১৬ অক্টোবর, ২০২১ ১৬:০৩

সিলেটে তীব্র গরমে দিশেহারা মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট

সিলেটে তীব্র গরমে দিশেহারা মানুষ

প্রতীকী ছবি

সিলেটে তাপমাত্রার রেকর্ড ভেঙে সৃষ্টি হয়েছে নতুন রেকর্ড। তীব্র গরমে দিশেহারা হয়ে পড়েছে মানুষ।

আবহাওয়াবিদগণ বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবেই বদলে যাচ্ছে প্রকৃতি, বাড়ছে তাপমাত্রা। যা ভবিষ্যতে আরও বিপজ্জনক হয়ে ওঠতে পারে।

বাংলা দিনপুঞ্জি অনুসারে, আজ শনিবার শেষ হচ্ছে আশ্বিন মাস। আগামীকাল রবিবার থেকে শুরু হবে কার্তিক মাস। শরৎ ঋতু শেষে হেমন্তের শুরু হচ্ছে। বছর কয়েক আগেও শরতের মধ্যভাগ থেকে শীতের আগমনী বার্তা পাওয়া যেত সিলেট অঞ্চলে। কিন্তু পরিস্থিতি বদলে গেছে কয়েক বছর ধরে। এখন শরৎ তো দূরে থাক, হেমন্তেও শীতের শীতলতা অনুভব করা যায় কদাচিৎ!

আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে সিলেট অঞ্চলে যে গরম পড়ছে, তা গেল কয়েক যুগ ধরেও দেখা যায়নি। গত বৃহস্পতিবার সিলেটে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা ১৯৫৬ সালের পর, অর্থাৎ বিগত ৬৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ!

গত সোমবারও সিলেটে ৩৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল।

গেল ৮ থেকে ১২ অক্টোবরের তাপমাত্রা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এই সময়ে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি তাপমাত্রা ছিল সিলেটে। স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ দশমিক ৮ থেকে ৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল এই সময়ে।

গত ১১ অক্টোবর সিলেটে স্বাভাবিক তাপমাত্রা হওয়ার কথা ছিল ৩০ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু সেদিন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।
 
বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও চিকিৎসা বিষয়ক আন্তর্জাতিক জার্নাল সায়েন্স ডিরেক্ট ‘সার্ফেস আরবান হিট আইসল্যান্ড ইনটেনসিটি ইন ফাইভ মেজর সিটিস অব বাংলাদেশ: প্যাটার্নস, ড্রাইভার্স অ্যান্ড ট্রোন্ডস’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে গত ১৫ এপ্রিল। সেখানে বলা হয়, দুই দশক তথা ২০ বছরে সিলেটের গড় তাপমাত্রা ১ দশমিক ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেছে!

এই অসহনীয় গরমে সিলেট অঞ্চলের মানুষের নাভিশ্বাস ওঠেছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউই দিনের বেলায় ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না। যারাও বের হচ্ছেন, তাদের বেশিরভাগই ছাতা রাখছেন সাথে। অনেকের কাছে পানির বোতলও দেখা গেছে।

তবে সবচেয়ে সমস্যায় পড়েছেন খেটেখাওয়া মানুষেরা। দিনমজুর, রিকশাচালক, হকারদের বাধ্য হয়েই বাইরে বের হতে হচ্ছে। ফলে গরমে সবচেয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছে তাদেরই।

আবহাওয়া অফিস বলছে, এখন দিনের বেলায় তো অত্যধিক গরম আছেই, রাতের তাপমাত্রাও কমছে না। ফলে মানুষের মধ্যে অস্বস্তি বিরাজ করছে।

আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তারা বলছেন, অক্টোবরের মাঝামাঝিতে দক্ষিণ-পশ্চিমা মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশ অতিক্রমের সময় বৃষ্টি ঝরায়। কিন্তু এ বছর এ সময়ে বৃষ্টি প্রায় হয়ইনি। ফলে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ অনেক বেশি। যার কারণে গরমও বেশি।

এর বাইরে তাপমাত্রা বৃদ্ধির গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে আবহাওয়াবিদরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

তাদের মতে, নির্বিচারে গাছপালা কাটা হচ্ছে। কলকারখানা বাড়ছে। সাবাড় করে ফেলা হচ্ছে টিলা-পাহাড়। ফলে বৈষ্ণিক উষ্ণতা ক্রমেই বাড়ছে।

যেমনটি সিলেটভিউকে বলছিলেন সিলেট আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী, ‘সিলেটে অক্টোবরে এতো গরম এর আগে দেখা যায়নি। মূলত কয়েক বছর ধরেই অক্টোবরে তাপমাত্রা বাড়ছে।’

তিনি বলেন, ‘মানুষ নির্বিচারে গাছপালা কেটে ফেলছে, টিলা-পাহাড় সাবাড় করা হচ্ছে। হু হু করে বাড়ছে কলকারখানার সংখ্যা। বৃক্ষরোপণের সংখ্যা বাড়ছে না। সবমিলিয়ে জলবায়ুর ওপর যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে, তারই কুফল আমরা পেতে শুরু করেছি। এভাবে চলতে থাকলে সামনে আরও কঠিন সময় অপেক্ষা করছে।’

এই আবহাওয়াবিদ বলেন, ‘একসময় সিলেট অঞ্চলে প্রচুর পাহাড় ও টিলা ছিল। এখন তেমন নেই। এর নেতিবাচক প্রভাব অবশ্যই পড়ছে।’

আবহাওয়াবিদরা এখন থেকেই মানুষকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। তারা বলছেন, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া গাছপালা কাটা যাবে না, বন-জঙ্গল উজাড় করা যাবে না। বেশি করে গাছ লাগাতে হবে। কোনো অবস্থাতেই পাহাড় ও টিলা ধ্বংস করা চলবে না। প্রকৃতিকে তার মতো থাকতে দিলে প্রকৃতি মানুষের ক্ষতি করবে না।

বিডি প্রতিদিন/আরাফাত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর