চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার বলেন, ‘আমরা কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরকে শিক্ষার্থীবান্ধব করতে পারিনি। সকল শিক্ষকদের প্রতি সম্মান রেখে বলছি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও পুরোপুরি কাঙিক্ষত মাত্রায় শিক্ষার্থীবান্ধব হতে পারেনি। আমাদের গবেষণা ও পরিবহনের কাঙিক্ষত সেবা দেওয়া যাচ্ছে না। এগুলো এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৯ বছরের ব্যর্থতা। আমাদেরকে সময় দিলে আমরা এগুলো নিয়ে কাজ করবো। আমাদেরকে কাজের জন্য সময় দিয়ে পরে মূল্যায়ন করেন। কারণ, এই প্রশাসনের বয়স দুই মাসের বেশি হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে ৫৯ বছরে যা হয়নি আমরা দুইমাস কাজ করে অনলাইন ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করেছি। প্রতিটি আবাসিক হলে দখলদারিত্বের যে সংস্কৃতি ছিল সেটি থেকে বের হতে পরেছি। ক্যাম্পাস জুড়ে একটা উন্মুক্ত পরিবেশ তৈরি করেছি। দ্রুত সময়ে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে এনেছি। প্রশাসনের প্রতিটি পদ খালি ছিল। প্রক্টর, প্রভোস্টসহ একে একে প্রতিটি পদে নিয়োগ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে গতিশীলতা এনেছি।’
বর্ণাঢ্য আয়োজনে চবির ৫৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত হয়েছে। দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের মধ্যে ছিল আনন্দ শোভাযাত্রা, কেক কাটা, আলোচনা সভা ও স্মৃতিচারণ। আজ সোমবার সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্ট থেকে আনন্দ শোভাযাত্রা শুরু হয়ে শহীদ মিনার, লাইব্রেরি জারুল তলা প্রদিক্ষণ করে প্রশাসনিক ভবনের সামনে এসে শেষ হয়। পরে সকাল সাড়ে ১০টায় কেক কাটা হয়। এরপর সকাল ১১টা ১৫ মিনিট আলোচনা সভা ও স্মৃতিচারণ পর্ব শুরু হয়। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখ্তার।
এ সময় তিনি বলেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৯ বছর হলেও এখানে শিক্ষার্থীদের শতভাগ আবাসিক সুবিধা দেওয়া সম্ভব হয়নি। কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিকে আধুনিক ও মানসম্মত করা যায়নি। ক্যাম্পাসের মেডিক্যালকে শিক্ষার্থীরা নাপা মেডিকেল বলে, এখানে পুরোপুরি মেডিকেল সেবা দিতে পারছি না। আমরা শিক্ষার্থীদেরকে পুরোনো রোগ আত্মবিধ্বংসী রাজনীতির নামে লাশ ফেলা, দখলদারিত্ব, লেজুড়বৃত্তি ও চাঁদাবাজি রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আনতে পারিনি। আমরা এখনও ছাত্র অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি। কিন্তু দেশের প্রতিটি শিক্ষা বোর্ড শিক্ষার্থীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। বোর্ডের কোনো শিক্ষার্থী আশানুরূপ ফলাফল না করতে উত্তরপত্র পুনরায় মূল্যায়ন করতে পারে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী নিজের উত্তরপত্র পুনরায় মূল্যায়ন করতে পারে না। বিপ্লব পরবর্তী সময়ে দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে মব জাস্টিস হয়েছে। কিন্তু আমাদের শিক্ষার্থীরা ধৈর্য্যশীল। ক্যাম্পাসে কোনো মব জাস্টিসের ঘটনা ঘটে নি। এজন্য আমি শিক্ষার্থীদের সালাম জানাই।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চবি উপ-উপাচার্য (অ্যাকাডেমিক) অধ্যাপক ড. শামীম উদ্দিন খান বলেন, যে লক্ষ্য নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়েছিল, সেই লক্ষ্য গত ৫৯ বছরের বাস্তবায়ন হয়নি। আজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দিবসে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাক্সিক্ষত লক্ষ্য পূরণে আমরা নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করবো। আমরা মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার নিকট দাবি জানাচ্ছি, আপনি একসময় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। এখানে শিক্ষকতাও করেছেন। শিক্ষার্থীদের সুবিধার স্বার্থে আপনি শহর থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত স্বতন্ত্র সড়ক নির্মাণ করে দেন এবং অতিরিক্ত বাজেট দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে সম্পূর্ণ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে দেন।
চবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফের সঞ্চালনা আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন চবি উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন। এ ছাড়া বিভিন্ন অনুষদের ডিন, হল প্রভোস্ট এবং শিক্ষকবৃন্দ এতে বক্তব্য দেন।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল