জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ছেলেদের আবাসিক হল শহীদ সালাম-বরকত হলে মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে এক শিক্ষার্থীকে রাতভর নির্যাতনের ঘটনায় শাখা ছাত্রলীগের আট নেতার নামে ঢাকার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হত্যাচেষ্টার মামলা করা হয়েছে।
এর আগে, গত ১৬ ও ১৭ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সালাম-বরকত হলের অতিথি কক্ষে মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সায়েম হাসান সামিকে রাতভর নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে শাখা ছাত্রলীগের ওই ৮ নেতার বিরুদ্ধে।
নির্যাতনের শিকার সায়েম হাসান বাদী হয়ে এ মামলা করেন। মামলার একটি কপি এই প্রতিনিধির হাতে এসেছে। মামলার কপি অনুসারে দণ্ডবিধি ১৪৩,৪৪৭,৩২৩,৩০৭,৩৩০,৩৪১,৩৪২,১১৪,৩৪,৫০৬ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মাবরুক আল ইসলাম জোয়াদকে প্রধান আসামি করে এই মামলা দায়ের করা হয়। জোয়াদ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- আইন ও বিচার বিভাগের ৪৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আকিব শাহরিয়ার সিজান, বাংলা বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের কর্মী আসিফ হোসাইন (আকাশ), একই ব্যাচের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের কার্যকরী সদস্য তানভীর হাসান রাব্বি, পরিসংখ্যান বিভাগের ৪৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাজ্জাদ কবির ও রাতুল রায় ধ্রুব, দর্শন বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি রিয়াজুল ইসলাম রিয়াদ, সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৪৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মহিবুর আলম মৃন্ময়।
মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআইকে (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) তদন্তের আদেশ দিয়েছেন আদালত। আগামী ১৪ আগস্টের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন সামির আইনজীবী নাইমুল ইসলাম চৌধুরী।
তিনি বলেন, 'ঢাকার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ এ মামলাটি করা হয়। পরবর্তীতে ঢাকার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৪ এ মামলাটি স্থানান্তর করা হয়। মামলার তদন্তসহ সামগ্রিক পরিচালনায় সহায়তা করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে মামলার একটি কপি পাঠানো হয়েছে।'
তবে এ ধরনের কোনো মামলার কপি পাননি বলে জানিয়েছেন প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান।
নির্যাতনের ঘটনায় ভুক্তভোগী সামি গত ২২ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগপত্রে বলা হয়, ১৬ মে কানে অস্ত্রোপচারের কারণে গেস্টরুমে না যাওয়ায় ভুক্তভোগী সামিকে মারধর করা হয়। পরদিন সামি হল ছেড়ে দিতে চাইলে আবারও গেস্টরুমে ডেকে নিয়ে তাকে রাতভর মারধর করেন অভিযুক্তরা। এসময়, অভিযুক্ত আকিব মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ধরেন। সামি নিজেকে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান পরিচয় দেওয়ায় অভিযুক্তরা ক্ষিপ্ত হয়ে পকেটে ইয়াবা ও আগ্নেয়াস্ত্র ঢুকিয়ে মুঠোফোনে ভিডিও ধারণ করেন।
এবিষয়ে জানতে চাইলে ভুক্তভোগী সায়েম হাসান সামি বলেন, আমাকে নির্যাতন করে ৬৩ ঘণ্টা নজরবন্দি করে রাখা হয়েছিল। রুমে আটকে রাখা হয়েছিল। জোর করে মিছিলে নিয়েছে। আমি ক্যাম্পাসে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমি এর উপযুক্ত বিচার চাই।
জানতে চাইলে মামলার প্রধান আসামি মাবরুর ইসলাম জোয়াদ বলেন, ‘মামলার বিষয়ে জানি না। আমি একটা প্রোগ্রামে আছি। আপনি রিয়াদ ভাইসহ আরও সিনিয়র যারা আছেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।'
আকিব শাহরিয়ার সিজান বলেন, 'আমি ব্যস্ত আছি। আপনার সঙ্গে কথা বলার এখন সময় নেই। আপনার কিছু জানার থাকলে আপনি আমার হলে আসেন।'
অন্য আসামিদের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা কেউ কল রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, আমি যতটুকু জেনেছি এটি একটি মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল