১৯ জুন, ২০২১ ২১:২২

অনলাইনে শিক্ষক নিয়োগে উত্তপ্ত জাবির শিক্ষক রাজনীতি

শরিফুল ইসলাম সীমান্ত, জাবি

অনলাইনে শিক্ষক নিয়োগে উত্তপ্ত জাবির শিক্ষক রাজনীতি

দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক মতাদর্শ অনুযায়ী শিক্ষক রাজনীতি থাকলেও ব্যতিক্রম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)। এখানে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চলে ক্ষমতার পক্ষ বিপক্ষ নিয়ে। মোটাদাগে জাবির শিক্ষক রাজনীতিতে পক্ষ দুটি। একটি উপাচার্যের পক্ষের আর অন্যটি উপাচার্য বিরোধী। দুটি পক্ষেই আওয়ামী লীগ আর বিএনপির শিক্ষকরা রয়েছেন।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে নিয়ম বহির্ভূতভাবে অনলাইন পরীক্ষার (মৌখিক) মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে সক্রিয় হয়ে উঠেছে পক্ষ দুটি। পরস্পর বিরোধী বক্তব্য লক্ষ্য করা গেছে জাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের। সভাপতি ও সম্পাদক দুজনই আওয়ামী লীগের হলেও সভাপতি পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এ এ মামুন উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারাজানা ইসলামের অনুসারী। অন্যদিকে অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আমজাদ হোসেন উপাচার্য বিরোধী শিক্ষক হিসেবে পরিচিত। 

উল্লেখ্য, উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারাজানা ইসলাম টানা দ্বিতীয় মেয়াদে উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করছেন। আগামী মার্চে শেষ হবে তার মেয়াদ। এদিকে, করোনার কারণে বন্ধ রয়েছে শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম। তাই শেষ সময়ে এসে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন উপাচার্য ও এতদিন ধরে উপাচার্যের পেছনে সময় দেয়া শিক্ষকরাও। তারাও চাইছেন যে কোনো মূল্যে তাদের শ্রমের লভ্যাংশটুকু ঘরে তুলতে। তাই নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই অনলাইনে শিক্ষক নিয়োগের ভাইভা নিয়ে তোড়জোড় শুরু করেন তারা। কিন্তু উপাচার্য বিরোধী শিক্ষকদের হস্তক্ষেপে বিষয়টি ইউজিসি এবং শেষমেষ হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছে।

এরই উত্তাপ লক্ষ্য করা গেছে গত ৮ জুন শিক্ষক সমিতির জরুরি সাধারণ সভায়। নির্বাহী পরিষদ ২০২১ নির্বাচনী আলোচ্যসূচি নিয়ে অনলাইন মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয় এই সভা। যেখানে ১০৪ জন শিক্ষক অংশগ্রহণ করেন। বক্তব্য রাখেন ৩০ জন শিক্ষক। 

সভায় অধিকাংশ সদস্য মহামারীর পরিস্থিতি উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষক সমিতির নির্বাচন স্থগিত রাখার বিষয়ে মত দেন। ফলে সভায় বর্তমান নির্বাহী পরিষদ (২০২০) এর মেয়াদ ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত বর্ধিত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। 

কিন্তু সভায় ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার পয়েন্ট অফ অর্ডারে অবহিত করেন যে শিক্ষক সমিতির গঠনতন্ত্রের ৬ (৪) ধারা অনুযায়ী বিশেষ পরিস্থিতিতে নির্বাহী পরিষদের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য জরুরি সাধারণ সভার পরিবর্তে সাধারণ সভা আহ্বান করা বাঞ্ছনীয়।

পরে সভাপতি অধ্যাপক এ এ মামুন সকলের সম্মতির ভিত্তিতে জরুরি সাধারণ সভাটিকে সাধারণ সভায় রূপান্তরের বিষয়ে রুলিং দেন। 

এরপর ১২ জুন, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আমজাদ হোসেন স্বাক্ষরিত সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়, ‘সভাপতি মহোদয় উপস্থিত সকল সহকর্মীর মতামতের ভিত্তিতে জরুরি সাধারণ সভাটিকে সাধারণ সভায় রূপান্তরের বিষয়ে রুলিং দেন। তাই নির্ধারিত আলোচ্যসূচি ছাড়াও সম্মানিত সহকর্মীগণ বিভিন্ন বিষয়ে তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন।’

কার্যবিবরণীতে উল্লেখ করা হয়, ‘অনলাইন মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সশরীরে মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ যাচাই বাছাই সম্পন্ন করে উপযুক্ত প্রার্থীকে নিয়োগের বিষয়ে শিক্ষকগণ মত প্রকাশ করেন।’

এ ব্যাপারে সভাপতি অধ্যাপক এ এ মামুন বলেন, ‘সাধারণ সভায় সভাপতি আলোচ্যসূচি অনুমোদন করে থাকে। সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে যে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করি। কারণ অনলাইন নিয়োগের ব্যাপারে সাধারণ সভা উদ্বেগ প্রকাশ করেনি। মাত্র একজন শিক্ষক বিষয়টি উত্থাপন করেন। যে ব্যাপারে অন্য কোন শিক্ষক মতামত পেশ করেনি। ফলে সাধারণ সভার মর্যাদা রক্ষার্থে আমাকে আরো একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হয়েছে।’

১৬ জুন সভাপতি স্বাক্ষরিত এই নতুন বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘গত ৮ জুন ২০২১ তারিখে অনুষ্ঠিত জাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভার কার্যবিবরণী হিসেবে ইতোমধ্যে প্রচারিত (সাধারণ সম্পাদক কর্তৃক স্বাক্ষরিত) বক্তব্য সমিতির সভাপতি কর্তৃক স্বাক্ষরিত এবং অনুমোদিত নয়।’

বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ‘সভায় ৩ জন সদস্য এজেন্ডার বাইরে কিছু প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। কিন্তু এসব বিষয় এজেন্ডাভুক্ত করার জন্য কেউ প্রস্তাব করেননি। সভায় এজেন্ডার বাইরে যে সব প্রসঙ্গ উত্থাপিত হয়েছে সেসব বিষয় নির্বাহী পরিষদ অথবা পরের সাধারণ সভায় আলোচনা করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।’

এ ব্যাপারে অধ্যাপক আমজাদ হোসেন বলেন, ‘তাদের আপত্তির মূলে রয়েছে অনলাইনে শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে সাধারণ সভায় সহকর্মীদের উদ্বেগ প্রকাশের ঘটনাটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করায়। কারণ এতে উপাচার্য বিব্রত হবেন। কিন্তু সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সংগঠনের প্রকৃত বিষয়টি প্রকাশ করা আমার কর্তব্য।’

তিনি বলেন, ‘শিক্ষক সমিতির যেকোনো বিজ্ঞপ্তি সাধারণ সম্পাদক কর্তৃক স্বাক্ষরিত হয়ে প্রচারিত হয়। এবারেও তাই হয়েছে। আমি এই সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পূর্বে সভাপতিকে প্রেরণ করেছি। তিনি এড়িয়ে গিয়েছেন। পরে সমিতির সদস্য অধ্যাপক বশির আহমেদকে প্রেরণ করি। তিনিও সেটি লক্ষ্য করেননি। ফলে গত ৮ জুনের সাধারণ সভার সিদ্ধান্ত প্রকাশে বিলম্ব হচ্ছিলো। অবশেষে ১২ জুন আমার উদ্যেগে সেটি প্রকাশ করা হয়।’

এ বিষয়ে অধ্যাপক বশির আহমেদ বলেন, ‘এখানে একটি কমিউনিকেশন গ্যাপ হয়েছে। সাধারণত কার্যবিবরণীর ড্রাফট আমি করে থাকি। এবার অসুস্থ থাকায় সেটা সম্ভব হয়নি। কিন্তু সাধারণ সম্পাদক সভাপতির সাথে আলোচনা না করেই কার্যবিবরণী প্রকাশ করেন।’

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর