২১ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৯:৫৩
চবি এবং মা ও শিশু হাসপাতালের গবেষণা

নবজাতক, শিশু-তরুণদের মধ্যে আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে এন্টিবায়োটিকের অকার্যকারিতা

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

নবজাতক, শিশু-তরুণদের মধ্যে আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে এন্টিবায়োটিকের অকার্যকারিতা

প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রামে আশঙ্কাজনকহারে বেড়েছে এন্টিবায়োটিক রেজিসটেন্স (এন্টিবায়োটিক অকার্যকারিতা)। এন্টিবায়োটিকের অকার্যকারিতা সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে নবজাতক, শিশু ও তরুণদের মধ্যে। প্রতি চারজন নিউমোনিয়া আক্রান্ত পুরুষের মধ্যে তিনজনের শরীরেই মাল্টিড্রাগ রেজিসটেন্স তিন বা এর অধিক এন্টিবায়োটিক অকার্যকর দেখা গেছে। তবে হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীদের মধ্যে এ হার অনেক বেশি। এক হাজার রোগীর ৭০ শতাংশের মধ্যেই অন্তত তিনটি এন্টিবায়োটিক কার্যকারিতা হারিয়েছে।

চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে ২০১৮ থেকে ২০২০ সালের প্রথম দিক পর্যন্ত আসা এক হাজার নিউমোনিয়া রোগীর মধ্যে পরিচালিত হয় এ গবেষণা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের শিক্ষক ও গবেষক ড. আদনান মান্নান ও মাহবুব হাসান এবং চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. নাহিদ সুলতানা ও নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (এনআইসিইউ) পরিচালক ডা. ওয়াজির আহমেদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত গবেষণাটি প্রকাশিত হয় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক গবেষণা জার্নাল ‘প্লাস ওয়ান’ এ।

গবেষণাগারে কাজটি পরিচালনা করেন চবির গবেষক শিক্ষার্থী আফরোজা আকতার তন্বী। গবেষণায় সহযোগিতা করে চবির গবেষণা ও প্রকাশনা দপ্তর এবং ডিজিজ বায়োলজি অ্যান্ড মলিকুলার এপিডেমিওলজি রিসার্চ গ্রুপ চিটাগাং।

গবেষক দলের অন্যতম ডা. ওয়াজির আহমেদ বলেন, এন্টিবায়োটিক অকার্যকারিতা বর্তমান বিশ্বে একটি ভয়ঙ্কর এক স্বাস্থ্য সমস্যা। ব্যাকটেরিয়া তথা অণুজীবের বিরুদ্ধে এন্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা যত কমে যাবে, তত বেশি এসব জীবাণুর সংক্রমণ বেড়ে যাবে। চিকিৎসার উপায় বা প্রতিষেধক কমে যাবে। সংক্রমণ মারাত্মক আকার ধারণ করবে। 

তিনি বলেন, গবেষণায় চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালে ক্লেবসিয়েলা ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে সর্বাধিক ব্যবহৃত ২০টি এন্টিবায়োটিকের (সেফুরিক্সিম, সেফেক্সিম, এমোক্সিক্ল্যাভ, সেফেপিম, সেফটাজিডিম, সেফট্রায়াকজম, ক্লোরামফেনিকল, কোট্রিমক্সাজল, সিপ্রফ্লোক্সাজিন, জেন্টামাইসিন, ইমিপেনেম, মেরোপেনেম, নালিডিক্সিক এসিড, নাইট্রফুরানটিন, লেভোফ্লোক্সাজিন, এমিকাসিন) বিরুদ্ধে ব্যাকটেরিয়ার প্রতিরোধ ক্ষমতা পর্যবেক্ষণ করা হয়। এতে সেফুরিক্সিম, সেফিক্সিম, সেফটেক্সিম ও সেফটাজিডিম গোত্রের এন্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা সবচেয়ে কম পাওয়া গেছে।

গবেষণার প্রকল্প পরিচালক ড. আদনান মান্নান বলেন, ‘গবেষণায় পিসিআর, জিন সিকুয়েন্সিং ও বায়োইনফরমেটিক্স পদ্ধতির বিশ্লেষণের মাধ্যমে এন্টিবায়োটিক অকার্যকারিতার জন্য কোন কোন জিনগুলো দায়ি তা অনুসন্ধান করে দেখা হয়। নিউ দিল্লি মেটালোভাইরাস (এনডিএম-১) জিনটির উপস্থিতি সর্বাধিক হারে পরিলক্ষিত হয়। এই জিন ইতিপূর্বে ভারত, কানাডা, সুইডেন ও যুক্তরাষ্ট্রের রোগীদের জীবাণুর মাঝে পাওয়া যায়। এছাড়াও চট্টগ্রাম অঞ্চলে রোগীদের মাঝে এই জিনের গঠনে কিছু ভিন্নতা পরলক্ষিত হয়। হয়তো এজন্য জীবনযাপনের প্রকৃতি ও ভৌগলিক অবস্থান দায়ি।’  

গবেষণায় বলা হয়, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর হাসপাতাল থেকে বিপুল সংখ্যক রোগী এন্টিবায়োটিক অকার্যকর ব্যাকটেরিয়া ও জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হচ্ছে। হাসপাতালের বেসিন থেকে পানি, নালার পানি, বিছানার চাদর,  দেয়ালের বিভিন্ন নমুনাতে উক্ত এন্টিবায়টিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া যায়। এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য দায়ি এমন একাধিক জিন চিহ্নিত করা হয়।

অন্যদিকে, এন্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত কিংবা অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার শরীরে অণুজীবগুলোকে এন্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে টিকে থাকার ক্ষমতা তৈরি করে। পরবর্তী সময়ে এ এন্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া বা অণুজীবকে প্রতিরোধ করার ক্ষমতা হারায়। ফলে রোগে আক্রান্তদের জন্য আর কোনো প্রতিষেধক থাকে না। এছাড়াও একাধিক এন্টিবায়োটিকের অকার্যকারিতা রোগীকে তীব্র সংক্রমণের দিকে ধাবিত করে।

গবেষণার এক অংশে বলা হয়, ‘এন্টিবায়োটিক রেজিস্টান্ট ম্যাপিং’ বা এন্টিবায়োটিক কোন কোন অংশে বেশি অকার্যকর তা চিহ্নিত করা হয়। এতে দেখা যায় শহরাঞ্চলের আগ্রাবাদ, ডবলমুরিং, পাঁচলাইশ, হালিশহর, বায়েজিদ ও বাকলিয়া এলাকা এবং উপজেলায় সীতাকুন্ড, পটিয়া, হাটহাজারী ও চন্দনাইশ এলাকায় বেশি একাধিক এন্টিবায়োটিক অকার্যকর রোগী পাওয়া যায়। কারণ এসব এলাকায় ফার্মেসির সংখ্যা বেশি। ফার্মেসিগুলোতে অবাধ ও নিয়ন্ত্রণহীনভাবে এন্টিবায়োটিক বিক্রি হয়। 

প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামে বর্তমানে প্রায় ছয় হাজার ফার্মেসি আছে। এর মধ্যে অর্ধেক অনুমোদনহীন।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর