জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ক্যাম্পাসে ব্যাটারিচালিত (অটো) রিকশার ধাক্কায় এক ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। নিহত ওই ছাত্রীর নাম আফসানা করিম রাচি। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ১ম বর্ষের (৫৩ ব্যাচ) শিক্ষার্থী। আফসানা করিম বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম খালেদা জিয়া হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। তার নিজ বাড়ি ময়মনসিংহ বিভাগের শেরপুর জেলায় অবস্থিত। তার পিতার নাম মো. রেজাউল করিম।
এই ঘটনায় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ-মিছিল করেছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে ক্যাম্পাসের শহীদ মিনার সংলগ্ন নতুন কলাভবনের সামনের রাস্তায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।
একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী ও আফসানার বিভাগের শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা যায়, ওইদিন সন্ধ্যার দিকে কলা ভবনের সামনের রাস্তার পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন আফসানা করিম। এসময়, হঠাৎ দ্রুতগামী একটি ব্যাটারি চালিত রিকশা তাকে ধাক্কা দিলে সড়কে ছিটকে পড়ে মাথায় ও মুখে গুরুতর জখম হন আফসানা। পরবর্তীতে তাকে উদ্ধার করে জাবির কেন্দ্রীয় মেডিকেল সেন্টারে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। পরে সেখানে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের প্রধান মেডিকেল অফিসার ডা. শামসুর রহমান বলেন, আফসানাকে গুরুতর আহত অবস্থায় আমাদের মেডিকেলে আনা হয়। তার অবস্থার অবনতি দেখে আমরা এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দিই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, আমি এ মুহূর্তে সাভারের এনাম মেডিকেলে আসছি। ডাক্তারের কাছ থেকে বিস্তারিত জেনে তারপর মৃত্যুর বিষয়টি বলতে পারবো।
তবে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে মার্কেটিং বিভাগের সভাপতি সহযোগী অধ্যাপক আরিফুল হক বলেন, আমরা তার মৃত্যুর বিষয়টি হাসপাতালে এসে নিশ্চিত হয়েছি। তার মৃত্যুর সময়সহ বিস্তারিত ব্যাপারে মেডিকেল রিপোর্ট হাতে পেলে জানাতে পারবো।
এদিকে, আফসানার মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত সাপেক্ষে জড়িত রিকশা চালকের শাস্তির পাশাপাশি ক্যাম্পাসের যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ, সড়ক উন্নয়ন ও সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে রাত পৌনে ৯টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
এর আগে, ২০২২ সালে সাংবাদিকতা বিভাগের ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী পূজা মজুমদার অটোরিকশা দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছিলেন। ওই দুর্ঘটনার পরও অটোরিকশা বন্ধের দাবি তুলেছিল শিক্ষার্থীরা। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সদিচ্ছার অভাবে তা আর বাস্তবায়িত হয়নি।
জানা গেছে, জাবির কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারী এই অটোরিকশা বাণিজ্যের সাথে জড়িত। যাদের নিজস্ব গ্যারেজ আছে এবং তারা একেকজন একাধিক রিকশা ক্যাম্পাসে ভাড়া দেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান বলেন, একজন শিক্ষার্থী যে মাত্র একমাস আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক স্বপ্ন নিয়ে এসেছে তার এই স্বপ্নের মৃত্যু খুবই দুঃখজনক। এরকমভাবে কারও মৃত্যুই কাম্য নয়। আমরা শোকাহত। নিহত শিক্ষার্থীর পরিবারের সাথে কথা হয়েছে। হাসপাতালে আমার সহকর্মী প্রো-ভিসি প্রশাসন গেছেন। একইসাথে অভিযুক্ত রিকশাচালককে শনাক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। এছাড়া, দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে যানবাহনের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সর্বোচ্চ কাজ করছি।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল