টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যার সপ্তম দিনেও স্বাভাবিক হয়নি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলা। উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের মানুষ এখনো পানিবন্দী জীবনযাপন করছে। সাত দিনে বন্যায় এ পর্যন্ত মারা গেছে ১৬ জন। সাতকানিয়া উপজেলায় নিখোঁজ রয়েছে তিনজন। সাতকানিয়ার পাশাপাশি বন্যার কবলে পড়েছে লোহাগাড়া ও চন্দনাইশ উপজেলায়। এ তিন উপজেলায় বেশিরভাগ এলাকা বন্যা আক্রান্ত হয়েছে।
এদিকে বন্যায় ঘর-বাড়ি, ফসলি জমি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সবমিলিয়ে ১৩৫ কোটি ১৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিভাগ। পাশাপাশি দুশ্চিন্তায় রয়েছে প্লাবিত এলাকার এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, প্রায় উপজেলায় এখন আর পানিবন্দি কেউ নেই, তবে বিচ্ছিন্নভাবে কয়েকটি এলাকায় পানি এখনো আছে। এছাড়া বেশিরভাগ উপজেলা থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে আমরা পর্যাপ্ত ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছি।
সাতকানিয়া উপজেলার ইউএনও মিল্টন বিশ্বাস বলেন, উপজেলার মাদার্শ ইউনিয়ন ব্যতীত সকল ইউনিয়ন বন্যা কবলিত। এখন ধীরে ধীরে প্রায় এলাকায় পানি নেমে গেছে। তবে এখনো সাতটি ইউনিয়নে পানি রয়ে গেছে। ফলে সেখানকার মানুষ ছোট ছোট ডিঙি নৌকা দিয়ে যাতায়াত করছে। পানিবন্দী থাকা ইউনিয়নের মধ্যে কেওচিয়া, চরতি, আমিলাইশ, নলুয়া, ছদাহা, বাজালিয়া ও সাতকানিয়া সদর ইউনিয়ন। এসব এলাকায় সরকারিভাবে রান্না করা খাওয়ার দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি স্থানীয় চেয়ারম্যান ও নানা সংগঠন ত্রাণ দিচ্ছে।
সাতকানিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ মোতালেব বলেন, উপজেলার পানিবন্দী মানুষের মাঝে শুরু থেকে আমি স্বশরীরে গিয়ে ত্রাণ বিতরণ করে আসছি। পাশাপাশি দুর্যোগপূর্ণ এলাকার বাসিন্দারের নিয়মিত খোঁজ খবর রাখছি। এই পরিস্থিতিতে সবাইকে সচেতনভাবে কাজ করতে হবে। কোন ধরনের গুজবে কান না দিয়ে পানি না কমা পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে হবে।
এদিকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রাথমিক হিসাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১৩৫ কোটি ১৫ লাখ টাকার। আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত আছে মোট ১ হাজার ১৯৩টি। বুধবার থেকে পানি কমতে শুরু করায় বিভিন্ন এলাকায় নৌকা ডুবে ও স্রোতের টানে ডুবে নিখোঁজ হওয় অনেক নারী-পুরুষ ও শিশুর লাশ ভেসে উঠে। বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত বন্যায় ৩ উপজেলা ও মহানগরীতে মোট ১৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তারমধ্যে সাতকানিয়ায় ৭, লোহাগাড়ায় ৪, চন্দনাইশে ২, বাঁশখালীতে ১ ও রাউজানে ১ এবং নগরীতে ১ জন রয়েছেন। স্থানীয় প্রশাসন মৃত্যুর এই সংখ্যা নিশ্চিত করেছে।
শুক্রবার সকালে আনোয়ারা উপজেলার জুইদন্ডী এলাকায় খোকন নামে একজনের মরদেহ সাঙ্গু নদীতে ভেসে এসেছে। খোকন বন্যার সময় চন্দনাইশ থেকে নিখোঁজ ছিলেন, তার বাড়ি চন্দনাইশের ধোপাছড়িতে বলে নিশ্চিত করেছেন আনোয়ারা থানার ওসি সোহেল আহম্মেদ। বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে তিন দিন ধরে বিদ্যুৎহীন পুরো সাতকানিয়া, লোহাগাড়া ও চন্দনাইশের বিভিন্ন এলাকা। এতে বিশুদ্ধ পানির সংকটসহ নানামুখী সমস্যায় পড়েন সেখানকার বাসিন্দারা। তবে বুধবার রাত থেকে এসব এলাকার পানি নেমে যাওয়া সাপেক্ষে কোথাও কোথাও বিদ্যুৎ ফিরতে শুরু করেছে।
দুশ্চিন্তায় এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা : আগামী ১৭ আগস্ট থেকে শুরু হচ্ছে ২০২৩ সালের এইচএসসি পরীক্ষা। এবারের পরীক্ষায় চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অধীনে অংশ নিচ্ছেন লক্ষাধিক পরীক্ষার্থী। চট্টগ্রামের ১৪টি উপজেলা ও নগরীর এক লাখ ৪০ হাজার ১২টি পারিবারের ছয় লাখ ৩৫ হাজার ১৩০ জন লোক বন্যায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। ধসে পড়েছে শত শত ঘরবাড়ি। এ প্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা তাদের জীবন নিয়ে শঙ্কিত। বন্যার কারণে নগরের বিভিন্ন এলাকার পাশাপাশি সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, বোয়ালখালী, চন্দনাইশ, পটিয়া, আনোয়ারা, বাঁশখালী, হাটহাজারী, চকরিয়া উপজেলাসহ তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের অবস্থা এখনো নাজুক। বন্যায় ভেসে গেছে অনেকের ঘরবাড়ি, শিক্ষার্থীদের বইও। ক’দিন পর পরীক্ষায় কিভাবে বসবেন সে দুশ্চিন্তায় এ অঞ্চলের পরীক্ষার্থীরা।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল