৪ আগস্ট, ২০২২ ১৮:৩৯
প্রধান আসামি গ্রেফতার

ধর্মঘট প্রত্যাহার করে কাজে ফিরলেন ওসমানীর ইন্টার্নরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট

ধর্মঘট প্রত্যাহার করে কাজে ফিরলেন ওসমানীর ইন্টার্নরা

দিব্য সরকার

সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের উপর হামলা ও নারী ইন্টার্ন চিকিৎসককে শ্লীলতাহানীর মামলার প্রধান আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় ধর্মঘট প্রত্যাহার করে কাজে যোগ দেন ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। ক্লাসে ফিরেছেন মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরাও। তবে সকল আসামিকে গ্রেফতারে তারা প্রশাসনকে ৭ দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছেন। 

এর আগে গত বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে শাহপরাণ থানাধীন এলাকা থেকে মামলার প্রধান আসামি দিব্য সরকারকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সে নগরীর কাজলশাহ ৫২ নম্বর বাসার রমনীকান্ত সরকারের ছেলে ও মহানগর ছাত্রলীগের কর্মী। বৃহস্পতিবার তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। 

সিলেট মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ জানান, মামলা দায়েরের পর থেকে আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চালিয়ে আসছিল পুলিশ। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বুধবার দিবাগত রাতে মামলার প্রধান আসামি দিব্য সরকারকে গ্রেফতার করা হয়। বাকি আসামিদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। 

এদিকে, উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টায় সভা আহ্বান করে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতারের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে সভায় অংশ নেন সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোর্শেদ আহমদ চৌধুরী, সিলেট মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. ময়নুল হক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় এবং ওসমানী হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদ ও ওসমানী মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ স্বাস্থ্যবিভাগের বিভিন্ন পদস্থ কর্মকর্তা ও চিকিৎসকরা উপস্থিত ছিলেন। ওই সভা শেষে ইন্টার্ন চিকিৎসক ও মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহার করে কর্মস্থলে যোগ দেয়ার ঘোষণা দেন। 

আন্দোলনকারীদের পক্ষে ওসমানী মেডিকেলের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আহমেদ মুন্তাকিম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘মামলার প্রধান আসামি দিব্যকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। এর প্রেক্ষিতে সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ও হাসপাতালের পরিচালক মহোদয়ের অনুরোধে আমরা কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করেনি। তবে আমরা সকল আসামি গ্রেফতারে প্রশাসনকে ৭ দিনের সময় দিচ্ছি। এই সময়ের মধ্যে সকল আসামি গ্রেফতার না হলে আমরা আবারও কঠোর কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামবো। কারণ আমরা নিজেদের নিরাপত্তা না পেলে রোগীদের নিরাপত্তা দেব কিভাবে?’

গত রবিবার দুপুরে এক রোগীর দুই স্বজনের সাথে ইন্টার্ন চিকিৎসক ইমন আহমদের বাগবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে ওই দুই স্বজনকে পুলিশে সোর্পদ করা হয়। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বিষয়টি মীমাংসা হয়। এর জের ধরে পরদিন সোমবার রাত ৮টার দিকে ইন্টার্ন চিকিৎসক ইমন আহমদ ও ওসমানী মেডিকেল কলেজের ৩য় বর্ষের ছাত্র রুদ্র নাথের উপর হামলা চালায় কয়েকজন দুর্বৃত্ত। আহতাবস্থায় তাদেরকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে সোমবার রাত ১০টার দিকে ধর্মঘটের ডাক দেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। তারা জরুরি, হৃদরোগ ও বর্হিবিভাগ ছাড়া হাসপাতালের সকল বিভাগে সেবা বন্ধ করে দেন। তাদের সাথে যুক্ত হন মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারীরা মেডিকেল কলেজে স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, হামলাকারীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা, হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মেডিকেল প্রশাসনের মামলা করাসহ পাঁচ দাবি জানান।

ওসমানী মেডিকেল কলেজের দুই শিক্ষার্থীর ওপর হামলা ও নারী ইন্টার্ন চিকিৎসকের শ্লীলতাহনির অভিযোগে ৮ জনকে আসামি করে মঙ্গলবার দুপুরে কোতোয়ালি থানায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়। ওসমানী হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ হানিফ এবং ওসমানী মেডিকেল কলেজের পিএ-টু প্রিন্সিপাল ও সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মাহমুদুল রশিদ বাদী হয়ে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন। দুই মামলার আসামিরা হলেন- দিব্য, আব্দুল্লাহ, এহসান, মামুন, সাজন, সুজন, সামি ও সাঈদ হাসান রাব্বি। আসামিদের সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে জানা গেছে। তাদের মধ্যে নগরীর মুন্সিপাড়ার মৃত রানা আহমদের ছেলে সাঈদ হাসান রাব্বি ও কাজলশাহ এলাকার আব্দুল হান্নানের ছেলে এহসান আহমদকে সোমবার দিবাগত রাতে পুলিশ গ্রেফতার করে। রাব্বি সিলেট মহানগরীর ৩ নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। আর বুধবার রাতে দিব্যকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর