ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার ভবনের অব্যবস্থাপনা ও হয়রানির প্রতিবাদে ফুসে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী। অব্যবস্থাপনা ও হয়রানি বন্ধে মঙ্গলবার থেকে আমরণ অনশনে যাওয়া ঢাবি শিক্ষার্থী হাসনাত আব্দুল্লাহর শারীরিক অবস্থার ক্রমান্বয়ে অবনতি ঘটছে। একই দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও উপাচার্য কার্যালয়ের ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছে সাধারণ শিক্ষার্থী।
উল্লেখ্য, শিক্ষার্থীদের ভর্তি, সনদপত্র, নম্বরপত্র, বৃত্তি সংক্রান্তসহ বিভিন্ন কাজে আবশ্যিকভাবে প্রশাসনিক (রেজিস্টার) ভবনে আসতে হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে রেজিস্টার বিল্ডিংয়ে অব্যবস্থাপনা ও শিক্ষার্থীদের হয়রানির অভিযোগ উঠে আসছে। এসবের কোনো ঘটনাতে বিশ্ববিদ্যালয় কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলেই শিক্ষার্থীদের অভিযোগ।
এমন প্রেক্ষিতে, গত কয়েকদিন ধরে রেজিস্টার বিল্ডিংয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি ও স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান চালাচ্ছেন ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্সে অধ্যয়নরত হাসনাত আব্দুল্লাহ। মঙ্গলবার থেকে আট দফা দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করেছেন তিনি।
বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসনাত আব্দুল্লাহ'র শারীরিক অবস্থার ক্রমান্বয়ে অবনতি হচ্ছে। অনশনের কারণে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন হাসনাত। পুরো শরীরের মাসলগুলোতে টান ও ব্যথা অনুভব করছেন। জিহ্বা, গলা ও শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলো পানি স্বল্পতায় সঠিকভাবে কাজ করছে না বলে বেশ কিছু জটিলতাও দেখা দিচ্ছে। কয়েক ঘণ্টা পর পর অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছেন তিনি। এ সময় চিকিৎসক আনা হলে, চিকিৎসক হাসনাত আব্দুল্লাহকে যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি হাসপাতালে ভর্তির তাগিদ দেন। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত ভিসি হাসনাতের দাবি মেনে নেবেন না ততক্ষণ পর্যন্ত অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন হাসনাত।
এদিকে, হাসনাতের দাবি’র সাথে একাত্মতা জানিয়ে ক্যাম্পাসে মিছিল করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। এসময় তারা রেজিস্টার ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দৌরাত্ম্যের সুরাহার করার দাবি জানান। দুপুরের দিকে উপাচার্য কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েও বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন তারা। এসময় কার্যালয়ের কলাপসিবল গেট তালাবদ্ধ ছিলো।
হাসনাতের আট দফা দাবির মধ্যে আছে, শিক্ষার্থীদের হয়রানি নিরসন ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজের জবাবদিহিতা নিশ্চিতে অভিযোগ সেল গঠন; প্রশাসনিক সকল কার্যক্রম অনতিবিলম্বে ডিজিটাইজড করা; নিরাপত্তা ও হারিয়ে যাওয়া কাগজপত্র তদন্তের স্বার্থে অফিস সমূহের অভ্যন্তরে প্রতিটি রুমে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা স্থাপন; প্রশাসনিক ভবনে অফিস সমূহের প্রবেশদ্বারে সেবার বিভিন্ন তথ্য সংবলিত ডিজিটাল ডিসপ্লে স্থাপন করা; কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য স্বাস্থ্যকর ও সুন্দর কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত করা; কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ আইন করে বাধ্যতমূলক করা ও প্রয়োজনে মানসিক সেবা প্রদানকারী বিভাগ ও সেন্টারসমূহের শরণাপন্ন হওয়া; অফিস চলাকালীন প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ব্যক্তিগত, ব্যবসায়িক কিংবা রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নিষিদ্ধ করা এবং কর্মচারী ইউনিয়ন অফিস বাধ্যতামূলকভাবে তাদের ক্লাবসমূহে স্থানান্তর করা এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্বাচনকালীন প্রচারণা পরিবেশবান্ধব করা প্রভৃতি।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা