রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ইংরেজী বিভাগের অধ্যাপক এএফএম রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস। এই অধ্যাপকের হত্যায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে রবিবার শোক মিছিল, মানবন্ধন, অবস্থান ধর্মঘট ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে ক্যাম্পাসে মৌন মিছিল ও সমাবেশ করেছে রাবি শিক্ষক সমিতি। বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে দিনব্যাপী পালিত হয়েছে নানা কর্মসূচি।
গতকাল শনিবার শিক্ষক রেজাউল করিম সিদ্দিকীর পুত্র রিয়াফাত ইমতিয়াজ সৌরভ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা দায়ের করেন। রবিবার এ মামলা ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়েছে। শনিবার রাতে নগরীতে অভিযান চালিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে একজনকে আটক করেছে মহানগর পুলিশ। আটককৃত ব্যক্তি রাবির লোক প্রশাসন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হাফিজুর রহমান। তিনি মহানগর ১৯ নং ওয়ার্ড শিবিরের সভাপতি। তার বাড়ি নগরীর শালবাগান সংলগ্ন ছোট বনগ্রাম এলাকায়। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক খন্দকার জাহিদুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, পূর্বঘোষণা অনুযায়ী রবিবার রাবিতে কোন বিভাগে ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে ক্যাম্পাসে। শান্তিপূর্ণভাবে ক্যাম্পাসে শিক্ষক হত্যাকা-ের প্রতিবাদে মিছিল-সমাবেশ করছে ইংরেজী বিভাগসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন।
রাবি শিক্ষক সমিতির মৌন মিছিল: রবিবার সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের সামনে থেকে মৌন মিছিল করে রাবি শিক্ষক সমিতি। মিছিলটি ক্যাম্পাস ঘুরে পুনরায় সেখানে এসে প্রতিবাদ সমাবেশে মিলিত হয়। রাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহ আজম শান্তনুর সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য দেন, রাবি শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা, বর্তমান সভাপতি ড. মো. শহীদুল্লাহ, ইংরেজী বিভাগের মো. জহুরুল ইসলাম প্রমুখ। এতে সংহতি প্রকাশ করেন রাবি উপাচার্য অধ্যাপক মুহম্মদ মিজানউদ্দিন। বিকেল ৫টায় রাজশাহী সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে মানববন্ধন করেছে শিক্ষক সমিতি।
ইংরেজী বিভাগের কর্মসূচি: রবিবার সকাল ১০টার দিকে শহীদুল্লাহ কলা ভবনের সামনে থেকে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা শোক-শিছিল বের করেন। মিছিলটি ক্যাম্পাসের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে গিয়ে ১০ মিনিটি অবস্থান ধর্মঘট পালন করে। এসময় সেখানে ইংরেজী বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক এএফএম মাসউদ আখতার, অধ্যাপক মো. শহীদুল্লাহ্, অধ্যাপক মো. জহুরুল ইসলামসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। এসময় বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক এ.এফ.এম মাসউদ আখতার বলেন,‘আমাদের দাবি খুব সংক্ষিপ্ত। আমরা এ হত্যাকা-ের দ্রুত বিচার চাই, দোষীদের শাস্তি চাই। তাই আমরা এ আন্দোলন চালিয়ে যাবো।’ এরপর দুপুর ১টায় সংবাদ সম্মেলন করে কর্মসূচি ঘোষণা দেয় ইংরেজী বিভাগ। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সোমবার তিনদিন বিভাগের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন, রবিবার থেকে সপ্তাহব্যাপী সকাল ১০টায় সিনেট ভবনের সামনে মানববন্ধন, সোমবার অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকীর সম্মানে শোকসভার আয়োজন করা হয়েছে।
প্রগতিশীল ছাত্রজোটের বিক্ষোভ: বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ক্যাম্পাসে টুকিটাকি চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের নেতাকর্মীরা। বিক্ষোভ মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে পূর্বের স্থানে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়। সমাবেশ থেকে দ্রুত শিক্ষক হত্যাকারীসহ দেশের ঘটে যাওয়া হত্যাকা-ে জড়িতদের বিচার দাবি করা হয়।
কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক জোটের মানববন্ধন: শিক্ষক হত্যায় জড়িতদের বিচার দাবিতে মানববন্ধন করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক জোট। কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে দুপুর ১২টার দিকে তারা এ কর্মসূচি পালন করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলের শোকসভা: বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেল মডেল স্কুল এবং বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি পালন করেছে। এরপর নিহতের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে শোকসভা এবং দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। সোমবার কালো ব্যাচ ধারণ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
শিক্ষক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রাবি উপাচার্য অধ্যাপক মুহম্মদ মিজানউদ্দিন ‘একের পর এক হত্যাকাণ্ডে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরাজ করছে আতঙ্ক। আর দুবৃর্ত্তরা এই ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করতে চায় আমাদের এ সমাজে। যে কোনো মুহূর্তে আমার মাথা কেটে নামিয়ে আনতে পারে সন্ত্রাসীরা। তাই বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের নিরাপত্তা স্বার্থে আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী এবং পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছি।
বিডি-প্রতিদিন/ ২৪ এপ্রিল, ২০১৬/ রশিদা