চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মর্গ। এখানে মর্গের সামনে ছোট ভাই আবদুর রহমানকে (৩১) খুঁজে বেড়াচ্ছেন বড় ভাই আলী নেওয়াজ। শনিবার রাত থেকে রবিবার দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করলেও খোঁজ মিলেনি আবদুর রহমানের।
আলী নেওয়াজ বলেন, আমার ভাই, আমার অনেক আদরের। সে আমার ছোট। তবুও সে আমার সব খেয়াল রাখতো। প্রতিদিন ফোন দিয়ে আমার খবর নিত। আমার সেই ভাই আজ কই। তার কোনো খোঁজ পাচ্ছিনা।’ তিনি বলেন, আমার ভাইটা মাত্র ৮ মাস আগে কন্যা সন্তানের বাবা হয়েছে। তার সে ছোট কন্যাকে আমরা কী জবাব দেব। কোথায় পাব আমার ভাইকে।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের ঘটনায় এখনও অনেক নিখোঁজ আছেন। এসব নিখোঁজদের খোঁজে স্বজনরা হাসপাতালের ওয়ার্ড থেকে ওয়ার্ড এবং মর্গে যাচ্ছেন। আজ বিকাল পর্যন্ত অন্তত ২৫ থেকে ৩০ জন নিজেদের স্বজনকে খুঁজছেন। কেউ ভাইকে, কেউ বাবাকে, কেউ নিকট আত্মীয়কে খুঁজছেন। অনেকে হাতে ছবি নিয়েও ঘুরছেন। অপেক্ষায় আছেন কখন স্বজনের দেখা মিলবে।
জানা যায়, মো. সাকিব (১৯) নামে একজন বিএম কন্টেইনারে কাভার্ডম্যানের সহকারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর সুবর্ণপুর উপজেলার চরবৈশাখী গ্রামে। এ ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর থেকেই তার খোঁজ মিলছে না। রবিবার ভোর ৬টায় সাকিবকে খুঁজতে চমেক হাসপাতালের ৩৬ নম্বর বার্ন ইউনিটে আসেন তার স্বজনরা। এ ওয়ার্ডে না পেয়ে তার খোঁজ করতে চলে যান হাসপাতালের ৩১ ও ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে।
নিখোঁজ সাকিবের মেঝো ভাই আব্দুল হান্নান বলেন, রাতে আগুনে লাগার পর থেকেই তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। সকাল পর্যন্ত তার মোবাইলে কল গেলেও, সকালের পর থেকে কল যাচ্ছে না। হাসপাতালে এসেছি ভাইয়ের খোঁজে। অন্যদিকে, মো. সোয়েব (২২) নামে একজন বিএম কনটেইনারে একটি ক্যান্টিনে কাজ করতেন। গতকাল রাত ১০টার পর থেকে তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। রাতে তার মোবাইলে কল গেলেও, কেউ ফোন ধরছেন না।
অন্যদিকে, শহীদুল ইসলাম নামে এক যুবক এই কন্টেইনার ডিপোর পিয়ন হিসেবে চাকরি শুরু করেন গত ১৮ দিন আগে। চট্টগ্রামের বাঁশখালীর চাম্বলে তার বাড়ি। সে আগামীবার এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। আজ পর্যন্ত তার কোনো খোঁজ মিলেনি। হাসপাতালে তার মা আয়েশা বলেন, আমার ছেলেকে পাওয়া যাচ্ছে না। আমার ছেলেকে এনে দেন। সে শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় কাজে গিয়েছিল। রাত সাড়ে ১০টায় এসে বাসায় রাতের খাবার খাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আর আসেনি। তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেলেও খুঁজেছে। না পেয়ে নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাকেও মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে।
এ ডিপোর আরেক অপারেটর তৌহিদুল হাসান। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। প্রসঙ্গত, গত শনিবার রাত ১১টায় চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার ভাটিয়ারীতে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর