জন্ম থেকেই দুই হাত-দুই পা অকেজো জোবায়ের হোসেন উজ্জ্বলের। হাটা চলাও করতে পারে না। কথাও বলেন অস্পষ্টভাবে। বই পড়েন মুখে কাঠি জাতীয় কিছু দিয়ে পাতা উল্টিয়ে। লেখেনও মুখ দিয়ে। এভাবে প্রাথমিকের গণ্ডি পেরিয়ে উচ্চ বিদ্যালয়ে, উচ্চ বিদ্যালয় থেকে কলেজে। এইচএসসি পরীক্ষায় ফলাফলে জিপিএ ৪.৫৮ পেয়ে কৃতিত্বের সাথে উর্ত্তীণ হয়েছেন।
উজ্জলের স্বপ্ন কম্পিটার ইঞ্জিনিয়ার হবেন। সেই লক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেছে। শুক্রবার রংপুর টিচার্স ট্রেনিং কলেজে অটো রিকশাতে করে মায়ের সাথে পরীক্ষা দিতে আসেন উজ্জ্বল। এর আগে মুখ দিয়ে লিখে এসএসসি পরীক্ষায় ৪.৩৩ , জেএসসি পরীক্ষায় ৪.৪০, পিএসসি পরীক্ষায় ৪.২৫ পাওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করেন। দুইভাই এক বোনের মধ্যে দ্বিতীয় উজ্জল।
শুক্রবার সকালে অবেগ জড়িত কণ্ঠে আধো আধো বুলিতে উজ্জ্বল বলেন, তিনি কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হতে চান। ইঞ্জিনিয়ার হয়ে দেশের জন্য ভালো কিছু করতে চান। পরিবারের বোঝা না হয়ে, সরকারি চাকরি করে দেশ সেবা করতে চান।
উজ্জ্বলের মা উম্মে কুলসুম ছেলে সম্পর্কে জানান, উজ্জ্বল কম্পিউটারের টাইপিং, মেইল সেন্ড, ডাউনলোডসহ অনেক কিছুই জানেন। ক্লাসও করেছেন অনলাইনে। কম্পিউটারের মাধ্যমে তিনি বহির্বিশ্ব সম্পর্কে অনেক কিছুই জানে। উজ্জ্বল প্রাথমিক পাশ করেছে স্থানীয় দালালের চকি প্রাথমিক বিদ্যলয় থেকে। পরে শেরপুর দ্বিমুখি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করে। শারীরিক অক্ষমতার জন্য বিদ্যালয়ে যেতে পারতেন না। পরীক্ষার সময় বাবা তাকে স্কুলে নিয়ে যেত, সেখানে শুয়ে শুয়ে পরীক্ষা দিয়ে পাশ করে করেছে সে। করোনার কারণে স্কুল কলেজ বন্ধ থাকায় এইচএসসি পরীক্ষার ক্লাস করেছেন অনলাইনে। কখনো কখনো মোবাইল ফোনে আবার কখনো ল্যাপটপে লেখাপড়া করেছেন। যে ঘরে উজ্জ্বল থাকেন সেই ঘরটিই তার লেখাপড়া। বাসা থেকে দুই কিলোমিটার দূরে অটোরিকশায় শুয়ে সে পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়া-আসা করত। কেন্দ্রে বিছানায় শুয়ে সব পরীক্ষা দিয়েছে উজ্জ্বল। এইচএসসি পাশ করে এখন ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। তিনি সকলের দোয়া চান।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল