ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আবাসিক হলে ফের র্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটেছে। র্যাগিং চলাকালে অভিযুক্ত পাঁচ শিক্ষার্থীকে ধরে থানায় পুলিশি হেফাজতে সোপর্দ করা হয়েছে। লালন শাহ হলের ৩৩০ নং কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।
মঙ্গলবার রাত ২ টার দিকে অভিযুক্তদের পুলিশ হেফাজতে দেওয়া হয়।
পুলিশ হেফাজতে থাকা শিক্ষার্থীরা হলেন, ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের সাব্বির হোসেন, শেহান শরীফ শেখ, লিমন হোসেন, কান্ত বড়ুয়া এবং ল’ এন্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের সঞ্জয় বড়ুয়া।
জানা যায়, গতকাল সোমবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে ভুক্তভোগীদের লালন শাহ হলের ৩৩০ নং রুমে ডাকেন অভিযুক্ত শেহান। ভুক্তভোগী সাইম, রাকিবুল, শামীম, রাকিব, হামজা, তারেক, রিশান, তানভীর এবং মামুনসহ ৩৩০ নং রুমে যায়। একপর্যায়ে চারজনকে রেখে (শামীম, সাইম, রাকিবুল, হামজা) বাকিদের অ্যাসাইনমেন্ট লেখা লাগবে বললে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর চারজনের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন অভিযুক্ত সাব্বির ও সঞ্জয়।
এসময় ভুক্তভোগীদের মধ্যে একজনকে পাঁচ রকম হাসি দিতে বলা হয়, আরেকজনকে কল দিয়ে বাজে ভাষায় কথা বলতে বলা হয় এবং আরেকজনকে নাচতে বলা হয়। এসময় হলের সিনিয়র শিক্ষার্থী হাসানুল বান্না উপস্থিত হয়ে তাদেরকে হাতেনাতে ধরেন এবং পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা অভিযুক্তদের থানায় পুলিশি হেফাজতে সোপর্দ করেন।
এর আগে গত ১৬ নভেম্বর রাত এগারোটার দিকে নবীন ব্যাচের বারোজন শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাসের পার্শ্ববর্তী সাদী এন্ড হাদী ছাত্রাবাসে ডাকেন অভিযুক্তরা। পরে তাদেরকে রাত আড়াইটা পর্যন্ত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। কয়েকজন শিক্ষার্থীকে পর্ণ সিনেমার তারকাদের নাম জিজ্ঞেস করা হয়। কাউকে পর্ণ তারকা সেজে অভিনয়ও করতে বলা হয়। এছাড়া তিনজনকে দিয়ে অশ্লীল কবিতা পাঠ করানো হয় এবং নানারকম হুমকিও দেয়া হয়। এসময় উপস্থিত অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা হলেন, ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শফিউল্লাহ, তরিকুল, মুকুল, সাব্বির, সাকিব, শেহান, কান্ত বড়ুয়া এবং জিহাদ।
হলের সিনিয়র শিক্ষার্থী হাসানুল বান্না বলেন, আমার কাছে অভিযোগ আসে, হলের ৩৩০ নং রুমে র্যাগিং চলছে। অত:পর আমি সেখানে গিয়ে দেখি, সাব্বির এবং সঞ্জয় দুজন মিলে ওদেরকে র্যাগ দিচ্ছে। ঘটনা জিজ্ঞেস করলে তারা অস্বীকার করে। পরে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের কয়েকজন বন্ধু ঘটনাস্থলে পৌঁছালে তখন ভুক্তভোগীরা র্যাগিং চলছিলো এটা নিশ্চিত করে। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতায় অভিযুক্তদের থানায় পুলিশী হেফাজতে সোপর্দ করা হয়।
অভিযুক্ত শরীফ শেহান বলেন, ‘আমি হলের কক্ষে ছিলাম না। পরে আমাকে ডাকা হয়। এসময় ভিতরে গিয়ে বান্না ভাইয়ের দেখতে পাই৷ এর আগে গতদিন মেসে জুনিয়রদের সাথে আমরা বসেছিলাম। ওদিন ভিসি, প্রক্টর স্যারের নামসহ, বিভাগের সকল শিক্ষকের নাম জিজ্ঞেস করা হয়। এসময় কেউ না পারলে তাকে একটু ধমকও দেওয়া হয়। তবে এসময় কারো মারধর বা শারীরিক নির্যাতন করা হয়নি। তবে বাকি অভিযোগগুলোর বিষয়ে কিছুটা সত্যতা রয়েছে বলেও জানান তিনি৷’
আরেক ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী রাকিব বলেন, ‘আমাদের উপর অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে। আমাকে মিয়া খলিফা আমার আরেক বন্ধুকে মিলে পর্ণ ভিডিও বানানোর অঙ্গভঙ্গি করতে বলা হয়। এছাড়া আরেক বন্ধুকে বান্ধবী ইম্প্রেস করতে বলে। তারা সমকামিতা প্রমোট করছে বলে মনে হয়েছে। আমরা তাদের শাস্তির দাবি জানাই।’
লালন শাহ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আকতার হোসেন বলেন, ‘অভিযুক্তদের থানায় নিরাপদে রাখা হয়েছে। পরবর্তীতে তদন্ত কমিটি গঠন করে সুষ্ঠু বিচারের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সুপারিশ করা হবে।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান বলেন, ‘বিষয়টি অবগত হয়েছি। প্রক্টরিয়াল বডি ও ছাত্র-উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বসেছি। বৈঠক শেষে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
ইবি থানার ওসি শেখ ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘পাঁচজনকে থানায় সোর্পদ করা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তাদেরকে থানায় পুলিশি হেফাজতে নিরাপদে রাখা হয়েছে। এখনও তাদেরকে বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমরা ব্যবস্থা নিব।’
বিডি প্রতিদিন/জামশেদ