চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শাখা ছাত্রলীগের কমিটির কোন্দলে ভোগান্তিতে রয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সোমবার সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। ক্যাম্পাস থেকে কোনো বাস বের হতে পারেনি।
চট্টগ্রাম নিউ মার্কেট থেকে সাড়ে সাতটার শাটল ছেড়ে এলেও আটকে দেওয়া হয় ষোলশহর স্টেশনে। পাখাবিহীন শাটলের বগিতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে বাড়িতে ফিরতে বাধ্য হন শিক্ষার্থীরা। ছাত্রলীগ ইস্যুতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষা নিশ্চিত করতে পারেনি এই নিয়ে তিনদিন। ফলে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি হতে আসা শিক্ষার্থীদেরও। গতকাল থেকে শুরু হয়েছে প্রথম বর্ষের ভর্তি কার্যক্রম। এছাড়াও চলছিল কোটায় ভর্তিচ্ছুদের সাক্ষাৎকার। ক্যাম্পাসের অচলাবস্থায় তাদের বিড়ম্বনা বেড়ে গেছে বহুগুণে।
বগুড়া থেকে ভর্তি হতে আসা এক ভর্তিচ্ছু জানান, আমি শাটলে আসছিলাম, কিন্তু শাটল আটকে পড়ায় বাসে আসতে হয়েছে। আতঙ্কে আছি কখন কি হয়!
পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী জান্নাতুল নাবিলা বলেন, চবির মতো স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের এমন পরিস্থিতি ভবিষ্যতে আমাদের জন্য আরও নাজুক হয়ে উঠবে। করোনার কারণে আমরা এমনিতেই পিছিয়ে গেছি। এছাড়াও জাতিগতভাবেও আমরা পিছিয়ে পড়া। হঠাৎ করেই শাটল আটকে দিয়ে ক্যাম্পাস অবরোধ করে জাতীয় ক্ষতি করা হচ্ছে।
আন্দোলনকারীদের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রাকিবুল হাসান দিনার বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের দাবিগুলো জানিয়ে আসছিলাম অনেক দিন ধরে। আমাদের কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য না করতে অনুরোধ করেছি। কোনো লাভ হয়নি। পদবঞ্চিতদের আন্দোলনে সমর্থন রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ নষ্টের এই দায়ভার শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতাকেই নিতে হবে। আমরা অনির্দিষ্টকালের জন্য আন্দোলনের ডাক দিয়েছি।
প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া বলেন, সাংগঠনিক দাবি-দাওয়া বলতে হবে সংগঠনের কাছে। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কাজে বাধা দেওয়া ঠিক নয়। ছাত্রলীগের শিক্ষার্থীদের এটা বুঝতে হবে।
তবে চবি ছাত্রলীগের উপগ্রুপগুলোর কোন্দলে বিশ্ববিদ্যালয় অচল হওয়ার নজির এটাই প্রথম নয়। ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর ১ ও ২ আগস্টও এমন অচলাবস্থা ছিল চবি ক্যাম্পাসে। চলেনি কোনো বাস-শাটল ট্রেন, হয়নি ক্লাস-পরীক্ষাও। তবে এবার ভোগান্তি পোহাতে হলো নবীন শিক্ষার্থীদেরও। ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদকের প্রতি অনাস্থা প্রস্তাবকারী পদবঞ্চিত নেতাকর্মীদের দাবি কমিটি পুনর্গঠন করা। পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে অযোগ্য, অছাত্র এবং বিবাহিতদের স্থান দেওয়াসহ নানান অভিযোগ তাদের।
ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুসারে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটিতে মোট সদস্য হবেন ১৫১ জন। তবে গঠনতন্ত্র ভেঙে চার শতাধিক সদস্যের বিশাল কমিটি গঠন করা হলেও সন্তুষ্ট হননি নেতাকর্মীরা। কমিটি পুনর্গঠনের দাবিতে মানববন্ধন, বিক্ষোভসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে শাখা ছাত্রলীগের উপগ্রপগুলো। চবি ছাত্রলীগের এমন টালমাটাল অবস্থায় দীর্ঘ তিন যুগ পর হল-অনুষদগুলোর কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে সভাপতি-সম্পাদক।
১৫ সেপ্টেম্বর সংগঠনটির দপ্তর সম্পাদক এহছান আহমেদ প্রত্যয়ের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে আগ্রহী পদপ্রত্যাশীদের জীবনবৃত্তান্ত আহ্বান করা হয়েছে। এতে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সম্পাদকের কাছে জীবনবৃত্তান্ত জমা দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। এদিকে হল ও অনুষদ কমিটিকে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সম্পাদকের ‘মুলা ঝুলানো’ সিস্টেম ও তালবাহানা বলে দাবি করছেন নেতাকর্মীরা।
ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগকর্মী আছে কয়েক হাজার। যতোই চেষ্টা করি সবাইকে তো কমিটিতে সুযোগ দেওয়া সম্ভব নয়। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি যোগ্যতার ভিত্তিতে কমিটি দিতে। তবু অনেকে আন্দোলন করেছে পদের দাবিতে। তাই সবকিছু বিবেচনা করে এবং বাদপড়া যোগ্য ও ত্যাগীদের মূল্যায়ন করতে আমরা হল ফ্যাকাল্টি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
বিডি প্রতিদিন/এমআই