দেশে ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে পিয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে জেলা প্রশাসনের অভিযানের প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন পেঁয়াজের আড়তদাররা। এ সময় আড়তদাররা কোনো পিয়াজ বিক্রি করেননি। সোমবার বেলা ১১ টার দিকে আড়তদাররা দোকান বন্ধ রেখে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ শুরু করেন।
ব্যবসায়ীরা জানান, ভারতে দাম বাড়ায় খাতুনগঞ্জেও পিয়াজের দাম বেড়েছে। এতে তাদের কোনো হাত নেই। এই অবস্থায় জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত প্রতিদিন জরিমানা করছে। এভাবে যদি প্রতিদিন জরিমানা দিতে হয় তাহলে তারা ব্যবসা চালাতে পারবেন না।
ব্যবসায়ীরা দাবি করেন, আমদানিকারকদের ওপরই নির্ভরশীল হয়ে খাতুনগঞ্জে পিয়াজের ব্যবসা চলে। আড়তদাররা মূলত কমিশনে ব্যবসা করেন। তাই আমদানিকারকদের বিরুদ্ধে অভিযান না চালিয়ে শুধু খাতুনগঞ্জে অভিযান চালিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা জরিমানা করা অযৌক্তিক। অভিযান বন্ধের আশ্বাস না পাওয়া পর্যন্ত পিয়াজ বিক্রি বন্ধ রাখবেন বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
তবে অভিযোগ রয়েছে, গত বছর ঠিক এই সময়েই ভারত হঠাৎ করে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিলে দেশের বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে তখন লাগামহীনভাবে বেড়ে গিয়েছিল পিয়াজের দাম। কেজি প্রতি বেড়ে পিয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত। এরই মধ্যে গত ১৫ দিনে খাতুনগঞ্জে পিয়াজের দাম বেড়ে এখন দ্বিগুন হয়েছে। ১৮ টাকার পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৩ থেকে ৪৫ টাকায়। একটি অসাধু সিন্ডিকেট ভাঙতে রবিবার থেকে খাতুনগঞ্জের আড়তগুলোতে অভিযান শুরু করেন জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানে পিয়াজের দাম নিয়ে কারসাজির অভিযোগে ১০ আড়তদারকে জরিমানাও করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে আড়তদাররা পিয়াজ বিক্রি বন্ধ রাখেন।
এদিকে পিয়াজের দামে লাগাম টানতে পাইকারি বাজারের পর খুচরা বাজারেও অভিযান পরিচালনা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। আজ সোমবার দুপুরে নগরের আগ্রাবাদ চৌমুহনী বাজার এবং ২ নম্বর গেইটের কর্ণফুলী মার্কেটে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করেন। এতে নেতৃত্ব দেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শিরীন আক্তার এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. উমর ফারুক। অভিযানে বেশি দামে পিয়াজ বিক্রি ও মূল্য তালিকা না থাকায় জরিমানা করা হয়।
ম্যাজিস্ট্রেট মো. উমর ফারুক বলেন, সরেজমিনে খুচরা বাজারে দেখা যায়- কম দামে কেনা থাকলেও বাজারে পিয়াজের দাম বাড়তি বলে কিছু দোকানি কেজি প্রতি পিয়াজ ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশিতে বিক্রি করছেন। আমাদের দেখে অনেক দোকানি মূল্য তালিকায় দাম কমিয়ে ঘষা মাঝা করে লিখতে শুরু করেন। কিছু দোকানে মূল্য তালিকা রাখা হয়নি। তারা নিজেদের মতো করে ক্রেতাদের কাছ থেকে পিয়াজের দাম আদায় করছিলেন।
ম্যাজিস্ট্রেট শিরীন আক্তার বলেন, পাইকারি ও খুচরা বাজারে কেউ কারসাজি করে যাতে পিয়াজের দাম বেশি আদায় করতে না পারে- সে কারণে ডিসি স্যারের নির্দেশে বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। যদি পিয়াজের দাম আগের মতো কারসাজি করে বাড়ানো হয়- তাহলে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা