দীর্ঘ ১১ মাস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো বন্ধ থাকার পর সেগুলো খুলে দেওয়ার দাবি উঠেছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। সব বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য হল খোলা চান তারা। এই দাবিতে আন্দোলনে যাওয়ার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন শিক্ষার্থীদের একটি অংশ।
জানা গেছে, করোনার কারণে গত বছরের ১৯ মার্চ থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদালয়ের ১৯টি হল। বেশ কিছুদিন বন্ধ থাকার পর শুরু হয় অনলাইন পাঠ্য কার্যক্রম। তবে করোনার প্রকোপ কমে আসায় এখন শিক্ষার্থীরা হলে উঠে যেতে চাচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতোমধ্যে আগামী ১৩ মার্চ থেকে স্নাতক শেষ বর্ষ ও স্নাতকোত্তরের পরীক্ষার্থীদের জন্য হল খুলে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তবে শিক্ষার্থীদের দাবি, শুধু এই দুই বর্ষ নয়, বরং সব বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য হল খুলে দিতে হবে। স্বশরীরেও চালানো হবে শিক্ষা কার্যক্রম। হল খোলার দাবিতে আন্দোলন সংঘটিত করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ফেসবুক গ্রুপগুলোতে কার্যক্রম লক্ষ করা গেছে। সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাজু ভাষ্কর্যে মানববন্ধন ও মিছিল করার ঘোষণা দিয়েছেন বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীরা।
এখনই হল খুলে দেওয়ার যৌক্তিকতা তুলে ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জুনাইদ আহমেদ খান বলেন, যেখানে দেশের সবকিছু স্বাভাবিকভাবেই চলছে, সেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা অযৌক্তিক। এখনই যদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে সিদ্ধান্তে আসা না যায়, তাহলে আমরা সবমিলিয়ে দেড় বছরের সেশনজটে পড়বো। তাই এটাই হল খোলার সঠিক সময়।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের অনেকে টিউশনি করে পরিবারের খরচ চালাতো। তাছাড়া দীর্ঘদিন ধরে বাড়িতে থাকায় অনেকেই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। বরিশাল ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা আমরা দেখলাম। তাছাড়াও অনেক দিন ধরে জমা থাকা পরীক্ষাগুলো খোলার সাথে সাথে যদি নিতে চাওয়া হয়, তাহলে আমরা চাপে পড়ে যাবো। তাই আগে থেকে হল খুলে দেওয়া হলে আমরা মানসিক ও শারীরিক প্রস্তুতি নিতে পারবো।
লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী নুসরাত খন্দকার বলেন, ক্যাম্পাস বন্ধের প্রায় এগারো মাস হয়ে গেছে, আমরা আর কীসের জন্য অপেক্ষা করবো? প্রশাসন তো এখনও কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি। আমাদের ভবিষ্যত কর্মসংস্থানের বিষয় আছে। সেজন্য দ্রুত স্নাতক শেষ করা প্রয়োজন। আর মেয়েদের ক্ষেত্রে বিষয়টি আরও জটিল। কেননা, আমাদের আর্থ-সামাজিক কারণে তাদের বিয়ের বিষয়ে পরিবার ও আত্মীয় স্বজনের চাপ আসা শুরু করে। এতদিন ধরে সেটা মোকাবেলা কঠিন। অনেকদিন পরও যখন একটা অতিমারী যাচ্ছে না, তখন তো আমাদের জীবনযাত্রা থেমে থাকতে পারে না। সবই যখন চলছে. তখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে কেন?
আগামী ১৩ মার্চ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের জন্য হল খুলের বিষয়টিকেও অযৌক্তিক হিসেবে দেখছেন তারা। প্রশাসন অন্য বর্ষের শিক্ষার্থীদের সমান গুরুত্ব দিচ্ছে না বলেও অভিযোগ তাদের। এরকম একটি সিদ্ধান্ত আরও আগে নিয়ে পর্যায়ক্রমে অন্য বর্ষের জন্যও হল খুলে দেওয়া যেত বলে মন্তব্য তাদের।
এর আগে, বিভিন্ন সময় ছাত্রসংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে হল খুলে দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছিলো। সেসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেছিলেন, "হল খুলতে জাতীয়ভাবে সিদ্ধান্ত লাগবে।"
বিডদি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ সিফাত