রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) আন্তঃফুটবল টুর্নামেন্টে আইন ও মার্কেটিং বিভাগের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এতে আইন বিভাগের এক শিক্ষকসহ উভয় বিভাগের প্রায় ১০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। সোমবার বিকেল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, খেলাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনা খুবই নেক্কারজনক। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে এটা কাম্য নয়। উভয় বিভাগের সঙ্গে বসে শিগগিরই প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনের মাধ্যমে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তঃবিভাগ ফুটবল টুর্নামেন্টের রাউন্ড-১৬ পর্বের খেলা শেষে মার্কেটিং ও আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। স্লেজিং (একে অপরকে ভুয়া বলে সম্বোধন) করাকে কেন্দ্র করে এই সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। বিকেল ৫টার দিকে প্রথম দফায় শেখ কামাল স্টেডিয়ামের সামনে উভয়পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির এক পর্যায়ে ইটপাটকেল ছোড়াছুড়ি হয়। এতে আইন বিভাগের শিক্ষক মাহফুজুর রহমানসহ ৫-৬ জন শিক্ষার্থী আহত হন। তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এই ঘটনার প্রতিবাদে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা শহিদ হবিবুর মাঠে জড়ো হয়ে ক্যাম্পাসে লাঠি মিছিল করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভবনের সামনে অবস্থান নেন এবং রাস্তায় অগ্নিসংযোগ করে আন্দোলন করেন। এই ভবনের অপর পাশে আগে থেকে মার্কেটিংসহ ব্যবসা অনুষদের শিক্ষার্থীরা লাঠি-সোঁটা নিয়ে অবস্থান করছিলেন। উভয়পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে প্রায় ১ ঘণ্টা স্লেজিং করতে থাকে এবং এক পর্যায়ে ইটপাটকেল ছোড়াছুড়ি হয়।
এ সময় প্রক্টরিয়াল বডি, বিভাগের শিক্ষক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলেও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিছু হটে। তখন আইন বিভাগের কক্ষ ও ল্যাম্পপ্লেট ভেঙে ফেলা হয়। এ সময় ৩-৪ জন আহতের খবর পাওয়া গেছে। দ্বিতীয় দফায় সংঘর্ষের পর সেনাবাহিনীসহ উপাচার্য ঘটনাস্থলে অবস্থান নেন এবং মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থার আশ্বাস দেন। মার্কেটিং বিভাগের সভাপতির অনুরোধে শিক্ষার্থীরা হলে ফিরে যান।
এসময় মার্কেটিং বিভাগের সভাপতি ড. নুরুজ্জামানের অভিযোগ, খেলা শেষ করে বাহির হয়ে দেখি উভয়পক্ষ মারামারি করছে। আমি আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের জীবন দিয়ে বাঁচানোর চেষ্টা করি। কিন্তু আমার ঘাড়ে আঘাত করা হয় এবং গাড়িতে ভাঙচুর করা হয়। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। তারা যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন বলে প্রত্যাশা করি।
এ ব্যাপারে আইন বিভাগের সভাপতি ড. সায়েদা আঞ্জু বলেন, এ মুহূর্তে কথা বলতে পারছিনা। আমাদের আরও কয়েজন আহত হয়েছে। তাদের নিয়ে হাসপাতালে আছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের পরিচালক ডা. মাফরুহা সিদ্দিকী বলেন, প্রায় ১০ জনের মতো শিক্ষক ও শিক্ষার্থী আহত অবস্থায় চিকিৎসা নিয়েছেন।
এ দিকে সংঘর্ষের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জরুরি সভায় এই টুর্নামেন্ট স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক আখতার হোসেন বলেন, ফুটবল টুর্নামেন্ট আপাতত স্থগিত থাকছে। এছাড়া সংঘর্ষে জড়িত দুই বিভাগের ক্লাস-পরীক্ষা মঙ্গলবার বন্ধ থাকবে। উভয়পক্ষের সঙ্গে উপাচার্য সকালে পৃথকভাবে বসবেন।
অন্যদিকে খেলাকে কেন্দ্র করে শিক্ষকের উপর আক্রমণ ও সংঘর্ষের নিন্দা জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ্য শিক্ষকরা। তারা বলছেন, দেশের সর্বোচ্চপীঠে পড়ে যদি সহনশীলতা ও সম্প্রীতি বজায় না থাকে সেটা দুঃখজনক। বিগত সময়েও এমন ঘটনায় প্রক্টরের মাথা ফাটানোর ঘটনা ঘটেছিল। খেলা যদি সম্প্রীতি শিক্ষা না দেয় তাহলে সেই খেলার কোনো মানে হয় না।
ফিশারীজ বিভাগের অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, এমন নেক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। অবিলম্বে তদন্ত সাপেক্ষ অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল