জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) কর্মরত এক সাংবাদিককে বেধড়ক মারধর করেছেন শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। রবিবার দিবাগত (২১ শে আগস্ট) রাত ২ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের মাঠে এই ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগীর নাম আসিফ আল মামুন। তিনি ইউএনবি'র জাবি প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত।
অন্যদিকে, অভিযুক্তদের সবাই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী আসিফ হলের দোকানে চা খাচ্ছিলেন। এসময় হলের গেস্টরুম থেকে কয়েকজন ছাত্রলীগের নেতাকর্মী হঠাৎ 'ওরে ধর ধর' বলে কাউকে ধাওয়া করে। তারা হল মাঠের দিকে এগিয়ে আসতে থাকলে ভুক্তভোগী সাংবাদিক সেখানে যান। এসময়, ধাওয়াকারীরা অন্ধকারে আসিফকে বেধড়ক মারধর ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। ভুক্তভোগী নিজেকে হলের শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পরও তাকে মারধর করা হয়। একপর্যায়ে তার শার্ট এবং জুতা ছিঁড়ে যায়। এসময়, তারা 'সাংবাদিককে মারতে পেরেছে' বলে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলার প্রতিবাদে মোমবাতি প্রজ্বলন কর্মসূচি শেষে হলে ৪৭ ব্যাচের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নেতৃত্বে ৪৮ এবং ৪৯ ব্যাচের 'গেস্টরুম' চলছিল। গেস্টরুম চলাকালীন 'বাইরে থেকে কেউ ভিডিও করছে' এমন সন্দেহে নেতাকর্মীরা একজনকে ধাওয়া করে। এসময়, তারা ঐ সন্দেহজনক ব্যক্তিকে 'ধর ধর' বলে ধাওয়া করায় হলের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ভুক্তভোগী আসিফ হল মাঠে নেমে এলে তাকে মারধর করে।
মূলত 'কোনো সাংবাদিক গেস্টরুমের ভিডিও করতে পারে' এমন সন্দেহে তাকে মারধর করা হয়েছে বলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শী ও হলের একাধিক নিরাপত্তা প্রহরী।
এদিকে হলের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ওইদিন রাত ২ টায় গেস্টরুম থেকে একদল ছাত্রলীগের নেতাকর্মী বের হয়ে একজনকে ধাওয়া করছে। অজ্ঞাত সেই ছেলে দৌড়ে হলের ভিতরে পালিয়ে যায়। এসময়, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দৌড়ে মাঠে গিয়ে জড়ো হয়। গেস্টরুম চলাকালীন বাইরে খেয়াল না রাখার জন্য সারোয়ার শাকিল (ইতিহাস ৪৭) হলের নিরাপত্তা প্রহরীদের গালিগালাজ করেছেন। ভিডিওতে গার্ডদের দিকে তেড়ে যেতে দেখা যায় তাকে। এসময়, সন্দেহভাজনকে না পেয়ে হল মাঠে সাংবাদিক আসিফকে পেয়ে তাকেই মারধর করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা মোহাম্মদ নাঈম হোসেন (বোটানি ৪৮), আমিনুর সুমন (বোটানি, ৪৮ ব্যাচ), হৃদয় রায় (নাটক ও নাট্যতত্ত্ব ৪৮), শাফায়েত হোসেন তোহা (বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি ৪৮), মেহেদী হাসানকে (ফাইন আর্টস ৪৭) শনাক্ত করে। এদের সাথে অজ্ঞাত আরো ৫-৭ জন সরাসরি মারধরে অংশ নিয়েছে বলে জানা গেছে।
মূলত, সারোয়ার শাকিল (ইতিহাস ৪৭), জাহিদ হাসান (প্রাণিবিদ্যা ৪৭), রিজওয়ান রাশেদ সোয়ান (নাটক ও নাট্যতত্ত্ব ৪৭), ফয়জুল ইসলাম নিরব (ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং ৪৭), সৌরভ পাল (জিওলজিক্যাল সায়েন্সেস ৪৭), মীর তাওহীদুল ইসলাম (পরিসংখ্যান ৪৭), আলী আক্কাস আকাশ (নাটক ও নাট্যতত্ত্ব ৪৭), মাহীদ (প্রত্নতত্ত্ব ৪৭) এবং সীমান্তের প্রত্যক্ষ মদদে মারধরের এ ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ আসিফের।
আকস্মিক এ ঘটনায় সাংবাদিক আসিফ আল মামুন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, 'ঘটনার সময় আমি হলের দোকানে চা খাচ্ছিলাম। এতো রাতে হট্টগোল শুনে মাঠে যাই। তারা এই সুযোগে আমাকে 'ধর ধর' বলে কিল, ঘুষি মারতে থাকে। মাথায় আঘাত করার চেষ্টা করলে আমি দুই হাত দিয়ে মাথাকে সেইফ করছিলাম। এখন হাতের আঙুল নাড়াতে পারছি না। পিঠে প্রচন্ড ব্যথা করছে।
তিনি আরও বলেন, 'আমি এই হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। মারধরে অভিযুক্তরা আমার জুনিয়র ব্যাচের হবে। সাংবাদিক পরিচয় দেয়ার পর তারা আরও বেশি মারধর করে। এমনকি আমি গেস্টরুমের আশেপাশে ছিলাম কিনা, ভিডিও করছিলাম কি না, এজন্য তারা প্রশ্ন করতে থাকে। জড়িতদের উপযুক্ত শাস্তি চাই।'
তবে মারধরের ঘটনাটি ভুল বোঝাবুঝি ছিল বলে জানিয়েছেন অভিযুক্তরা।
এবিষয়ে জানতে চাইলে জাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন বলেন, 'ঘটনাটি আমি শুনেছি, এধরনের ঘটনা কোনভাবেই কাম্য নয়। জড়িতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ওয়ার্ডেন ও ভারপ্রাপ্ত প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. এজহারুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, 'হলের ভিতরে যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে এর জন্য আমি খুবই মর্মাহত। এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষ দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
বিডি প্রতিদিন/হিমেল