উপমহাদেশের অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র এবং বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজে ভেসে উঠেছে মৃত ডলফিন। আজ মঙ্গলবার সকালে হালদা নদীর শাখা খাল চানখালি খালে মৃত ডলফিনটি ভেসে উঠে। ডলফিনটির দৈর্ঘ্য প্রায় সাড়ে সাত ফুট এবং ওজন প্রায় ১২০ কেজি। তবে এটির শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২০ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ২৮টি ডলফিন মারা যায়।
জানা যায়, ডলফিনটি উদ্ধারের পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) হালদা রিসার্চ ল্যাবরেটরি, হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন, উন্নয়ন সংস্থা আইডিএফ এবং বন বিভাগ (প্রকৃতি ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ) যৌথভাবে ডলফিনটি প্রত্যক্ষ করে। তারা মনে করছেন, বয়সজনিত কারণে এটির স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। মৃত ডলফিনটি উদ্ধারের পর গবেষণা কাজের জন্য চবি হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরি ডলফিনটির কিছু নমুনা সংরক্ষণ করেছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) হালদা রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, ‘এমনিতেই ডলফিনের সংখ্যা কমছে। তার ওপর প্রায় সময় হালদা নদীতে মৃত ডলফিন ভেসে উঠছে। আজও একটি মৃত ডলফিন উদ্ধার করা হয়। এটি একটি চরম অশনি সংকেত। তবে উদ্ধারকৃত ডলফিনের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। তাই ধারণা করা হচ্ছে, বয়সজনিত কারণে এটির মৃত্যু হয়েছে।
জানা যায়, ২০১৮ সালে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, মৎস্য অধিদপ্তর, বন অধিদপ্তর, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউট, পরিবেশ অধিদপ্তর এবং চবি হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরি উনিশতম ডলফিনের পোস্টমর্টেম সম্পন্ন করে এবং ৬ দফা সুপারিশমালা প্রণয়ন করে।
সরকার ছয় দফা সুপারিশমালার শতভাগ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে ডলফিনের মৃত্যু সংখ্যা কমে আসে। চর্বি চুরি করার জন্য ২৩তম ডলফিনের হত্যার পর উচ্চ আদালত হালদা নদীর ডলফিন হত্যা রোধে একটি রিট পিটিশন হয়। বর্তমানে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে উচ্চ আদালত কর্তৃক গঠিত একটি কমিটি হালদা নদীর ডলফিন হত্যা রোধে মনিটরিংয়ের কাজ করছে।
প্রসঙ্গত, হালদা নদীতে যে ডলফিনের দেখা মেলে, তা গাঙ্গেয় ডলফিন প্রজাতির। ইংরেজিতে একে বলা হয় গেঞ্জেস রিভার ডলফিন, বৈজ্ঞানিক নাম ‘প্লাটানিস্টা গেনজেটিকা’। স্থানীয়ভাবে একে বলা হয় হুতুম বা শুশুক। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) গাঙ্গেয় ডলফিনকে বিপন্ন হিসেবে লাল তালিকায় রেখেছে।
২০১২ সালের বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিল-১ অনুসারে এই প্রজাতিটি সংরক্ষিত। এই প্রজাতির ডলফিন বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের নদীতে দেখা যায়। এর মধ্যে ভারতের গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র, বাংলাদেশের পদ্মা, সুন্দরবনের আশেপাশের নদী এবং চট্টগ্রামের হালদা ও কর্ণফুলী এর বিচরণ ক্ষেত্র। চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত হালদা নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ৮০ কিলোমিটার। হালদার সঙ্গে সংযুক্ত আছে ১৭টি খাল।
বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর