিক কাজ করে যাচ্ছেন ছাত্রলীগের উপ-সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সদস্য এবং সিনেট সদস্য তিলোত্তমা সিকদার। 

নিজে সনাতন ধর্মের হলেও রোজাদার মুসলমানদের জন্য ইফতার সামগ্রী তৈরি করে রাস্তায় রাস্তায় তুলে দিচ্ছেন। এ এক অন্য মানবিকতার পরিচয়। লোক দেখানো কিংবা সেলফি তোলার জন্য নয়, মন থেকে নিয়মিত এই কাজ করছেন তিনি। তার এই মানবিক কাজে হতদরিদ্র ও ভাসমান ও ছিন্নমূল মানুষের মাঝে দিন দিন সাড়া মিলছে ব্যাপক। রমজানের শুরু থেকেই এই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। প্রথম দিকে শতাধিক মানুষের জন্য ইফতার সামগ্রী বিতরণ করলেও দিন দিন চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিদিনই প্যাকেটের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হচ্ছে তাকে। 

জানা যায়, করোনা শুরু হওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত ক্যাম্পাসেই ছিলেন ছাত্রলীগ নেত্রী তিলোত্তমা সিকদার। লকডাউন শুরু হওয়ার কিছু আগে গ্রামের বাড়ি বরিশাল চলে যান। কিন্তু লকডাউনে আটকা পড়েন। আর ঢাকায় ফিরতে পারেননি। এর মধ্যে চলে মাহে রমজান মাস। মানুষের কল্যাণে, মানবিক মন নিয়ে তিনি প্রথম রমজানে ইফতার সামগ্রী বানালেন বাড়িতেই। একটি ভ্যানে করে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বিতরণ করলেন ভাসমান, পথচারী ও হতদরিদ্র মানুষের মাঝে। এতে ব্যাপক সাড়া পেলেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সবাই তার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানালেন। সেই যে শুরু এখন পর্যন্ত চলমান রেখেছেন তার অসাম্প্রদায়িক মানবিক কাজ। প্রথম রমজান থেকে শুরু করে আজ ১৯ রমজান পর্যন্ত কখনো বৃষ্টিতে ভিজে, কখনো প্রখর রোদে পুড়ে নিজ জেলা বরিশালের বিভিন্ন এলাকায় ইফতার বিতরণ ও ইফতার সামগ্রী বিতরণ করছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় এই নেত্রী।
 
তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে সবকিছুই বন্ধ রয়েছে। বেশি ভোগান্তিতে রয়েছে কর্মহীন মানুষ। আমি নিজের উদ্যোগে তাদের জন্য ইফতার বিতরণের উদ্যোগ নেই। তিলোত্তমা শিকদার বলেন, বরিশাল সদরসহ বিভিন্ন জায়গায় প্রতিদিন প্রায় ১০০ জন মানুষের মধ্যে ইফতার বিতরণ করি। এখন মানুষের মধ্যে সাড়া পাচ্ছি। লোকের সংখ্যা বেড়েই চলছে। আমি সাধ্যমতো অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষের পাশে ইফতার সামগ্রী তুলে দিচ্ছি। পুরো রমজান মাসটাই মানুষের পাশে থাকবো। মানবসেবাই আমার কাছে বড় ধর্ম। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী তিলোত্তমা শিকদার বললেন, প্রতিদিন নানা ধরনের মানুষের সঙ্গে আমার দেখা হয়, গল্প শুনি। একেকজনের গল্প যেন একেকটি ট্রাজেডি। তাদের মুখে কথা শুনি। ইচ্ছে জাগে এই মানুষগুলোর জন্য যদি আরো কিছু করতে পারতাম!

প্রসঙ্গক্রমে বললেন, ৯ম দিনে রফিক নামে একজনের সাথে পরিচয় হয়। ক্রাচে ভর করে এসেছেন। রফিক মামা বললেন, ১৬ বছর যাবত রিকশা চালায়। কিন্তু মাঝখানে একটা দুর্ঘটনায় তার পা কেটে ফেলতে হয়েছে। আমার হাত থেকে ইফতারির প্যাকেট নিয়ে অঝোরে কাঁদলেন আর বললেন, যখন দুই পায়ে শক্তি ছিল, করো কাছে যায়নি। এখন হাত পেতে খেতে হয়... এই সামান্য খাবারেই তার চোখে যে আনন্দ দেখেছি সেটাই তৃপ্তি।

তিলোত্তমা জানালেন, আমি সনাতন ধর্মের হলেও কেউ আমার খাবার গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায় না। আবার আমার বাড়িতেই তৈরি করা হয় ইফতারি সামগ্রী। এতে পরিবারের সবার সহযোগিতা পাই। ছাত্রলীগের বড় ভাই-ছোট ভাইদের ব্যাপক অনুপ্রেরণা পাচ্ছি। তিনি বলেন, এই ইফতার বিতরণ আমার কাছে জীবনের অন্যতম আনন্দের এক মুহূর্ত মনে হয়। কারণ এসব মানুষ ইফতার পেয়ে যে খুশি হয়েছেন তা দেখে আমার মন ভরে ওঠে। আমার মন চায় এসব মানুষকে আরও দেয়ার, আরও সহযোগিতা করার। যদি প্রতিদিন এক হাজার মানুষকে ইফতার দিতে পারতাম আরও বেশি তৃপ্তি পেতাম। মনের তৃপ্তির জন্য এবার পুরো মাস দরিদ্র মানুষের মাঝে ইফতার বিতরণ করব। ইফতার বিতরণ করতে গিয়ে এমন কিছু মানুষ পেয়েছি যারা সেহরি না খেয়েই রোজা রেখেছেন। আমি চেষ্টা করছি, আমার আয়োজনটা আরেকটু বড় করার। 

পরিশেষে বললেন, আমার নেত্রী যার যার অবস্থান থেকে গরীব অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে বলেছেন। আমিও তাই করছি। আমি আমার অবস্থান থেকে মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাবো। সনাতন ধর্মের এক তরুণী মুসলমানদের জন্য তৈরি ইফতার বিতরণ- এ যেন অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের প্রতচ্ছবি। জয় হোক মানবতার।

বিডি-প্রতিদিন/শফিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর