নানা অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মহিতোষ রায় টিটোর বিরুদ্ধে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকেই নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে কুখ্যাতি অর্জন করেছেন তিনি। সাংবাদিক নির্যাতন, শিক্ষক লাঞ্ছনা, রিকশাচালক ও ছাত্র নির্যাতন, ছাত্র হলে ছাত্রী নিয়ে রাত্রী যাপনসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত টিটো। এতসব ঘটনায় জড়িত এ নেতার বিরুদ্ধে কখনও ব্যবস্থা নেয়নি শাখা ছাত্রলীগ। এছাড়া নিরব থেকেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও। তাই ছাত্রলীগের এ নেতা বারবার অপরাধ করার প্রশ্রয় পেয়েছে বলে অভিযোগ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের।
সম্প্রতি গত বুধবার রাতে টিটোর পূর্ব পরিচিত গোলাম সরোয়ার নামে এক যুবক এক তরুণীকে কৌশলে অপহরণ করে ক্যাম্পাসে নিয়ে আসে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে ঢোকার সময় মেয়েটির চিৎকারে অনেকেই এগিয়ে আসে। পরে ব্যাপারটি জানাজানি হলে অপহরণকারী সরোয়ারকে বাঁচাতে নিজের কব্জায় নিতে চায় ছাত্রলীগ নেতা টিটো। এসময় সেখানে উপস্থিত বিডিনিউজের প্রতিনিধি শফিকুল ইসলাম তাতে বাধা দিলে ক্ষিপ্ত হয়ে দেশীয় ধারালো অস্ত্র, লোহার রড ও লাঠি দিয়ে শফিককে মারধর করে টিটো ও তার অনুসারীরা।
এর আগে ২০১৩ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ইতিহাস বিভাগের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রোভার স্কাউট সদস্য আফজাল জাহান ইমরান ও সাংবাদিক নাহিদুর রহমান হিমেলকে কুপিয়ে জখম করে টিটো ও তার অনুসারীরা। এ ঘটনায় তৎকালিন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাকে ১ বছরের বহিষ্কার করলেও পরবর্তীতে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও ঐ বিভাগের এক অধ্যাপকের সুপারিশে তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে প্রশাসন।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের আবাসিক হলে গভীর রাতে এক ছাত্রীর সঙ্গে রাত্রি যাপনের সময় হাতেনাতে ধরা পড়েন শাখা ছাত্রলীগের এই নেতা। ২০১৪ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি সোমবার গভীর রাতে মীর মোশারফ হোসেন হলে ১১০/বি নং কক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীসহ তাকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায়ও কোন ব্যবস্থা নেইনি শাখা ছাত্রলীগ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
গত ১১ মার্চ মীর মোশারফ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষকে লাঞ্চিত করার অভিযোগও রয়েছে টিটোর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় পরদিন ১২ মার্চ হল প্রশাসনের এক সভার সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানানো হলেও ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। নিরব ছিল শাখা ছাত্রলীগও।
ছাত্রলীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মহিতোষ রায় টিটো শহীদ রফিক জব্বার হলের আবাসিক ছাত্র হলেও অবৈধভাবে মীর মশাররফ হোসেন হলে অবস্থান করেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসে মাদক ব্যবসা, ফাও খাওয়া, ছিনতাই ও চাঁদাবাজির সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। প্রমাণিত এতসব অভিযোগের পরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শাখা ছাত্রলীগ তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেইনি। তবে সাম্প্রতিক ঘটনায় সাময়িক বহিস্কার করেই দায় সেরেছে শাখা ছাত্রলীগ। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখনও কোন কার্যকরি ব্যবস্থা নেয়নি।
এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষার্থীরা। বুধবারের ঘটনার পর অভিযুক্ত মহিতোষ রায় টিটো গা ঢাকা দিয়েছেন। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে চলছে নানা সমালোচনা।
এসব ব্যাপারে জানতে অভিযুক্ত মহিতোষ রায় টিটোর সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. আবুল হোসেন বলেন, তার বিরুদ্ধে আগের অভিযোগ সম্পর্কে আমরা অবগত। প্রক্টরিয়াল বডি এসব বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছে।
বিডি প্রতিদিন/১২ জুন ২০১৬/হিমেল-২১