ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জগন্নাথ হলের পরিচিত মুখ সুদনচন্দ্র বর্মন। প্রত্যেকদিন হলের প্রায় ৪০টি কুকুরকে নিয়ম করে খাবার খাওয়ান তিনি। হলের এই পরিচ্ছন্নতা কর্মী বিগত প্রায় ১৫ বছর ধরে করে যাচ্ছেন এমন প্রাণীসেবা। মমতা পেয়ে হালকা পাতলা গড়নের এই মানুষটিকেও যেন আপন করে নিয়েছে অবলা পশুগুলো।
জগন্নাথ হলের অন্য কর্মচারীরা প্রায় এক নামেই চেনেন সুদনচন্দ্রকে। তা সত্ত্বেও তাকে খুঁজে পেতে একটু বেগই পেতে হলো। কেননা, তিনি মোবাইল ব্যবহার করেন না। তার স্ত্রী ও ছেলের মোবাইলে যোগাযোগ করে তাকে পাওয়া গেলো। প্রথম সাক্ষাতেই চওড়া হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনেই আমারে খুঁজতাছিলেন?’
অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া সুদনচন্দ্র জগন্নাথ হলে কাজ করছেন প্রায় ৩০ বছর হলো। এর আগে কাজ করেছেন একটি অ্যালুমিনিয়ামের কারখানায়। লেখাপড়া খুব একটা করতে পারেননি। তবে ২০১৯ সালে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন তিনি।
কুকুরকে খাওয়ানোর ব্যাপারটি কেন মাথায় এসেছিল এমন প্রশ্নে-সুদন আওড়ালেন কবিতার লাইন, ‘হাশরের দিন... খোদা বলিবেন-হে আদম সন্তান/আমি চেয়েছিনু ক্ষুধায় অন্ন, তুমি কর নাই দান, মানুষ বলিবে-তুমি জগতের প্রভু/আমরা কেমনে খাওয়াব তোমারে, সে কাজ কি হয় কভু? বলিবেন খোদা-ক্ষুধিত বান্দা গিয়েছিল তব দ্বারে/মোর কাছে তুমি ফিরে পেতে তাহা যদি খাওয়াইতে তারে’। প্রাণীদের সেবা করেই সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি চান সুদন।
তিনি বলেন, আমরা ক্ষুধা লাগলেই খেতে পারি। কিন্তু এই প্রাণীগুলোর সেই সুযোগ নেই। হলের দোকানে কেউ কিছু দিলে খেলো, না দিলে না খেয়ে থাকে। এটা দেখে আমার মনে হয়েছিল, এই প্রাণীদের খাবারের ব্যবস্থা করা দরকার। তবে খুবই স্বল্প বেতনে নিজের সামর্থ্য নেই কুকুরগুলোকে খাওয়ানোর। হলের খাবারের উচ্ছিষ্ট দেন তাদের। বললেন, উচ্ছিষ্ট খুব ভালো খায় কুকুররা। তবে কেউ সাহায্য করলে তখন রান্না করা খাবার দিতে পারেন।
স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে জগন্নাথ হলের কর্মচারীদের কোয়ার্টারেই থাকেন সুদনচন্দ্র। পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসেবে পাওয়া স্বল্প বেতনে কোনো রকমে দিন চলে যাচ্ছে তার। তবে আক্ষেপ চাকরিটা যদি স্থায়ী হতো!
কথা শেষে যখন ওঠার পালা, সুদন বললেন, কুকুররা অনেক সময় ঝগড়া করে শরীর ক্ষত-বিক্ষত করে ফেলে। তখন নানান সংক্রামক রোগ দেখা দেয়। অনেক কুকুর মারাও যায়। তার স্বল্প সামর্থ্যে কুকুরদের গায়ে শুধু জীবাণুনাশক দিতে পারেন। এর আগে, কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নিয়মিত আসতো। এখন তারাও আসে না। যদি চিকিৎসার ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেওয়া যেতো, তাহলে কুকুরগুলো বেঁচে যেতো।
তবে বিদায়ের সময় আকুতি নিয়ে অনুরোধ করলেন, ‘আপনের পত্রিকায় এগো চিকিৎসার কথাডা ভালো কইরা লিইখেন কিন্তু’!
বিডি প্রতিদিন/এমআই