জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) প্রধান ফটক এখন শিক্ষার্থীদের জন্য মরণফাঁদে পরিনত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মূল ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয় রাস্তায় চলাচল করা গণপরিবহনের সঙ্গে। এই ভোগান্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হওয়ার ১৯ বছরের শেষ হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের আশেপাশের সবগুলো সড়কে নিয়মিত লেগে থাকে অসংখ্য গাড়ির জটলা। রাস্তা পারাপারে প্রতিদিনই ঘটছে ছোট-বড় অসংখ্য দুর্ঘটনা। এসব আতঙ্ক নিয়ে প্রতিনিয়ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক পার হতে হয় প্রায় ১৯ হাজার শিক্ষার্থীকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়ক দিয়ে বয়ে গেছে রাজধানীর অন্যতম প্রবেশদ্বার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল। সেই সাথে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনে মিলিত হয়েছে পুরান ঢাকার অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। রাজধানীর গুলিস্তান, সদরঘাট, শ্যামবাজার, লক্ষ্মীবাজার, ইসলামপুর পাটুয়াটুলীসহ আরও অসংখ্য সড়ক মিলিত হয়েছে ক্যাম্পাসের মূল প্রবেশ পথে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত একমাত্র উন্মুক্ত স্থান (টিএসসি) হিসেবে পরিচিত খাবারের দোকানগুলো বড় ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে অধিকাংশ ক্ষেত্রে। ১৯ হাজার শিক্ষার্থীর সঙ্গে নিয়মিতভাবে মিলিত হয় আরও দুই-তিন হাজার পথচারীরা। সঙ্গে রয়েছে সদরঘাট অভিমুখী মানুষ ও অসংখ্য গাড়ির বেপরোয়া চলাচল। এসব সমস্যার কারণে ক্যাম্পাসের প্রধান প্রবেশদ্বারে সাধারণ শিক্ষার্থীদের এত ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরা।
সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, প্রধান ফটকে কোনো ধরনের গতিরোধক না থাকার কারণে বেপরোয়াভাবে যানবাহন চলাচল করে। এজন্য দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে এ রাস্তায় চলাচল করা শিক্ষার্থীদের। এখানে নেই কোনো ফুটওভার ব্রিজ বা কেনো বিকল্প ব্যবস্থ যাতে করে দুর্ঘটনা ঝুঁকি কমানো যায়। আবার এই রাস্তায় অধিকাংশ সময় জট থাকে। যানজটের অন্যতম কারণ হচ্ছে বাহাদুর শাহ পরিবহনসহ এই রুটের অবৈধ বাসগুলো।
এছাড়াও সদরঘাট অভিমুখী সিএনজি, রিক্সা, ভ্যান, মোটরসাইকেল এবং রাস্তার দুইপাশে অবৈধ ছোট-খাটো দোকানপাটগুলোর কারণে যানজট তীব্র আকার ধারণ করে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনে। যদিও এসব ঘটনা হরহামেশাই হচ্ছে রাস্তায় দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক পুলিশের সামনে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশের একমাত্র অপরিকল্পিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে জগন্নাথ। ছোট্ট পরিসরের এ ক্যাম্পাসে শুরু থেকেই অসংখ্য সমস্যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে প্রধান ফটকে রাস্তা পারাপারের ঝুঁকি। শিক্ষার্থীদের ভয়ভীতি নিয়ে প্রতিদিন ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে হয়। আমাদের মতো অন্য কোনো ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা এমন ভয়ভীতি নিয়ে রাস্তা পারাপার হয় কিনা আমার জানা নেই আদৌ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, আমি একজন মেয়ে এজন্য আমি রাস্তায় ছেলেদের মতো চাইলেও যাতায়াত করতে পারি না। ক্যাম্পাসের দুটা গেইট, আমাদের এমন কোনো গেইট নেই যার মাধ্যমে স্বস্তিতে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারব। এমন একটা পরিবেশে চলাচল করতে হয় ক্যাম্পাসের সামনে কখন যে দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হয় আমাদের এ নিয়ে শঙ্কিত আমার মতো বাকি সবাই।
এ শিক্ষার্থী আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বারবার বলার পরেও তারা এখনো এ নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। পদক্ষেপ নিবে যেদিন আমি কিংবা আপনি কেউ বড় ধরনের দুর্ঘটনার স্বীকার হবো তখন তাদের টনক নড়বে। আসলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় চাইলে সবকিছু পারে কিন্তু বেশিরভাগ লোকই এখানে ভেজা বিড়ালের মতো পড়ে থাকে।
এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মোস্তফা কামাল বলেন, আমরা ক্যাম্পাসের সামনে স্পিড ব্রেকার বসাবো শিগগিরই এবং ক্যাম্পাসের পাশে থাকা লেগুনা স্ট্যান্ডটি সরিয়ে ফেলার জন্য ইতোমধ্যে চিঠি দিয়েছি সিটি কর্পোরেশনকে। এছাড়াও লালবাগ জোনের ডিসির সাথে কথা বলেছি আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য তারা একটি ফুটওভার ব্রিজ করে দিবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
প্রক্টর আরও বলেন, ক্যাম্পাস এলাকা থেকে অবৈধ বাস স্ট্যান্ড অপসারণের জন্য ডিএমপি বরাবর চিঠি দেয়া হয়েছে, আশা করি শিগগিরই ব্যবস্থা নেবে তারা।
উল্লেখ্য, গত বছরে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনে সাভার পরিবহনের এক বাসের ধাক্কায় একজন নিহত এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মচারীসহ দুজন গুরুতর আহত হয়েছেন। এরপূর্বে বাহাদুর শাহ পরিবহনের বেপরোয়া গতির জন্য বিশ্ববিদ্যালয় দু'জন সহকারী প্রক্টরসহ চারজন আহত হয়েছেন।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল