জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের একজন অধ্যাপকের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ এনেছেন একই বিভাগের এক নারী শিক্ষক। অভিযুক্ত শিক্ষকের নাম আবু সাঈদ মো. মোস্তাফিজুর রহমান।
বিষয়টি আজ শনিবার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে নিশ্চিত করেছেন ভুক্তভোগী ওই শিক্ষিকা। তিনি কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। এ ঘটনায় ইতিমধ্যে বিভাগের সভাপতি বরাবর একটি লিখিত অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন তিনি।
এদিকে, ঘটনাটির সূত্রপাত গত ৯ মার্চ সিএসই বিভাগ কর্তৃক আয়োজিত ‘ন্যাশনাল কলেজিয়েট প্রোগ্রামিং কনটেস্ট (এনসিপিসি)-২০২৩’ এর দিন বলে জানা যায়। ওইদিন অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন ভুক্তভোগী ওই শিক্ষিকা। সঞ্চালনার সময় বেশ কয়েকজন অতিথির নাম ও পদবির ঘোষণা নিয়ে শিক্ষক ও অতিথিদের মধ্যে বিভ্রান্তির ঘটনা ঘটেছে। এতে আমন্ত্রিত অতিথি ও শিক্ষার্থীদের সমালোচনায় পড়তে হয় আয়োজকদের। যা নিয়ে ওইদিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে ওই শিক্ষিকার সঙ্গে অভিযুক্ত শিক্ষকের কথা কাটাকাটি হয় বলে জানা যায়।
তবে ঘটনাটি ‘আপত্তিকর’ ছিল বলে জানিয়েছেন বিভাগের একাধিক শিক্ষক। এ বিষয়ে আগামীকাল রবিবার সকালে একটি বিভাগীয় সভা অনুষ্ঠিত হওয়ারও কথা রয়েছে। এ ছাড়া, ঘটনাটি যদি বিভাগে সমাধান না হয় তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানান বিভাগের শিক্ষকরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযোগকারী শিক্ষিকা বলেন, ‘বিভাগের একজন অধ্যাপক আমার সাথে যে আচরণ করেছে সে বিষয়ে বিভাগের সভাপতি বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছি। যেহেতু এটা এখনো তদন্তাধীন রয়েছে তাই আমি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাচ্ছি না। তবে একটা বিষয় ক্লিয়ার করতে চাই সেটা হলো উনি আমার সাথে যে আচরণ করেছেন সেটা মূলত ‘অসদাচরণ’ ছিল। যা আমার জন্য অপমানজনক। এ ঘটনায় বিভাগ যথাযথ ব্যবস্থা নেবে বলে আমি আশা করছি।’
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক আবু সাঈদ মো. মোস্তাফিজুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আসলে ওই শিক্ষিকার সাথে কি রকম অসদাচরণ করেছি, আমি এখনো নিশ্চিত নই। অসদাচরণের কথা উল্লেখ করে বিভাগ থেকে আমাকে একটা চিঠিও দেওয়া হয়েছে। রবিবার এটা নিয়ে বিভাগীয় মিটিং রয়েছে। দেখি সেখানে কি নিয়ে আলোচনা হয়।’
ভুক্তভোগী শিক্ষিকার সাথে কখনো কোনো ধরনের অসদাচরণের ঘটনা ঘটেছে কিনা জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, ‘যতদূর মনে হচ্ছে সম্প্রতি আমাদের বিভাগ কর্তৃক একটি ‘ন্যাশনাল কলেজিয়েট প্রোগ্রামিং কনটেস্ট (এনসিপিসি)’ আয়োজন করা হয়েছিল। ওইদিন প্রোগ্রামের সঞ্চালক ছিলেন ওই শিক্ষিকা। সেদিন সঞ্চালনায় ও প্রোগ্রামের ব্যবস্থাপনায় কিছু ত্রুটি দেখা গিয়েছিল। যার কারণে পুরো অনুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আমাদের বেগ পেতে হয়েছে। এটা নিয়ে প্রোগ্রাম শেষে ডিনারে যাওয়ার পথে ওনার সাথে আমার কিছু কথা হয়েছিল। সেসময় কয়েকজন শিক্ষকের সামনে উনি আমাকে বললেন ‘স্যার, আজকে মঞ্চের আশপাশে-তো আপনাকে দেখলাম না’। তখন আমি ওনাকে বলেছিলাম যে ‘মঞ্চে কিভাবে দেখবা? তোমরাতো সে সুযোগ রাখো নাই। কারণ, এ এ জায়গাগুলোতে তুমি বারবার ভুল করতেছো। তুমি তো জুনিয়র না, একজন সিনিয়র শিক্ষক।’ এ জিনিগুলোই ওনাকে বলা হয়েছে। কিন্তু সত্যিকার অর্থে ওনার সাথে আমি কোনোরকম অসদাচরণ করি নাই। এটা করার কোনো সুযোগই নাই। হয়তো তখন কথা বলার সময় আমার কন্ঠস্বর একটু উঁচু ছিল। উনি একটা সময় আমার ছাত্রী ছিলেন, তাছাড়া কলিগ হিসবেও জুনিয়র। তবুও, এটাতে যদি উনি মনে করেন আমি অসদাচরণ করেছি, তাহলেতো কিছু বলার নেই।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মো. গোলাম মোয়াজ্জাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ঘটনার দিন কী হয়েছে তা আমি জানি না। তবে বিভাগের একজন শিক্ষিকা একজন অধ্যাপকের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ করেছেন। অভিযোগপত্রে যা লেখা আছে, তা অত্যন্ত সেনসেটিভ। সেগুলোর বিষয়ে আমি মন্তব্য করতে চাচ্ছি না। এ বিষয়ে কিভাবে সমাধান করা যায়, তা নিয়ে রবিবার সকালে একটি বিভাগীয় সভা অনুষ্ঠিত হবে।’
বিডি প্রতিদিন/এমআই
